পাক সেনার গুলিতে পরপর মৃত্যু, ঘর ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাচ্ছেন সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীরা

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পাক সেনার অহরহ গুলি বর্ষণে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে । সরকারি নির্দেশ না থাকলেও বেশ কিছু গ্রামের মানুষ দূরবর্তী নিরাপদ জায়গায় সরে যেতে শুরু করেছে । কোথাও আবার মানুষজনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সরকারি তরফে ।

অপারেশন সিঁদুরের পর থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সম্মুখবর্তী গ্রামগুলিকে লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ জারি রেখেছে পাক সেনাবাহিনী । ঘটনায় চার শিশু এবং একজন সেনা-সহ কমপক্ষে 13 জন নিহত এবং 57 জন আহত হয়েছে ।

পাকিস্তানের নির্বিচারে গোলাবর্ষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত পুঞ্চ জেলা । জম্মু অঞ্চলের রাজৌরি-সহ উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লা ও কুপওয়ারায় সীমান্তবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় শত শত বাসিন্দা ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন । কোথাও বা তাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণের জবাবে পাক সেনার এই গোলাগুলি । 2021 সালের 25 ফেব্রুয়ারি দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনর্নবীকরণের পর এই প্রথমবারের মতো এত তীব্র গোলাবর্ষণ দেখা গিয়েছে ।

পুঞ্চ জেলায় 13 জনের মৃত্যু হয়েছে । আহত হয়েছেন 42 জন । তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গিয়েছে । পুঞ্চের নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বালাকোট, মেন্ধার, মানকোট, কৃষ্ণা ঘাঁটি, গুলপুর, কেরনি এমনকি পুঞ্চ জেলা সদর দফতর থেকে গোলাবর্ষণের খবর পাওয়া গিয়েছে । যার ফলে কয়েকডজন বাড়ি এবং যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । সীমান্তের ওপার থেকে গোলাবর্ষণ দুপুর পর্যন্ত তীব্র ছিল । কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারী গোলাবর্ষণের কারণে স্থানীয়রা আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছে । পুঞ্চ বাস স্ট্যান্ডেও আঘাত হানে পাক সেনার গুলি । যার ফলে বেশ কয়েকটি বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে । পুঞ্চ শহরে একটি গুরুদ্বার এবং সংলগ্ন বাড়িতে একটি কামানের গোলার আঘাতে তিন শিখ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন । পঞ্জাবের বিভিন্ন দল এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে ।

কুপওয়ারা জেলার কর্ণাহ সেক্টরে গোলাগুলির কারণে বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন লেগে গিয়েছে । নিহতদের মধ্যে বলবিন্দর কৌর ওরফে রুবি (33), মোহাম্মদ জৈন খান (10), তার বড় বোন জোয়া খান (12), মোহাম্মদ আকরাম (40), আমরিক সিং (55), মোহাম্মদ ইকবাল (45), রঞ্জিত সিং (48), শাকিলা বি (40), অমরজিৎ সিং (47), মরিয়ম খাতুন (7), বিহান ভার্গব (13) এবং মোহাম্মদ রফি (40) এবং সেনাবাহিনীর একজন ল্যান্স নায়েক রয়েছেন বলে শনাক্ত করা হয়েছে । পহেলগাঁওয়ে হামলার পর তীব্র উত্তেজনার মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের সীমান্তে এটি ছিল টানা 13তম রাতে বিনা উস্কানিতে গুলি চালানোর ঘটনা ।

সেনা সূত্র জানিয়েছে যে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে ভারতীয় সেনারা শত্রুবাহিনীর বেশ কয়েকটি চৌকি ধ্বংস করে অনেককে হতাহত করেছে । কর্তৃপক্ষ বুধবার জম্মু অঞ্চলের পাঁচটি সীমান্তবর্তী জেলার সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে ।

পুঞ্চ জেলার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, তারা পাকিস্তানি গোলাগুলির কবলে পড়া সামনের গ্রামগুলি থেকে স্থানান্তরিত হতে ইচ্ছুক মানুষদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা-সহ নয়টি পাবলিক আশ্রয় শিবির নির্ধারণ করেছে । এই বিষয়ে এক গ্রামবাসী লিয়াকত আলি পিটিআইকে বলেন, “যদিও আমাদের গ্রামে কোনও আন্তঃসীমান্ত গুলিবর্ষণ হয়নি, তবুও আমাদের আরএস পুরার আইটিআই কলেজে স্থানান্তরিত করতে বলা হয়েছে । সেখানে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে । অতীতে পাকিস্তানি গোলাগুলিতে গ্রামটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং এমনকি পুড়েও গিয়েছিল ।”

আরও পড়ুন:- সংস্কারের জন্য 15 মাস বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় হুগলি সেতু, বিকল্প পথ কি হবে ? জেনে নিন

BORDER VILLAGERS MOVE TO SAFE AREA

জীবনের ঝুঁকি এড়াতে সীমান্তবর্তী গ্রাম থেকে নিজ দায়িত্বে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাচ্ছে গ্রামবাসীরা (পিটিআই)

পঞ্জাবের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির পরিস্থিতি :

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে পঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলার কিছু সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষ নিরাপদ এলাকায় সরে যেতে শুরু করেছে । এদিকে, অমৃতসর এবং বাটালার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আতঙ্কিত হয়ে ডাল, রান্নার তেল, গমের আটা, চিনি এবং লবণের মতো মুদির জিনিসপত্র কিনতে শুরু করেছেন । লোকজনকে পাইকারি এবং মুদির দোকানে কেনার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে ।

অমৃতসরের জ্বালানি পাম্পে অনেক লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছে । ফিরোজপুরের গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন যে, তাঁরা তাদের জিনিসপত্র স্থানান্তর শুরু করেছেন । যদিও সীমান্তরক্ষী বাহিনী, ভারতীয় সেনাবাহিনী বা কোনও সরকারি সংস্থা এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিকভাবে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়নি । বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত তাদের নিজস্ব ।

58 বছর বয়সি এক প্রৌঢ়াকে তার পুত্রবধূর সঙ্গে কাপড় গুছিয়ে নিতে দেখা গিয়েছে । তিনি জানান, তাঁরা উদ্বিগ্ন । কারণ তাদের বাড়ি আইবি থেকে মাত্র 2 কিমি দূরে । তাঁর স্বামী ও ছেলে বাইরে থাকে । বর্তমানে পরিবারের ছয় সদস্য শীঘ্রই এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন । গ্রামবাসীদের তাদের বিছানা, কুলার, ওয়াশিং মেশিন, ফ্রিজ, খাদ্যশস্যের পাত্র ট্র্যাক্টর-ট্রলিতে করে তাদের আত্মীয়দের কাছে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে ।

তবে, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সত্ত্বেও অনেক গ্রামবাসী উচ্চ মনোবল দেখিয়েছেন । টেন্ডিওয়ালা গ্রামের সুরজিৎ সিং বলেছেন যে, তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর উপর গর্বিত । ফিরোজপুরের ডেপুটি কমিশনার দীপশিখা শর্মা বুধবার জানিয়েছেন যে, জেলায় এখনও আতঙ্কের কোনও কারণ নেই । সেনাবাহিনী বা জেলা প্রশাসন কেউই সীমান্তবর্তী গ্রামগুলি খালি করার জন্য কোনও নির্দেশ জারি করেনি এবং আশ্বস্ত করেছেন যে পুরো প্রশাসন সম্পূর্ণ সতর্ক এবং প্রস্তুত রয়েছে ।

অমৃতসর জেলার আটারি, মহাওয়া, পুল মোহরা এবং বিখউইন্ড সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিও শান্ত দেখাচ্ছিল । আটারিতে, একজন গ্রামবাসী জানিয়েছেন যে, পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে অন্যান্য স্থান থেকে তাদের আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ফোন আসছে । কিন্তু তারা মোটেও ভীত নন । তবে, কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে জমি থাকা কৃষকদের ক্ষেতে যেতে দেওয়া হয়নি । কারণ অমৃতসর এবং তারন তারান জেলার সমস্ত ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের গেট বন্ধ ছিল ।

আরও পড়ুন:- মকড্রিল মানে কী? ঠিক কী করতে হবে সাইরেন বাজলেই? জানুন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন