Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ১৯৮৩ থেকে ২০২৫। ৪২ বছর কেটে গিয়েছে, কেউ কথা রাখেনি। বাম জমানা পেরিয়ে এসেছে ডান। অথচ ঘাটাল আছে সেই ঘাটালেই। ফি বছর বন্যায় বাণভাসী হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের এই এলাকা। তা সত্ত্বেও অথৈ জলে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’। জল-যুদ্ধে জেরবার সাধারণ মানুষ। ভেসে গিয়েছে বাড়ি-ঘর। বুক জলে চলছে নিত্য যাতায়াত। আর তার মাঝেই চলছে রাজনৈতিক তরজা। নতুন সংযোজন হয়েছে মিম। ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন হিট কনটেন্ট। তাই ঘাটালবাসীর যন্ত্রণা এখন ইনফ্লুয়েন্সার এবং মিম মেকারদের কাছে ‘ট্রেন্ডিং’।
মিমের ছড়াছড়ি
দু’দিন আগেই সুইমিং পুলে সুঠাম চেহারার দেবের ছবি দেখে মুগ্ধ ছিল নেটপাড়া। ঘাটাল বাণভাসী হতেই তাঁকে ঘিরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা। তৃণমূল সাংসদের ছবি নিয়ে তৈরি হচ্ছে দেদার মিম। অথৈ জলে থাকা ঘাটালের পরিস্থিতি নিয়ে অভিনেতা-সাংসদকে কটাক্ষ চলছে ফেসবুক-ইনস্টায়।
রাজনৈতিক তরজা
ফি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের বিস্তীর্ণ এলাকা। শিলাবতী, ঝুমি ও কংসাবতী নদীর জল বাড়লে ঘাটাল মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে থাকে। রূপনারায়ণ দিয়ে সেই জল বেরিয়ে গেলে সমস্যা কাটে। কিন্তু, তা না হওয়ায় এলাকাবাসী দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন। জলের তলায় চলে যায় রাস্তাঘাট। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন মানুষ। বিষধর সাপের আনাগোনা বাড়ে। এর পাশাপাশি এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেয়।
এবছরও চিত্রটা একইরকম। বর্ষার শুরুতেই ভেসেছে ঘাটাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের একের পর এক গ্রাম। জলবন্দি প্রায় লক্ষাধিক মানুষ।
দেবের বিবৃতি
ঘাটাল মহকুমার ১০৮টি ওয়ার্ড ও অঞ্চলের পরিস্থিতি বেশ ভয়ঙ্কর। ঘাটাল ও চন্দ্রকোনার ২টি ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৩০টি ত্রাণ শিবির চলছে। আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় হাজার খানেক বাসিন্দা। বন্যা পরিস্থিতিতে ক্ষোভ জমেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সমলাচনা বিরোধীদের তরফেও। সাধারণের ক্ষোভের কথা মেনেও নিয়েছেন দেব। তাঁর কথায়, ‘এই দুর্যোগের সময় সরকার এবং প্রশাসন আপনাদের পাশে সব সময় আছে।’ দেব বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি ২০২৫ থেকে কাজ শুরু হয়েছে। এই মাস্টার প্ল্যানের মাধ্যমে নদীর ড্রেজিং থেকে শুরু করে বাঁধ, ব্রিজ, খাল কাটা, খালের সংস্করণ, কৃত্রিম নদী তৈরি করা, জমি অধিগ্রহণ সবই রয়েছে। যার সময়সীমা কমপক্ষে ৪-৫ বছর।’
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান
১৯৮৩ সাল। ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’ প্রকল্পের শিলন্যাস করেন রাজ্যের তৎকালীন সেচ মন্ত্রী প্রভাস রায়। তবে আচমকা থমকে যায় কাজ। ১৯৯৩ সালে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি গঠন করেন ঘাটালের বাসিন্দারা। তাতেও অবশ্য কাজের কাজ কিচ্ছু হয়নি। ২০০৯ সালে প্রকল্প পুনর্মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য। ডিটেলস প্রোজেক্ট রিপোর্ট তৈরি শুরু হয়। ২০১০ সালে গঙ্গা ফ্লাড কন্ট্রোল কমিশনে প্রকল্পের ডিপিআর-ও জমা পড়ে। তার পরের বছরই মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য চেয়ে ডিপিআর ফেরত পাঠায় কেন্দ্র। ২০১৫ সালে প্রকল্প রিপোর্টে সবুজ সংকেত দেয় কেন্দ্র। ৩৪ বছরের বাম শাসন, ১০ বছরের তৃণমূল সরকার, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়িত হয়নি।
প্রাথমিক ভাবে প্রকল্পের বাজেট ছিল ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। যা পরবর্তীতে কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। এই নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রের টানাপোড়েন এখনও জারি।
গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান’-এর ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেটাকেই প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করে লোকসভা ভোটে তৃতীয় বার জিতে ঘাটালের সাংসদ হন তৃণমূলের তারকাপ্রার্থী দেব। ২০২৪-এ রাজ্য সরকার ক তৃতীয়াংশ বাজেটও (৫০০ কোটি) বরাদ্দ করে। ২০২৫–এর ফেব্রুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়। কিন্তু, বর্ষা আসতে না আসতেই বাণভাসী ঘাটাস। আর তাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষোভের মুখে পড়েছেন দেব। ঘাটালবাসীকে আশ্বস্ত করে সমালোচনার মুখে পড়ে করা দেবের পোস্টেও দেদার মিমের ছড়াছড়ি।
আরও পড়ুন:- কি কান্ড! হোটেল রুমের ‘ঘনিষ্ঠ’ মুহূর্ত মোবাইলবন্দি করতে মানুষের হুড়োহুড়ি ফ্লাইওভারে।