Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- নিম্ন রক্তচাপ, অর্থাৎ রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকা, এমন একটি সমস্যা যেখানে রোগী প্রায়শই মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা ক্লান্তি অনুভব করেন । বিশেষজ্ঞরা জানান, যখন রক্তচাপ কম থাকে, তখন শরীরে রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়, যার কারণে শরীরের বিভিন্ন অংশে সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছয় না । যার কারণে ব্যক্তি মাথা ঘোরা, ঝাপসা দৃষ্টি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া এবং দুর্বলতার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন । এই সমস্যাটি অনেকের মধ্যেই দেখা যায় এবং চিরকালই থাকে । কিন্তু কখনও কখনও, নির্দিষ্ট কারণে, রক্তচাপ হঠাৎ স্বাভাবিকের অনেক নীচে নেমে যাওয়ার ঘটনাও মানুষের মধ্যে দেখা যায়, যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কিছু সমস্যার কারণ হতে পারে ।
হঠাৎ কমে যাওয়া রক্তচাপ কীভাবে বাড়ানো যায়, সাধারণত এই বিষয়ে মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মতামত থাকে । উদাহরণস্বরূপ, কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে নুন খেলে তাৎক্ষণিকভাবে রক্তচাপ বেড়ে যায়, আবার কিছু মানুষ ক্যাফেইন বা চা-কফিকে সমাধান বলে মনে করে । কিন্তু এই সমাধানগুলি কি আসলেই কার্যকর ?
লখনউয়ের বিকাশ ক্লিনিকের একজন চিকিৎসক ডাঃ সুরেন্দ্র সিং বলেন, “নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের সর্বদা তাদের জীবনে অনেক খাদ্যতালিকাগত এবং আচরণগত সতর্কতা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়, যেমন- খাদ্যতালিকায় প্রয়োজনীয় পরিমাণে সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা, নিয়মিত সঠিক পরিমাণে জল পান করা এবং কিছু ভালো এবং বিশেষ জীবনযাত্রার অভ্যাস গ্রহণ করা ইত্যাদি । কিন্তু এর পরেও, কখনও কখনও কোনও রোগ, অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে, মানুষ হঠাৎ করে রক্তচাপ স্বাভাবিকের অনেক নীচে নেমে যাওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হয় ।”
আরও পড়ুন:- হাইট অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত? তালিকাটা দেখে নিন…
অ্যালোপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদ উভয়ের মতে, কিছু জিনিস এবং খাদ্যাভ্যাস নিম্ন রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে সহায়ক হতে পারে । যেমন,
নুন এবং জল গ্রহণ: এক গ্লাস জলে এক চিমটি নুন মিশিয়ে পান করলে রক্তচাপ দ্রুত বৃদ্ধি পায় । তবে অতিরিক্ত নুন খাওয়া ক্ষতিকারক হতে পারে, তাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি এই দ্রবণটি গ্রহণ করবেন না ।
কফি বা চা পান করা: ক্যাফেইন রক্তনালীগুলিকে সংকুচিত করে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে ।
বাদাম এবং দুধ খাওয়া: রক্তচাপ ভারসাম্য বজায় রাখতে 4-5টি বাদাম সারারাত ভিজিয়ে রাখুন এবং সকালে দুধের সঙ্গে পান করুন । এটি শক্তি বৃদ্ধিকারী হিসেবেও কাজ করে এবং দুর্বলতা দূর করে ।
তুলসি এবং মধু: 5-6টি তুলসি পাতা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে নিম্ন রক্তচাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । তুলসিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়াম থাকে যা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে ।
সতর্কতা: ডাঃ সুরেন্দ্র সিং বলেন যে নিম্ন রক্তচাপের সমস্যাযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত কিছু বিষয় এবং সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ । যেমন:
যাদের রক্তচাপ কম, তাঁদের নুন একটু বেশি খাওয়া উচিত ।
এছাড়াও, তাঁরা তাঁদের খাদ্যতালিকায় সুষম পরিমাণে আচার, স্যুপ, বাটারমিল্ক এবং এমন খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে পারে যাতে একটু বেশি নুন থাকে কারণ এগুলিতে সোডিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে ।
শরীরকে জলশূন্যতা থেকে রক্ষা করতে দিনে 8-10 গ্লাস জল পান করুন ।
এছাড়াও, নারকেল জল এবং লেবু জল খাওয়াও উপকারী ।
আপনার খাদ্যতালিকায় আয়রন এবং ভিটামিন বি12 সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন । ডার্ক চকলেট, পালং শাক, বিট, সবুজ শাকসবজি, বেদানা এবং আপেল নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ।
হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকার কারণেও রক্তচাপ কমে যেতে পারে, তাই এই ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শে আয়রন এবং বি12 সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে ।
ক্যাফিনযুক্ত পানীয় গ্রহণ কেবল তাৎক্ষণিকভাবে নয়, দীর্ঘমেয়াদী রক্তচাপ বৃদ্ধি বা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে । এর জন্য, নিয়মিত খাদ্যতালিকায় কফি, গ্রিন টি এবং ব্ল্যাক টি অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে । তবে অতিরিক্ত পরিমাণে এগুলি গ্রহণ করলে হৃদস্পন্দনের উপর প্রভাব পড়তে পারে, তাই পরিমাণটি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ ।
আপনার নিয়মিত খাদ্যতালিকায় ড্রাই ফ্রুট এবং বীজ অন্তর্ভুক্ত করুন । বাদাম, কিশমিশ, আখরোট, চিয়া বীজ এবং সূর্যমুখী বীজও নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় উপকারী । প্রতিদিন এক মুঠো শুকনো ফল খেলে দুর্বলতা হয় না ।
আপনার দৈনন্দিন রুটিনে নিয়মিত ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম, বিশেষ করে সূর্য নমস্কার এবং প্রাণায়ম অন্তর্ভুক্ত করুন । ওঠা-বসার সময় বিশেষ যত্ন নিন । নিম্ন রক্তচাপে ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের সবসময় ধীরে ধীরে ওঠা উচিত যাতে রক্তচাপ হঠাৎ কমে না যায় । তাদের হঠাৎ দাঁড়িয়ে থাকা বা বাঁকানো এড়িয়ে চলা উচিত । দিনে 3-4 বার অল্প অল্প করে খান । দীর্ঘক্ষণ খিদে পায় না ৷ এতে আপনার রক্তচাপ কমে যেতে পারে ।
ডাঃ সুরেন্দ্র সিং বলেন, “কখনও কখনও নিম্ন রক্তচাপ কোনও রোগ বা অবস্থার ইঙ্গিতও দেয় । তাই, যাঁদের নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত নিজেদের পরীক্ষা করানো উচিত ।”
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷)
আরও পড়ুন:- সুখবর ! সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে স্টেট ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! শীঘ্রই আবেদন করুন
আরও পড়ুন:- সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাহলে ব্রেকফাস্টে রাখুন এই খাদ্য তালিকা