Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- জাতির জনক মহত্মা গান্ধি লিখেছিলেন, “ভারতের বসবাস তার গ্রামে ৷” সেই সূত্র ধরে বুঝতে অসুবিধা হয় না দেশের প্রতিটি গ্রামেরই আলাদা আলাদা রীতিনীতি এবং ঐতিহ্য রয়েছে। তবে, মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে প্রতিটি পরিবারের অন্তত একজন ভারতীয় সেনাবাহিনীর অংশ হিসেবে এখন দেশসেবা করছেন বা অতীতে করেছেন।
সাহস, আত্মসমর্পণ এবং ত্যাগের প্রতীক ভারতীয় সেনা জওয়ানরা দেশ সেবার সাহস কোথা থেকে পান ? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চান সবাই ৷ দেশের কয়েকটি গ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে সেই উত্তর। তেমনই একটি গ্রাম কোলাপুর জেলায় গিরগাঁও ৷ এই গ্রামে 150 বছরের সামরিক ঐতিহ্য রয়েছে। ‘গিরগাঁও’ সেনার প্রাক্তন এবং বর্তমান জওয়ানদের গ্রাম হিসাবে পরিচিত ৷ গ্রামের বর্তমান প্রজন্ম সেই সামরিক ঐতিহ্য আজও অব্যাহত রেখেছেন। প্রায় 400 পরিবারের বাস এই গ্রামে ৷ প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে একজন সেনা রয়েছেন ৷
ইতিহাস ফিসফিস কথা বলে
1857 সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নিয়েছিল কোলাপুর ৷ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চিমাসাহেব মহারাজ। 15 ডিসেম্বর মহারাজের নেতৃত্বে কোলাপুরে বিদ্রোহ শুরু হয় ৷ সংগ্রাম পাঁচ মাস স্থায়ী হয়েছিল। এই সময়ে, অত্যাচারী ব্রিটিশরা চিমাসাহেব মহারাজকে ভবানী মণ্ডপে বন্দী করে রাখে। ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে এবং চিমাসাহেব মহারাজকে মুক্ত করতে কোলাপুরের করবীর তালুকার গিরগাঁও থেকে ফিরঙ্গোজি শিন্দে 500 জনের একটি দল নিয়ে কোলাপুরে যান ৷ তাঁরা ব্রিটিশ সেনাদের সঙ্গে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেন। তবে, দুর্ভাগ্যবশত, এই সংগ্রামে ফিরঙ্গোজি শিন্ডের মৃত্যু হয় ৷ অন্যদিকে, ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে, গ্রাম থেকে বিট্রিশের বিরুদ্ধে হওয়া বিদ্রোহে অনেকে অংশ নিয়েছিলেন বলে অতীতে এই গ্রামটি “বিদ্রোহী গিরগাঁও” নামে পরিচিত ছিল। শহিদ ফিরঙ্গোজি শিন্ডের স্মৃতিতে গ্রামে একটি স্মৃতিস্তম্ভও তৈরি করা হয়েছিল। সেই থেকে এই গ্রামের একটি সামরিক ঐতিহ্য রয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার বাসিন্দা সেনাবাহিনী, নৌ-বাহিনী এবং বায়ুসেনায় নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন ৷
গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের কী অবস্থা ?
এ প্রজন্মের 239 জন সদস্য সেনাবাহিনীর অংশ। এর মধ্যে 18 জন মহিলা। গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন সেনাকর্মী গণপতি পাওয়ারের চার প্রজন্ম সেনাবাহিনীতে ছিলেন। তাঁর চার ভাইও সেনাবাহিনীতে চাকরি করেছেন ৷ এখন তাঁদের সন্তানরাও সেনাবাহিনীতে কর্মরত। প্রাক্তন সেনাকর্মী নামদেও পাতিল জানান, সামরিক মর্যাদার কারণে তাঁরা সেনাবাহিনীতে বিশেষ সম্মানও পেয়েছেন। করোনার সময় গ্রামবাসীদের জন্য গ্রামে একটি ‘করোনা কেয়ার সেন্টার’ স্থাপন করা হয়েছিল। গ্রামের প্রাক্তন এবং বর্তমান সেনা জওয়ানরা উদারভাবে এই করোনা কেয়ার সেন্টারকে নানাভাবে সাহায্য করেছিলেন। অক্সিজেন প্ল্যান্টের জন্য কোনও সরকারি সাহায্য বা রাজনৈতিক নেতার অপেক্ষা না করেই সেনা জওয়ানরাই গ্রামের করোনা কেয়ার সেন্টারে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
সিপাহি বিদ্রোহ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
প্রাক্তন সেনা জওয়ান রঘুনাথ পাতিল জানিয়েছেন, সৈনিক গ্রামে দেড় শতাব্দীর সামরিক ঐতিহ্য রয়েছে। অনেক বইতে 1857 সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সৈনিকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি 1971 সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে গ্রামের সন্তান বাসুদেব সান্তরাম যাদব, ধোন্ডিরাম সান্তরাম যাদব, গণপতি রঘু চবন অংশ নিয়েছিলেন ৷ কর্তব্যরত অবস্থায় তাঁদের কয়েকজনের মৃত্যুও হয় ৷ নিহত সেনা জওয়ানদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়েছে গ্রামে। পাশাপাশি এই গ্রামের বাসিন্দা ঋতুজা লক্ষ্মণ সৌদালকার, নিকিতা কেরবা সুতার, ময়ূরী সত্তাপ্পা পাওয়ার এবং পূজা কদমের মতো মেয়েরা সেনাবাহিনীতে যোগদানের মধ্য দিয়ে দেশের সেবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন ৷ অন্যদিকে, অনিকেত পাতিল সেনাবাহিনীতে যোগদান এবং গ্রামের ঐতিহ্য অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আরও পড়ুন:- আর ২৫ বছর বাঁচতে পারলেই অমর হয়ে যাবে মানুষ ? গবেষণায় চাঞ্চল্য