Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সব মা-ই চান যেন তাঁর সন্তান দুধে-ভাতে থাকে ৷ তবে খিদের জ্বালায় বাচ্চাকে ছটফট করতে দেখার পরও তার মুখে খাবার তুলে দিতে না-পারলে, সেই মা আর মাথার ঠিক রাখতে পারেন না ৷ এমনই পরিস্থিতি হয়েছিল জলপাইগুড়ির সীমা বাউলির ৷ তবে সন্তানকে খাবার দিতে না-পেরে তিনি যা করলেন, তাতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে ময়নাগুড়িতে ৷ অভাবের তাড়নায় সন্তানকে তিস্তা নদীতে ফেলতে গেলেন অসহায় সীমা । তবে স্থানীয়দের তৎপরতায় সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে সেই একরত্তি ৷ আর্থিক সাহায্য নিয়ে সীমার বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছে প্রশাসন ৷
ময়নাগুড়ি ব্লকের তিস্তা সেতু সংলগ্ন বার্নিস গ্রামপঞ্চায়েতের মরিচ বাড়ির ঘটনা । সোমবার সকাল থেকে খিদের জ্বালায় শিশুটি কান্নাকাটি করছিল ৷ স্বামীর কাছে বলেও কোনও লাভ হয়নি ৷ সন্তানের এই কষ্ট আর সহ্য করতে না-পেরে তাকে তিস্তা নদীতে ভাসাতে উদ্যত হলেন সীমা । অভাবের তাড়নায় এমন কাণ্ড দেখে হতবাক প্রতিবেশীরা ।
সীমা বাউলি তিস্তা নদীর ধারে ছেলেকে ফেলে রেখে বলতে থাকেন, ‘মর মর’ । সেই সময় নদীর পারে উপস্থিত দুই কিশোরী পল্লবী কীর্তনিয়া ও মল্লিকা পাল এবং বিশাখা পাট্টাদার নামে এক মহিলা বিষয়টি দেখতে পান ৷ তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গিয়ে শিশুটিকে তার মায়ের কোল থেকে ছিনিয়ে নেন ৷ তাঁদের চিৎকারে লোকজন জড়ো হয়ে যায় । সন্তানকে নদীতে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করায় ওই মহিলাকে স্থানীয়রা মারধর শুরু করেন বলে অভিযোগ ৷ এরপর ময়নাগুড়ি থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হলে তারা গিয়ে ওই মহিলাকে উদ্ধার করে । মা ও ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷
আরও পড়ুন:- যাত্রীদের ভোগান্তি কমলো, এবার ট্রেন ছাড়ার অনেক আগেই রিজার্ভেশন চার্ট।
এই ঘটনায় অনুতপ্ত সীমা বাউলি ৷ তবে তাঁর পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে তিনি জানান, “বাড়িতে খাবার ছিল না । বাচ্চাটা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছিল । তাই আমি ওকে নদীতে ফেলতে গিয়েছিলাম ৷ আমার বাড়িতে বিডিও অফিসের কর্মীরা এসেছিলেন । আমার আধার কার্ড, রেশন কার্ড বানিয়ে দেবেন বলেছেন । আমি আমার স্কুলের সার্টিফিকেট হারিয়ে ফেলেছি । দুই সপ্তাহ ধরে বাড়িতে খাবার নেই । গতকালই স্বামী কাজে যায় ৷ স্বামীকে খাবারের কথা বলায় সে পাত্তা দেয়নি । আমি যা করেছি, তা ঠিক করিনি ৷”
ওই মহিলার স্বামী বিপুল বাউলি বলেন, “কাজের খোঁজে বাইরে বেরোনোর পর জানতে পারি, আমার স্ত্রী আমাদের পুত্র সন্তানকে নদীতে ফেলেছে । সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ছুটে আসি ৷ প্রতিদিন কাজ থাকে না, কয়েকদিন থেকে কাজ নেই । চাল শেষ হয়ে গিয়েছে । স্ত্রী কেন এমন করল বুঝতে পারলাম না ।”
ছেলেকে খাবার দিতে না-পেরে মেরে ফেলার চেষ্টা মায়ের
উদ্ধারকারী স্থানীয় বাসিন্দা বিশাখা পাট্টাদার বলেন, “আমরা তিস্তা নদীতে স্নান করতে গিয়েছিলাম । তিস্তা নদীর ধারে দেখি মহিলাটি বাচ্চাটিকে ধরে মারছে । আর মর মর বলছে । বাচ্চাটিকে তিস্তা নদীতে ফেলে দিতে যাচ্ছিল । সেই কারণেই আমরা দৌড়ে গিয়ে বাচ্চাটিকে বাঁচাই । আমি ওকে কোলে তুলে নিই । এরপর আমাকে ওর মা ধাক্কা দিয়ে ফেলে আবার বাচ্চাটিকে ফেলে দিতে যাচ্ছিল । এরপর আমরা সবাই মিলে মহিলাকে ধরে ফেলি । আমরা চাই না এমন ঘটনা ঘটুক । আমার সঙ্গে আরও দুই জন স্কুলের ছাত্রী ছিল ।”
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শিউলি কির্তনীয়া বলেন, “আমি বাড়িতে ছিলাম না । শুনতে পেলাম বাচ্চাটিকে ওর মা তিস্তার জলে ফেলতে গিয়েছিল । বাচ্চাটিকে দু’জন মিলে উঠিয়ে নিয়ে আসে । আগে খাবারের অভাবের কথা আমাদের জানায়নি । এখন বলছে খাবারের অভাবেই এই কাজ করেছে ।আগে যদি আমাদের জানাত আমরা সহযোগিতা করতাম । এখন প্রশাসনের তরফ থেকে সব সহযোগিতা করা হবে ।”
ময়নাগুড়ির জয়েন্ট বিডিও কাজি মহম্মদ মবিন ঘটনার খবর পেয়ে আজ তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে যান । সীমা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন তিনি । সীমা কেন এমন ঘটনা ঘটালেন তা জানতে চান । পাশাপাশি তিনি সরকারি সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন কি না তাও জানতে চান । সীমা জানান, তিনি কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধা পান না । তাঁর আধার কার্ড থেকে শুরু করে কিছুই নেই । জয়েন্ট বিডিও তাঁকে আশ্বাস দেন যে, সরকারি সুযোগ সুবিধা যাতে তিনি পান তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে । আজ বিডিও অফিসের পক্ষ থেকে প্রাথমিক ভাবে সীমার হাতে খাবার ও জামাকাপড় তুলে দেওয়া হয় ৷
জয়েন্ট বিডিও বলেন, “পরিবারটি সামান্য অসুবিধাতেই আছে । আমরা বললাম এমন ঘটনা যেন আর না-ঘটে । প্রতিবেশীদের পাশে থাকতে বলা হয়েছে । সরকারি সমস্ত সুযোগ সুবিধা যাতে তিনি পান সেই ব্যবস্থা আমরা করছি । স্কুলের সার্টিফিকেট হারিয়ে গিয়েছে । আমরা চেষ্টা করছি তাঁকে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করার জন্য ।”
আরও পড়ুন:- মাধ্যমিক পাশে রেলে ৬ হাজারের বেশি পদে নিয়োগ, নির্বাচন কীভাবে হবে?