কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা দায়ের হয়েছে, যার ফলে ২৬,০০০ পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন করে উদ্বেগ। এই আইনি লড়াইয়ের মূল বিষয়গুলি এবং পরীক্ষার সময়সূচীর উপর এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
একক বেঞ্চের রায় এবং তাকে চ্যালেঞ্জ
৭ই জুলাই, ২০২৫-এ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের একক বেঞ্চ রায় দেয় যে “কলঙ্কিত প্রার্থীরা” (যারা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছিলেন) এসএসসি দ্বিতীয় এসএলএসটি পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র পূরণ করতে পারবেন না। যদি তারা তা করেন, তবে তাদের আবেদন বাতিল করা হবে। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে রাজ্য সরকার এবং অন্যান্য অসন্তুষ্ট পক্ষ ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছে।
ডিভিশন বেঞ্চে চ্যালেঞ্জের কারণ
- নিয়োগ বিধি: আবেদনকারীদের যুক্তি, কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ২০১৬ সালের নিয়োগ বিধি মেনে পরীক্ষা হওয়া উচিত। কিন্তু বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন যে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) বা রাজ্য সরকার নতুন নিয়ম তৈরি করতে পারে এবং তিনি এতে হস্তক্ষেপ করবেন না।
- শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য নম্বর: শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার জন্য নম্বর বরাদ্দ করার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। আবেদনকারীদের মতে, এটি সেই প্রার্থীদের অন্যায় সুবিধা দেবে যাদের চাকরি আগে বাতিল হয়ে গিয়েছিল, যা সুপ্রিম কোর্ট এবং হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী।
- ওয়েটিং লিস্টের প্রার্থীরা: ২০১৬ সালের ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীরাও একক বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করেছেন, কারণ অযোগ্য প্রার্থীদের কারণে তারা চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন।
- রাজ্য সরকারের অবস্থান: রাজ্য সরকার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বলেছে যে অযোগ্য প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা থাকা উচিত নয়।
- সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন: কিছু পক্ষ সুপ্রিম কোর্টের গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে যাতে সরাসরি সেখানে মামলা দায়ের করা যায়।
- শূন্যপদ সংক্রান্ত জটিলতা: ওয়েটিং লিস্টে থাকা আবেদনকারীদের যুক্তি, পূর্ববর্তী ডিভিশন বেঞ্চের আদেশ ছিল ঘোষিত শূন্যপদের ভিত্তিতে নিয়োগ এবং নতুন করে নির্বাচন প্রক্রিয়া চালানো। কিন্তু একক বেঞ্চ নতুন শূন্যপদ অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছে, যা রাজ্য সরকার এখন করছে এবং পূর্ব ঘোষিত শূন্যপদ পূরণ করছে না।
- যোগ্যতার মানদণ্ড: ২০১৬ সালের নিয়ম অনুযায়ী যারা ৪৫% নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তারা নতুন ২০২৫ সালের নিয়মে অযোগ্য বলে বিবেচিত হচ্ছেন, যেখানে ন্যূনতম ৫০% নম্বর প্রয়োজন। এই প্রার্থীরা এই পরিবর্তনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন।
- কলঙ্কিত প্রার্থীদের জন্য বয়সের ছাড়: রাজ্য সরকার এবং এসএসসি-র যুক্তি, সুপ্রিম কোর্ট শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং অকলঙ্কিত প্রার্থীদের জন্য বয়সের ছাড় দিলেও, কলঙ্কিত প্রার্থীদের নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নিষেধ করেনি, বিশেষ করে যেহেতু তারা ইতিমধ্যে শাস্তি (চাকরি বাতিল এবং বেতন ফেরত) পেয়েছে। তবে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্টভাবে বলেছিল যে কলঙ্কিত প্রার্থীদের নতুন নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সুযোগ দেওয়া উচিত নয়।
আরো পড়ুন : সবাইকে নতুন বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছে মোদী সরকার ! কিভাবে আবেদন জানাবেন ?