Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- জলপাইগুড়িতে রয়েছে এমন একটি জায়গা, যেখানে দাঁড়িয়ে ঘড়িতে চোখ রাখলেই সব তালগোল পাকিয়ে যাবে ৷ কারণ হাতের ঘড়ি যে সময় দেখাবে, তা মিলবে না মোবাইলের ঘড়িতে দেখানো সময়ের সঙ্গে ৷ দুটো সময়ের ফারাকটা প্রায় আধঘণ্টার ৷ দিনের যে কোনও সময়ই ওই জায়গায় গিয়ে ঘড়ি দেখলে দেখা যাবে মোবাইল ও হাতের ঘড়ির মধ্যে বিস্তর তারতম্য ৷ আধঘণ্টা সময়ের ফারাক দেখে ভাববেন না এটা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা ৷ জলপাইগুড়িতে জাতীয় সড়কের উপরই এই কাণ্ড দেখে অবাক পর্যটকরা ৷ এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার খোঁজ করল বাংলা নিউস দুনিয়া৷
জলপাইগুড়ি জেলার গরুমারা জাতীয় উদ্যানে প্রতি বছর আসেন হাজার হাজার পর্যটক ৷ গরুমারা জাতীয় উদ্যানের বুক চিরে চলে যাওয়া 31 নং জাতীয় সড়কের পাশে রয়েছে মহাকাল ধাম । সেখানে পুজো দিতে যান পর্যটক থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষজন ৷ এই জায়গায় এলেই আপনি টের পাবেন সময়ের তারতম্যের অদ্ভুত ঘটনার ৷ আপনার হাতে থাকা ঘড়িতে আর মোবাইলের ঘড়িতে দেখবেন সময়ের ফারাক রয়েছে প্রায় আধঘণ্টার । কিন্তু এই জায়গাটি ছেড়ে কয়েকশো মিটার দূরে চলে গেলেই আবার সব ঠিকঠাক ৷ মিলে যাবে হাতের ও মোবাইলের ঘড়ির সময় ৷
অনেকেই এই এলাকার বিশেষ এই মাহাত্ম্যের কথা জানেন না ৷ এক পর্যটক শঙ্কলিতা রায় কর্মকার বলেন, “আমরা আগে এটা দেখিনি । আমার হাতের ঘড়ির সঙ্গে মোবাইলের সময়ের ব্যবধান এখানে আধ ঘণ্টা । এর আগেও এখানে এসেছি, কিন্তু বিষয়টি লক্ষ্য করিনি । হয়তো আজকেও বিষয়টি না-দেখেই চলে যেতাম । যদি না আপনি আমাদের বলতেন । আমাদের বাড়ি থেকে বাংলাদেশ এক কিলোমিটার দূরে ৷ কিন্তু সেখানেও কোনওদিন সময়ের ব্যবধান দেখিনি ৷ মহাকাল ধামে এসেই আমরা এমনটা দেখছি ।”
গরুমারা জাতীয় উদ্যান এলাকায় মহাকাল ধাম
গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন মহাকাল ধামে বেড়াতে আসা পর্যটক দীপাবলি দে বলেন, “আমরা আগে কোনও দিন শুনিনি ৷ এই প্রথম দেখলাম বিষয়টা ৷ এখানে কোনও টাওয়ার নেই । সেজন্যও হতে পারে ৷ তবে প্রকৃত কারণটা জানতে ইচ্ছে করছে ।” পর্যটক মনোজিৎ রায়ের কথায়, “এখানে এলে দেখি ঘড়ির সময় ও মোবাইলের সময় এক নেই । আমার হাতে থাকা ঘড়ির সঙ্গে মোবাইলের ঘড়ির সময়ের আধ ঘণ্টা ব্যবধান লক্ষ্য করা যায় ।”
ঘড়ি দেখতে গিয়ে অবাক হন পর্যটকরা
যাঁরা এই ঘটনা আগেও চাক্ষুস করেছেন, তাঁদের অনেকেই এতে অবাক হলেও এই ঘটনার কারণটা জানেন না ৷ স্থানীয় অজিত মুণ্ডা জানালেন, “আমাদের এখানে আধ ঘণ্টা এগিয়ে যায় । কিন্তু কেন এমনটা হয় আমরা জানি না, অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন । মোবাইলের সময়টা এগিয়ে যায় ।” গাড়ির চালক সাগর সেন বলেন, “এখানে এলেই সময়ের ব্যবধান হয় আধঘণ্টা ৷ কেউ কেউ বলে, অন্য জায়গার নেটওয়ার্ক ধরে নেয় । কিন্তু কেন এমন হয় জানি না । ভুটানও তো এখান থেকে অনেকটাই দূরে ।”
জলপাইগুড়ির গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিজ প্রতিম সেন বলেন, “আমরাও লক্ষ্য করেছি ৷ মহাকাল ধামের সামনে সময়ের একটা ব্যবধান হয়ে যায় ।”
কিন্তু তাজ্জব করা এই ঘটনার কারণ কী ? মহাকাল ধামের কোনও অলৌকিক বিষয় ? না, সেরকম কিছুর জনশ্রুতি নেই ৷ এই ঘটনার পেছনে রয়েছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, গরুমারা জাতীয় উদ্যান সংলগ্ন মহাকাল ধামের কাছে ইউরেশিয়ান ও ইন্ডিয়ান দুটি প্লেটের সঙ্গমস্থল । সেখানে ম্যাগনেটিক ওয়েভ বা মাইক্রোওয়েভ কাজ করে । আর সেই ওয়েভের কারণেই ওই নির্দিষ্ট স্থানে ভুটানের সময়টা ধরে নেয় ।
জলপাইগুড়ি সায়েন্স অ্যান্ড নেচার ক্লাবের সম্পাদক ডা. রাজা রাউত জানান, “গরুমারা জাতীয় উদ্যানের পাশে মহাকাল ধামের সামনে আধ ঘণ্টা সময়ের তারতম্য হয় । দীর্ঘদিন ধরে বহু মানুষের প্রশ্নের বিষয় এটি । আসলে আমাদের খুব কাছাকাছি ভুটান । ভুটানের সময় নিয়ে নেয় । ইউরেশিয়ান প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেট – এই দুটো টেকটনিক প্লেট আছে । তার সঙ্গমস্থলেই গরুমারা । জাংশন এরিয়ার কারণেই এটা হতে পারে । ম্যাগনেটিক ওয়েভ বা মাইক্রোওয়েভ কাজ করে । ওয়েভের কারণে খানিকটা ভুটানের টাইমটা ধরে নেয় । ভুটানের বেশকিছু অংশ ইউরেশিয়ান প্লেটে আছে, আবার কিছু অংশ ইন্ডিয়ান প্লেটে আছে । আমার ধারণা সেই কারণেই হতে পারে । সবগুলোর সম্মিলিত রূপের ফলে নির্দিষ্ট ওই জায়গায় ভুটানের টাইম ধরে । তবে এটা নিয়ে গবেষণার বিষয় রয়েছে । ভারত সরকারের অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের এটা নিয়ে কাজ করার দরকার আছে । তবে পর্যটকরা এটা দেখে বেশ মজা পান ।”
আরও পড়ুন:- বর্ষাকালে কলকাতার কোন ৮ এলাকা বিপজ্জনক? কি ব্যবস্থা নিচ্ছে পুরসভা ? জানুন