Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ইসলামি প্রজাতন্ত্র হিসেবে গর্বের শেষ নেই পাকিস্তানের। ইদানিং ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ তুলে মুসলিম দেশগুলিকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছে ইসলামাবাদ। খুব একটা সফল হচ্ছে না, তাও চেষ্টায় খামতি নেই। এ হেন পাকিস্তানেই ইদ পালন করলে ৫ লক্ষ পাকিস্তানি টাকা জরিমানা করা হবে। না, এই বিধি সকলের জন্য নয়। পাক পাঞ্জাবের প্রাদেশিক সরকার এই সতর্কবার্তা জারি করেছে পাকিস্তানের প্রান্তিক সম্প্রদায় ‘আহমদিয়া’দের জন্য।
ইদ পালন করলে জরিমানা ৫ লাখ
ইদ-উল-আধার আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। এই অবস্থায় ইদ না পালনের জন্য ক্রমে চাপ বাড়ছে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর। পাঞ্জাব এবং সিন্ধ প্রদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। কুরবানি-সহ ইদের কোনও আচার-অনুষ্ঠান পালন না করার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে তাদের।
এই বিষয়ে তাদের বাধ্য করা হচ্ছে হলফনামায় স্বাক্ষর করতে। এমনকী, নিজেদের বাড়িতেও তারা ইদ পালন করতে পারবেন না। আর এই নিষেধ না মানলেই দিতে হবে জরিমানা।
পাকিস্তান গঠনে কী ভূমিকা ছিল আহমদিয়াদের?
অথচ ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠনের জন্য মহম্মদ আলি জিন্নাহ এবং তাঁর মুসলিম লিগের পাশে যারা ছিল, তাদের অন্যতম এই আহমদিয়া মুসলিমরা। প্রথম হজরত খলিফাতুল মসিহের নেতৃত্বে ইসলামি প্রজাতন্ত্র গঠনে সাহায্য করেছিল তারা।
এখন সেই দেশেই যারপরনাই নিপীড়নের শিকার হচ্ছে আহমদিয়ারা। ইদের প্রাক্কালে তাদের ঠারেঠারে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আহমদিয়াদের পাকিস্তানি নাগরিক বলে মনে করে না পাক সরকার।
আহমদিয়া কারা?
আহমদীয়া এক আন্তর্জাতিক ইসলামী আন্দোলন। ইসলাম ধর্মের সংস্কার ও পুনরুজ্জীবনই এই আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল। ১৮৮৯ সালে ব্রিটিশ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের কাদিয়ানে এই সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মির্জা গোলাম আহমদ।
মূলধারার ইসলামি বিশ্বাস অনুযায়ী, হজরত মহম্মদই শেষতম নবি। তবে আহমদীরা মনে করে হজরত মহম্মদ আল্লাহর সবথেকে সম্পূর্ণ এবং নিখুঁত বার্তা পৃথিবীতে নিয়ে এলেও, ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য মির্জা গোলাম আহমদের মতো অন্যান্য নবিদের আবির্ভাব ঘটতে পারে।
অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আহমদিয়ারা। তারা মনে করে অন্যান্য ধর্মের অনুসরণকারীদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপচারিতা প্রয়োজন।
কেন আহমদিয়াদের প্রতি বিরূপ পাকিস্তান?
মূল কারণ মির্জা গোলাম আহমদকে ইসলামের নবি বলে মনে করা। হজরত মহম্মদকে যে তারা শেষতম নবি বলে মনে করে না, এটাই মূল ধারার মুসলিমদের অপছন্দের কারণ। তাই তাদের প্রকৃত মুসলিম বলে মনে করে না পাকিস্তানের একটা বড় অংশ।
আহমদিয়ারা কি মুসলিম নয়?
কেড়ে নেওয়া হয় ‘মুসলিম’ স্বীকৃতি
বর্তমানে পাকিস্তানে প্রায় আহমদিয়া সম্প্রদায় ২০ লক্ষ মানুষ বাস করেন। হিংসাত্মক আক্রমণ থেকে আইনি বৈষম্য — নানা ধরনের নিপীড়ন সহ্য করতে হয় তাদের। ১৯৭৪ সালে পাক সংবিধান সংশোধন করে তাদের ‘মুসলিম’ স্বীকৃতি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।
অর্থাৎ, আহমদিয়ারা পাক সরকারের চোখে মুসলিমই নয়। তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। মুসলিম হিসেবে ধর্মীয় ও আইনি স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করা হয়।
আরও অধিকার কেড়েছিলেন জেনারেল জিয়া
১৯৮৪ সালে জেনারেল জিয়া-উল হক এক অধ্যাদেশ জারি করে আহমদিয়াদের অধিকার আরও খর্ব করেছিলেন। তাদের ইসলামী আচার-অনুষ্ঠান পালনকে অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। এর শাস্তি ছিল তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
সেই সময় থেকে পাকিস্তানে আহমদিয়াদের কোরান পাঠ নিষেধ। প্রকাশ্যে নামাজ পড়তে বাধা দেওয়া হয়।
চরমপন্থীদের নিয়মিত হামলা
পাশাপাশি, তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপি এবং তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের মতো চরমপন্থী গোষ্ঠীদের নিয়মিত হামলা তো রয়েছে। চলতি বছরের মার্চে, পাক পাঞ্জাবে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের প্রায় ১০০টি কবর অপবিত্র করেছিল তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের সদস্যরা।
ইদ আসলেই বাড়ে নিপীড়ন
ইদের সময়ে প্রায় প্রতি বছরেই তাদের উপর নিপীড়নের মাত্রা বাড়ে। ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুনে পাক পাঞ্জাবে আহমদিয়া গোষ্ঠীর কমপক্ষে ৩৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। লক্ষ্য ছিল যাতে আহমদিয়ারা কুরবানি দিতে না পারে। ইদ পালন করতে না পারে।
আহমদিয়াদের ইদ পালন কি বেআইনি?
আহমদিয়াদের ইদ না পালন করার জন্য যে হলফনামায় স্বাক্ষর করানো হচ্ছে, তা অসাংবিধানিক এবং স্থানীয় সরকারের কর্তৃত্বের বাইরে বলে দাবি করেছেন পাকিস্তানি আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
অন্য দিকে লাহোর বার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে পাক পাঞ্জাব পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলকে একটি চিঠি লিখে দাবি করা হয়েছে, ইসলামিক রীতিনীতির অনুরূপ সমাবেশ আয়োজন করে যদি আহমদিয়ারা আইন ভাঙে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তারা আরও বলেছে, শুধুমাত্র মুসলমানদেরই কুরবানি দেওয়ার অধিকার রয়েছে। আহমদিয়ারা ইদ পালন করলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের অনুভূতিতে আঘাত লাগবে।