Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- মানুষ এখন প্রযুক্তি নির্ভর। জীবনের গতিও বেড়েছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে একাকিত্ব। সবার সঙ্গে থেকেও একা—এই অনুভূতিটা কম বয়সিদের মধ্যে খুব কমন। যেখানে একটা টেক্সট করলেই কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে থাকা মানুষটার খবরাখবর নেওয়া যায় সেকেন্ডের মধ্যে, সেই ‘ফাস্ট ফরওয়ার্ড’ যুগে মানুষ একাকিত্বের শিকার। শুধু তা-ই নয়, কার্যত মহামারির রূপ নিচ্ছে একাকিত্ব। জনস্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি একাকিত্ব কেন বাড়ছে এবং একাকিত্ব কাটিয়ে কী ভাবে জীবনের মূল স্রোতে ফেরা যায়, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।
সবার সঙ্গে থেকেও একা, আবার একা থেকে মানসিক অবসাদে আক্রান্ত—এই সবই একাকিত্ব। কিন্তু একাকিত্ব শুধু মানসিক সমস্যা নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা (social isolation) একাকিত্বের অন্যতম কারণ। ভার্চুয়াল দুনিয়া বাস্তব জগতের থেকে একদম আলাদা। এই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে ‘কানেক্টেড’ হতে গিয়ে একা হয়ে পড়ছেন। নিজের মধ্যে কাজ করছে ‘FOMO’ (Fear of missing out), আর এগুলোই ধীরে ধীরে ঠেলে দিচ্ছে একাকিত্বের দিকে। প্রসঙ্গত, কোভিড পরবর্তী পৃথিবীতে ‘Loneliness’ শব্দটির সার্চ ২০২৩-এর জুন মাসে পৌঁছে গিয়েছিল শীর্ষে, Google Trends অন্তত তেমনটাই বলছে। ঘটনাচক্রে সে বছরই একাকিত্বকে ‘pressing health threat’ বলে উল্লেখ করে ‘হু’।
১৫ থেকে ৩০—এই বয়সি মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি অ্যাক্টিভ নিজের জীবনে ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। এরা কলেজে পড়াশোনা করে, চাকরি করতে অফিসে যায়। কারও কারও সংসার জীবনও রয়েছে। তবু একাকিত্ব কেন? সাইকোলজিক্যাল থেরাপিস্ট দেবস্মিতা সিনহা দাস বলেন, ‘প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে পিয়ার প্রেশার কাজ করে। আগে সোশ্যাল মিডিয়ার রমরমা ছিল না। তাই কেউ বিদেশে সুখের জীবন কাটালেও তা আপনি জানতে পারতেন না। কিন্তু এখন স্কুলের কোন বন্ধু কোথায় চাকরি করে, কোন বান্ধবী কোথায় থাকে, কে কোথায় বেড়াতে যায়, কে কার সঙ্গে ডেটে যায়, সব খবর রয়েছে স্মার্টফোনে। অনেক সময় আপনি যেটা পারছেন না, সেটা আপনার বন্ধু করে ফেলছে, অথচ আপনি তার থেকে বেশি পরিশ্রম করেন কিংবা দক্ষ। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মানুষের মনে বড় প্রভাব ফেলছে। মানুষ হীনমন্যতায় ভুগছে। এখান থেকে একাকিত্ব বাড়ছে।’
২৫ থেকে ৩৫, এটা এমন একটা বয়স যখন মানুষের মূল ফোকাসে থাকে তার কেরিয়ার। তার সঙ্গে কেউ কেউ সংসার জীবনও শুরু করে। এই বয়সের ব্যক্তিদের কিংবা ৩৫ ঊর্ধ্ব বয়সের মানুষের হাতেও খুব বেশি সময় থাকে না নিয়মিত বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে দেখা করার। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও অফিস থেকে ফিরে মানুষ চায়ের দোকানে, রকে বসে আড্ডা দিত। সেই আড্ডার কালচার এখন নেই বললেই চলে। অফিস থেকে ফেরার পথেও মানুষ ফোনে ব্যস্ত, আবার বাড়ি ফিরেও হাতে ফোন। কাজ না থাকলেও সারাক্ষণ রিলস দেখছে, ভ্লগ দেখছে। কিছু না কিছু ফোনে করতেই থাকছে। এখান থেকে একাকী (lonely) হয়ে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক বলে জানিয়েছেন দেবস্মিতা।
মানুষ সামাজিক জীব। অথচ, প্রযুক্তি নির্ভর হতে গিয়ে মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে অনেক, অনেক বেশি। এই সামাজিক যোগাযোগ কমে যাওয়ায় স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বাড়ছে, যার ফল হলো অত্যধিক মানসিক চাপ। এ ছাড়া ঘুমের প্যাটার্ন (শরীরের জৈবঘড়ির ছন্দপতন) নষ্ট হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দুর্বল হচ্ছে এবং শারীরিক প্রদাহ বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে, শরীর খারাপ থাকলে মুড খারাপ থাকাটাও খুব স্বাভাবিক। নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদন বলছে, মানুষের শরীর খারাপ থাকলে, ক্রনিক অসুখে ভুগলে মন-মেজাজও খারাপ থাকে। বিশেষত ডিপ্রেশন-অ্যাংজ়াইটি বাড়ে, আর এখান থেকেও বাড়তে থাকে একাকিত্ব। এই সমস্যা ৬০ ঊর্ধ্ব মানুষের খুব কমন। বয়স বাড়লে রোগও বাড়ে। কিন্তু বয়স বাড়লে যদি একাকিত্বও বাড়ে, সমস্যা সেখানেই জোরালো হয়।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক জয়রঞ্জন রাম বলেন, ‘আজকাল মানুষ বেশি দিন বাঁচছে। মানুষের আয়ু বেড়েছে। কিন্তু সুস্থ জীবনযাপন করাটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষত বয়স্কদের মধ্যে একাকিত্ব একটা বড় সমস্যা।’ ছেলে-মেয়ে বড় গিয়েছে, বিদেশে থাকে, বাড়িতে একদম একা। কিংবা ছেলেমেয়ে খুব বেশি সময় কাটায় না বুড়ো বাবা-মায়ের সঙ্গে—এগুলো বয়স্কদের মধ্যে একাকিত্বের খুব কমন ফ্যাক্টর। বিশেষত, রিটায়ারমেন্টের পর অনেক মানুষই একাকিত্বের শিকার হয়ে যান। এ ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকশনটা খুব বেশি কাজ করে না বলে জানিয়েছেন ডাঃ রাম। কিন্তু এই একাকিত্ব কাটাতে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার দিয়ে ঝুঁকছেন। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটাচ্ছেন, দাবি ডাঃ রামের।
একাকিত্বের পাশাপাশি যে সমস্যা নিয়ে আজ বিশ্বজুড়ে বহুল চর্চিত, তা হলো ডিমেনশিয়া। এই সমস্যা বৃদ্ধ বয়সেই সবচেয়ে বেশি মাথা চাড়া দেয়। নিউরোডিজেনারেটিভ বা স্নায়ুজনিত রোগ ডিমেনশিয়া, যেখানে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। এটা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঘটে। কিন্তু ডিমেনশিয়ার পিছনে যে একাকিত্ব লুকিয়ে থাকতে পারে, তা অনেকেরই অজানা। নবীন প্রজন্ম একাকিত্বে ভুগছে, আর এটা ‘কাল’ হয়ে দাঁড়াতে পারে আগামী দিনে।
এখানেও ধূমপান ও শরীরচর্চার অভাবের মতোই ‘খতরনাক’ একাকিত্ব। ডিমেনশিয়া এক ধরনের মানসিক ও স্নায়বিক রোগ। একাকিত্ব তারই ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’। দীর্ঘ সময় ধরে একাকিত্বের সঙ্গে ঘর করলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, একাকিত্বের জেরে দৈনিক কাজকর্ম করার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা দেয়। মস্তিষ্কে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয় না। একাকিত্ব যখন দীর্ঘ দিনের সঙ্গী, মস্তিষ্কে তার প্রভাবও হয় সুদূর প্রসারী। ফলত, মস্তিষ্কের কোষগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়। এই কারণেই চলাফেরা, খাবার খাওয়া, ঘুমের মতো অতিসাধারণ কাজগুলো করতে গেলেও বেগ পেতে হয়। ঠিকমতো করা যায় না রোজের কাজকর্ম। তবে, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ বিমানকান্তি রায় জানিয়েছেন, ডিপ্রেশনের সঙ্গে ডিমেনশিয়ার কোনও সরাসরি যোগসূত্র নেই। তিনি বলেন, ‘যিনি ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন, তিনি হয়তো মানসিক অবসাদে ছিলেন। কিন্তু ডিপ্রেশনে ছিলেন বলেই যে ডিমেনশিয়া হয়েছে, এমনটা নয়।’
বুড়ো বয়সে একাকিত্বের সঙ্গে যাপন করতে না চাইলে, এর শুরুটা একটু আগে থেকেই করা উচিত। একাকিত্ব এমন বড় বিষয়ও নয় যে, আপনি এটাকে এড়াতে পারবেন না। মানুষের সঙ্গে মানুষের কথা বলাই এ ক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান নয়। ৬০ ঊর্ধ্ব মানুষের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ককে ব্যস্ত রাখতে হবে। নিজেকে কাজের মধ্যে রাখতে হবে। ডাঃ রাম বলেন, ‘রিটায়ারমেন্ট বা অবসর নেওয়ার আগে থেকে নিজের মধ্যে কোনও অভ্যাস গড়ে তুলুন, যাতে বয়স বাড়লে সেটা নিয়ে থাকা যায়। বার্ধক্যে পৌঁছে যাতে মস্তিষ্ক সচল থাকে।’
মধ্যবয়সিদের মধ্যে একাকিত্ব খুবই কমন। জীবনে যা কিছু ঘটছে তা বলার যেমন মানুষ পাওয়া যায় না, তেমনই ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড থেকে কেউ কেউ বিরতিও নিতে চায় না। কেরিয়ারে উন্নতি করতে হবে, বাড়ি-গাড়ি করতে হবে—এমন নানা চিন্তাতেই কাটছে মধ্যবয়সিদের জীবন। বিপদ বাড়ছে সেখানেই। ডাঃ রাম বলেন, ‘মধ্যবয়সী ছেলেমেয়েরা অনেক বেশি কেরিয়ার নিয়ে, জীবনে কী ভাবে উন্নতি করা যায়, তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামায়। এখন সবাই ছুটছে। নিজের জন্য সময় নেই। সবাই ব্যস্ত নিজেকে নিয়ে। সেখানে প্রতিদিন তো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা, গল্প-আড্ডা হয় না। যতই বন্ধু একটা কল বা টেক্সটের দূরত্বে থাকুক, সামনাসামনি বসে কথা বলার মতো মানুষ নেই। সময়ও নেই বললে চলে। এর জেরেই বাড়ছে মধ্যবয়স্কদের মধ্যে একাকিত্ব। মানুষের সঙ্গে কথা বলা দরকার। ফোনে নয়। সামনাসামনি বসে।’
২৫ থেকে ৩৫ কিংবা ৪৫ এটা এমন একটা বয়সকাল, যেখানে মানুষ স্বপ্নপূরণের জন্য ছুটে বেড়ায়। কিন্তু দিনের শেষে যদি সে একা (পড়ুন Lonely) হয়ে যায়, তখন কী করা দরকার? জীবনের দৌড়ে অনেক মানুষই একা হয়ে পড়েন। সেই ‘একা’ যে একাকিত্ব, এটাই বুঝতে পারেন না অনেকে। মধ্যবয়সিদের মধ্যে একাকিত্ব কমানোর টিপস শেয়ার করেছেন সাইকোলজিকাল কাউন্সিলার দেবস্মিতা সিনহা দাস। তিনি বলেন, ‘প্রথমে একটা প্রায়োরিটি গোল সেট করতে হবে। আমি কী চাইছি, সেটা জানতে হবে। তার পর সব কিছু। দিনের শেষে বাড়িতে থাকা বয়স্ক বাবা-মা, পার্টনার সবাইকে সময় দেওয়া জরুরি। হতে পারে তারা আপনার সঙ্গে কথা বলতে না পেরে একাকিত্বে ভুগছে।’
একাকিত্ব শুধু যে বড়রা ভোগে, এমনটা কিন্তু ভুল ধারণা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব বলছে, বিশ্বের প্রায় ৫ থেকে ১৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে খুব কমন সমস্যা ‘লোনলিনেস’ বা একাকিত্ব। বাদ নেই ১০ বছরের কম শিশুরাও। ডাঃ রাম বলেন, ‘বাচ্চাদের মধ্যেও একাকিত্বে ভোগার সমস্যা খুব কমন। আজকাল বেশিরভাগ ‘নিউক্লিয়াল’ অর্থাৎ ৩ জনের পরিবার। বাবা-মা দু’জনেই চাকুরীজীবী। সন্তান না চাইতেও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাডিকটেড। আবার একটা কিশোরের দিনের ৬-৭ ঘণ্টা স্কুলে কেটে যায়। তার পর টিউশন। খুব বেশি হলে ২-৩ ঘণ্টা সময় পায়। সেখানে নিজের মনের কথা বলার সুযোগ কোথায়? এখান থেকেও বাড়ছে একাকিত্ব।’ শুধু কি বাবা-মা সময় দেয় না বলেই বাচ্চাদের মধ্যে ‘একাকী’ (lonely) হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে? এটা এমন একটা বয়সকাল, যখন বাচ্চারা শারীরিক ও মানসিক ভাবে বেড়ে উঠছে। তাদের জগতটা স্কুল ও বাড়িকে কেন্দ্র করে হতেই পারে। কিন্তু এই দুই জায়গা যেন তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, সেটাই দেখার বিষয়।
চাইল্ড সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ সিদ্ধার্থ নন্দী বাচ্চাদের একাকিত্বে ভোগার পিছনে কী-কী কারণ দায়ী, তা ব্যাখ্যা করেন। মা-বাবা দু’জনেই কর্মরত কিংবা যদি সিঙ্গল মাদার বা ফাদার হন, এ ক্ষেত্রে বাচ্চাকে সময় দিতে পারেন না কেউই। বাচ্চাও নিজের মনের কথা বলতে পারে না। এখান থেকে একাকিত্ব বাড়ে। এই সমস্যা বাচ্চা থেকে কিশোর-কিশোরী সকলের মধ্যেই দেখা যায়। ডাঃ নন্দী বলেন, ‘বাচ্চাদের মধ্যে একাকিত্বের আরেকটি বড় কারণ হলো স্কুল। অনেক সময় দেখা যায়, স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই। কিংবা বন্ধুই নেই। স্কুলে কেউ বাচ্চাটির সঙ্গে কথা বলছে না, খেলছে না। সেখান থেকেও একটা মন খারাপ, একাকিত্ব কাজ করে। আবার অনেক সময় টিচার্সরাও বাচ্চাটিকে কোনও অ্যাক্টিভিটিতে যোগ করছেন না।এটা কিন্তু বাচ্চাদের মনে একটা বড় প্রভাব ফেলে।’
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে একাকিত্বের জেরে আত্মহত্যার ঘটনা কিন্তু খুব কমন বলে জানিয়েছেন ডাঃ নন্দী। তবে আত্মহননের পিছনে যে একাকিত্বই দায়ী, সেটা অনেক সময় বোঝা যায় না। ব্রেকআপের পর অনেক বাচ্চা এতটাই ভেঙে পড়ে, জীবনবিমুখ হয়ে যায় যে, তারা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। আবার অনেক সময় পড়াশোনা ঠিকমতো করতে না পারার জন্য, পরীক্ষায় ফল ভালো না হওয়ায় সে নিজেকে সব কিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। অপমানের ভয় কাজ করে। তখন বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
১০ বছরের কম বয়স হোক বা বেশি, কোনও ভাবেই বাচ্চাকে ‘একা’ (পড়ুন lonely) হতে দেওয়া যাবে না। এর জন্য কী করবেন? ডাঃ নন্দীর পরামর্শ, ‘বাচ্চাদের মধ্যে একাকিত্ব দূর করতে হলে, তাদের সঙ্গে মিশতে হবে। বাবা-মাকে বাচ্চার সঙ্গে সময় কাটাতেই হবে। কিশোর-কিশোরীরা অনেকেই মোবাইল অ্যাডিকটেড। সেটা কমাতে হবে। ছোট বয়সে কখনওই হাতে ফোন দেওয়া যাবে না। ফোন ব্যবহার করলেও নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে হবে। বাচ্চা কেন চুপচাপ হয়ে আছে, কেন কোনও কাজে আগ্রহ দেখাচ্ছে না, এগুলোর দিকে বাবা-মাকেই নজর দিতে হবে। স্কুলের বাইরে অন্য খেলাধুলোয় বাচ্চাকে ভর্তি করে দিন। সেখানে দু’টো নতুন বন্ধু হবে, মনও ভালো থাকবে।’ বয়স কম হোক বা বেশি, একাকিত্ব দূর করতে হলে মানুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত। একাকিত্বের জেরে বাড়ে অবসাদ। সেখান থেকে তৈরি হয় আত্মহননের প্রবণতা। সুতরাং, কথা না বলা ছাড়া, মস্তিষ্ককে কাজের মধ্যে ব্যস্ত বা সচল না রাখা ছাড়া কোনও গতি নেই।
প্রযুক্তি নির্ভর হতে গিয়ে একাকিত্ব—এটা নিয়ে বারবার আলোচনা হয়। একাকিত্বের আরেকটা দিক রয়েছে, যা নাম ‘ডিজিটাল লোনলিনেস’। সোশ্যাল মিডিয়াকে কেন্দ্র করে যে সব সমস্যা বাস্তব জীবনে উঠে আসছে, তার মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল লোনলিনেস। ইমোশনাল লোনলিনেস এড়াতে অনলাইনে সোশ্যালাইজ় করতে ব্যস্ত মানুষ। কিন্তু ফলস্বরূপ সোশ্যাল মিডিয়াতেও তারা একা। সারা দিন ধরে নিউজ় ফিড স্ক্রোল করছে, লাইক-শেয়ার করছে কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় চ্যাট করার মানুষ নেই। দেখতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়ায় থেকেও ‘আইসোলেটেড’ বা বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এতে কিন্তু ভার্চুয়াল দুনিয়ায় কোনও প্রভাব পড়ছে না, বরং এর প্রভাবও বাস্তব জীবনে পড়ছে।
একাকিত্ব থেকে বেরোতে গেলে ‘acceptance’ ভীষণ জরুরি। অর্থাৎ, আপনি যে একাকিত্বে ভুগছেন, এটা স্বীকার করা জরুরি। নিজের অনুভূতি (feelings) ব্যক্ত করতে হবে, সে ভালো হোক বা মন্দ। ক্রনিক অসুখের জেরে যদি ডিপ্রেশন বাড়ে, সে ক্ষেত্রেও জরুরি মনের যত্ন নেওয়া। তা ছাড়া ‘হ্যাপি হরমোন’-এর (যে হরমোন স্টিমুলেশনের মাধ্যমে মেজাজ উন্নত করে বা মন ভালো রাখে) মাত্রা বাড়াতে হবে। মানসিক চাপ কমানোর এটাও একটা উপায়। এ ছাড়া লাইফস্টাইলও নির্ভর করছে মানসিক চাপ, অবসাদ কমানোর পিছনে। কিন্তু ‘ডিজিটাল ডিটক্স’-এর কথা ভুলে গেলেও সোশ্যাল আইসোলেশন ও একাকিত্বকে এড়ানো যাবে না।
‘ডিজিটালাইজ়েশন’-এর ফলে হাজার রকমের কাজ একটা ক্লিকেই হয়ে যায়। জীবনের গতিও বাড়ে। মানুষ আবার বাস্তব দুনিয়া থেকেও আলাদা হয়ে যায়। এই কারণেই ‘ডিজিটাল ডিটক্স’-এর গুরুত্ব বাড়ছে। ‘ডিটক্সিফিকেশন’ হলো জমে থাকা টক্সিক বা দূষিত পদার্থ ঝেড়ে ফেলে দেওয়া। সোশ্যাল মিডিয়া ও ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষেত্রে ছোট ছোট ব্রেক বা বিরতি নেওয়াই হলো ‘ডিজিটাল ডিটক্স’। সোশ্যাল মিডিয়ার পাশাপাশি ওয়েব সার্চও কমিয়ে দেওয়া বা একেবারে বন্ধ করে দেওয়াই ‘ডিজিটাল ডিটক্স’-এর কাজ। ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ শুধু যে স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দেয়, তা নয়। মানুষের মধ্যে পিয়ার প্রেশার কম কাজ করে, FOMO থাকে না এবং মানসিক চাপ কমে। ডিজিটাল জগত থেকে বেরিয়ে বাস্তব জীবনে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বাড়ে। একাকিত্ব থেকে গেলে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ জরুরি।
আরও পড়ুন:- লিভারের অসুখের ঝুঁকি কমাতে এই অভ্যাসগুলি থেকে দূরে থাকতে হবে