ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিই আমেরিকার গলার কাঁটা ! অথচ কেন…

By Bangla News Dunia Dinesh

Published on:

Bangla News Dunia, Pallab : সময়টা ১৯৬০ সাল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন ইরানের শত্রু নয়। শান্তির পতাকাতলে আমেরিকার হাত ধরেই পরমাণু কর্মসূচি প্রথম চালু হয়েছিল ইরানে (Iran Nuclear Programme)। মার্কিন সাহায্যেই তেহরানে চালু হয় একটি পারমাণবিক চুল্লি। মাঝখানে কেটে গিয়েছে ৬ দশক। এখন পারষ্পরিক শত্রুতার আবহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির চরম বিরোধী। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘হুমকি’ হিসেবে বিবেচনা করে ওয়াশিংটন ইতিমধ্যেই সেই দেশের তিনটি পরমাণু কেন্দ্রে বোমা ফেলেছে। তাতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে না গেলেও সাময়িক ধাক্কা খেয়েছে বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহল।

আরও পড়ুন : শীঘ্রই পশ্চিমবঙ্গে ২৫০০০ কর্মসংস্থান হবে। জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

অথচ সেই ষাটের দশকেই ‘শান্তির জন্য পরমাণু’ কর্মসূচি চালু করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার (Dwight D. Eisenhower)। উদ্দেশ্য ছিল মিত্র দেশগুলোকে পারমাণবিক প্রযুক্তি দেওয়া। এতে তাদের অর্থনীতি উন্নত হবে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ হবে। এই চুল্লি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহার হবে না। কারণ, এটি খুব দুর্বল জ্বালানিতে চলে। বোমা তৈরির মতো শক্তি এতে নেই।

সেই সময়ে, শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির শাসিত ইরান ছিল একটি আদর্শ শীতল যুদ্ধের অংশীদার, ধর্মনিরপেক্ষ, পশ্চিমের অনুগামী এবং আধুনিকীকরণের জন্য আগ্রহী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে তেহরান গবেষণা চুল্লি স্থাপনে সহায়তা করে, এমআইটির মতো অভিজাত প্রতিষ্ঠানে ইরানি বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দেয় এবং ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করে। ওয়াশিংটনের কাছে, এটি ছিল তার প্রভাব বিস্তার কর্মসূচির অংশ, সোভিয়েত শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ এবং পারমাণবিক শক্তির ‘উদার’ ব্যবহার প্রদর্শনের একটি কৌশল।

প্রাক্তন মার্কিন অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ও বর্তমানে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের সিনিয়র ফেলো রবার্ট আইনহর্ন বলেন, ‘আমরা ইরানকে তার স্টার্টার কিট দিয়েছিলাম। সেই সময় আমরা পারমাণবিক সম্প্রসারণ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত ছিলাম না, তাই পারমাণবিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপারে আমরা বেশ উদার ছিলাম।’ আমেরিকার উদ্বেগ ছিল ইরান একদিন প্রযুক্তি নিয়ে কী করতে পারে তা নিয়ে নয়, বরং সেই সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন কী করতে পারে তা নিয়ে। মোহাম্মদ রেজা পাহলভির আমলে বিশাল তেলের মজুদ থাকা সত্ত্বেও, ইরান পারমাণবিক শক্তি হয়ে উঠতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিল। ১৯৭০-এর দশকে ইরান ইউরোপের সঙ্গে চুক্তি করে। শাহ ফ্রান্স সফরে যান। পাঁচটি চুল্লি কেনার চুক্তি করেন। তখন শাহ ছিলেন পারমাণবিক শান্তির মুখ। মার্কিন বিজ্ঞাপনেও তাঁর ছবি ব্যবহার হয়। ইরান পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী চুক্তি স্বাক্ষর করে।

তবু যুক্তরাষ্ট্র শাহর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করে। ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে, মার্কিন নীতিনির্ধারকরা চুল্লি চুক্তি পরিবর্তন করে এবং জ্বালানি বিধিনিষেধের উপর জোর দিয়ে ইরানের ক্রমবর্ধমান স্বায়ত্তশাসনকে আটকানোর চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু ততদিনে পারমাণবিক পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এবং তারপর ১৯৭৯ সালের আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনেইয়ের (Ruhollah Khomeini) নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব শাহকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে তার জায়গায় আমেরিকার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ধর্মীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে। এতেই আমেরিকা-ইরান সুসম্পর্কের ভিত্তিটা রাতারাতি ভেঙে পড়ে।

প্রাথমিকভাবে, নতুন শাসকদের পারমাণবিক প্রকল্পে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। এটি ব্যয়বহুল, পশ্চিমি দুনিয়া প্রভাবিত এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের একটি প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত ছিল। ইরানের শাসক আয়াতোল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনেই এটি চালিয়ে যাওয়ার কোনও কারণ দেখতে পাননি। কিন্তু ১৯৮০-র দশকে ইরাকের সাথে ইরানের নৃশংস যুদ্ধ, ইরানের নেতৃত্বকে জাতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করে। এবার পারমাণবিক কর্মসূচির সহযোগী হিসেবে আমেরিকার পরিবর্তে ইরান পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। পাকিস্তানের পারমাণবিক কর্মসূচির জনক আব্দুল কাদির খান ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রিফিউজের নকশা এবং উপাদান সরবরাহ করেছিলেন। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে, বিশ্ব ইরানের গোপন ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পগুলি আবিষ্কার করে ফেলে। তেহরান দাবি করেছিল যে এই কর্মসূচি এনপিটি-র অধীনে থেকেই করা হচ্ছে। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বন্ধুদেশগুলি কিন্তু ইরানের দাবি নিয়ে নিশ্চিত ছিল না। ২০১৫ সালে ওবামার নেতৃত্বে পারমাণবিক চুক্তি, যা আনুষ্ঠানিকভাবে JCPOA নামে পরিচিত, ইরানের পরমাণু পরীক্ষা নিয়ে সংকটকে সাময়িকভাবে ঠেকিয়ে দেয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন সেই চুক্তি থেকে সরে আসে। ফলে ফের সংঘাত ও সন্দেহের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই সংঘাতের পরিস্থিতিই আরও এক যুদ্ধের মুখ দেখল। আপাতত ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, তাঁরা ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলিতে হামলা চালিয়ে পরমাণু কর্মসূচি পুরোপুরি বিধ্বস্ত করে দিতে পেরেছে। যদিও এই দাবি নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেরই সংশয় রয়েছে। আমেরিকার গোয়েন্দা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি কয়েক মাস পিছিয়ে গিয়েছে মাত্র। আরও জানা গেছে, ইরানের কাছে যে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ভান্ডার রয়েছে তা তারা গোপন স্থানে লুকিয়ে ফেলেছে। যা দিয়ে ফের পরমাণু বোমা তৈরি করে ফেলতে পারে। ফলে যুদ্ধ হলেও মধ্যপ্রাচ্যে সন্দেহ আর উদ্বেগের পরিবেশ কিন্তু শেষ হল না।

আরও পড়ুন : বাড়ি বসে মাসে ইনকাম হবে 20,000 টাকা। অনুসরণ করুন পাঁচটি সহজ পদ্ধতি

Bangla News Dunia Dinesh

মন্তব্য করুন