Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চাকরিহারা গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি কর্মচারীদের রাজ্যের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে উষ্মা প্রকাশ কলকাতা হাইকোর্টের । বিচারপতি অমৃতা সিনহার পর্যবেক্ষণ, “এ তো কার্যত বসে বসে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য !” মামলার শুনানি শেষে এদিন রায়দান স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা ।
এই মামলার শুনানিতে এদিন বিচারপতি অমৃতা সিনহার প্রশ্নবাণে কার্যত বিদ্ধ হতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে । বিচারপতি রাজ্যের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, “25 হাজার আর 20 হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য, এই টাকার পরিমাণ কীভাবে ঠিক করা হল ?” বিচারপতির আরও প্রশ্ন, “অতীতেও এরকম ঘটনা ঘটেছে । তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু করা হয়নি তো ! এঁদের বেতনের বিনিময়ে কী ফেরত পাওয়া যাবে ? এঁরা কি বাড়িতে বসে বসেই টাকা পাবেন ?”
জবাবে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, “এটা সাম্মানিক হিসাবে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । হঠাৎ করে তাঁদের জীবনযাপন যাতে থেমে না-যায় তার জন্য এই ভাতা ।” বিচারপতি তখন জানতে চান, “কতদিন ধরে এই টাকা দেওয়া হবে ?” জবাবে এজি বলেন, “আদালতের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন যতদিন না-নিস্পত্তি হচ্ছে ।”
এদিনের শুনানিতে রাজ্যের তরফে অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত বলেন, “কারা হাইকোর্টে আবেদন করেছেন সেটা একবার দেখুন । যাঁরা ওয়েটিং লিস্টে ছিলেন, তাঁরাই এই মামলা করেছেন । এটা কোনও জনস্বার্থ মামলা নয় । এখানে ওয়েটিং লিস্টের প্রার্থীদের আইনসঙ্গত কোনও অধিকার নেই মামলা করার ।”
তিনি আরও বলেন, “প্রথমত, রাজ্যের এই স্কিম নিয়ে ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীরা অভিযোগ করতে পারেন না । দ্বিতীয়ত, যাঁরা এই স্কিমের সুবিধা পাচ্ছেন, তাঁদের কারওকে এই মামলায় পার্টি বা পক্ষ করা হয়নি । তৃতীয়ত, 2016 সালের পুরো বিষয়টিই সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ।”
আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “এই স্কিম যাঁরা দুর্নীতি করে চাকরি পেয়েছে তাঁদেরকে সুবিধা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে । রাজ্য এটা করতে পারে না । এটা সরাসরি সংবিধানের অবমাননা । সুপ্রিম কোর্টের নামে যা খুশি করা যায় না । জনগণের টাকা দুর্নীতির ফান্ডে দেওয়া যায় না ।” এ প্রসঙ্গে এজির-র জবাব, “যে বিষয় সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে, সেটাতে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় ।” তখনই বিচারপতি সিনহা বলেন, “কিন্তু এতো কার্যত বসে বসে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে !”
এদিন মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট বেআইনি নিয়োগের জন্য যাঁদের চাকরি বাতিল করেছে, তাঁদের এই ভাবে টাকা পাইয়ে দেওয়া যায় না । কারণ সংবিধানে স্পষ্ট করে দেওয়া আছে, সুপ্রিম কোর্টের কোনও নির্দেশ থাকলে তাকে মান্যতা দিতে হবে । কিন্তু এই ক্ষেত্রে 3 এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া 26 হাজার চাকরি খারিজের নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়েছে শীর্ষ আদালতে । আর তারপরেই গ্রুপ সি ও ডি চাকরিহারা কর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর নামে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে । সরকারি টাকা দেওয়ার সুযোগ সংবিধানে আছে । কিন্তু সেটা সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর চাকরি খারিজ হওয়াদের জন্য কার্যকর নয় । দুর্নীতি করবে, আবার বসে বসে ভাতা পাওয়া যাবে !”
এজি কিশোর দত্ত এদিন জানান, ইতিমধ্যে 1 এপ্রিল থেকে এই টাকা দেওয়া শুরু হয়েছে । রাজ্যকে বিচারপতি অমৃতা সিনহা তখন মৌখিক ভাবে বলেন, “কী করে এত তাড়াতাড়ি টাকা দেওয়া শুরু হয় ! আবেদন নেওয়ার পরে তার কিছু পদ্ধতি আছে । সেটা করা হলে এত তাড়াতাড়ি কী করে দেওয়া হবে !”
এর আগে, বিচারপতি দেবাংশু বসাক ও বিচারপতি মহম্মদ শাব্বার রাশিদির ডিভিশন বেঞ্চে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়েছিল । কিন্তু কলকাতা হাইকোর্ট শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টেই যেতে নির্দেশ দেয় মামলাকারীদের । এদিকে, চাকরিহারা গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি কর্মচারীদের ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা হয় ।
আরও পড়ুন:- প্রতিদিন নির্যাতনের শিকার বাংলার 16 শিশু শ্রমিককে রাজকোট থেকে উদ্ধার।