Bangla News Dunia, Pallab : ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ (Iran-Israel Conflict) চতুর্থ দিনে পড়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে ইজরায়েল অপারেশন ‘রাইজ়িং লায়ন’ শুরু করে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র লক্ষ্য করে হামলা চালায়। হামলায় মৃত্যু হয়েছে ইরানের চার শীর্ষ সেনাকর্তা এবং ছ’জন পরমাণু বিজ্ঞানীর (যদিও ইজরায়েলের দাবি ৯ জন পরমাণু বিজ্ঞানির মৃত্যু হয়েছে)। নিহত হয়েছেন ইরানের সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল মহম্মদ বাগেরি। মারা গিয়েছেন রেভলিউশনারি গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামিও। এছাড়াও ইজরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে শুক্রবার জুম্মার নমাজের পরে ইরান জামকারান মসজিদের চূড়ায় লাল পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিল। লাল পতাকা উড়তেই যুদ্ধের আভাস মিলে গিয়েছিল। সেই মতো শনিবার ইজ়রায়েলে প্রত্যাঘাত করে ইরান। ইজরায়েলের বহু প্রচারিত আয়রন ডোম ভেদ করে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে পড়ে ইজ়রায়েলের রাজধানী তেল আভিভে। ইজ়রায়েলের অপারেশন ‘রাইজ়িং লায়ন’-এর পাল্টা ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস ৩’ শুরু করে দেয় ইরান। যার জেরে ইজরায়েলে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। শুক্র, শনির পর রবিবারও আঘাত প্রত্যাঘাত চলেছে দু’পক্ষের মধ্যে।
আরও পড়ুন : সপ্তাহে ৪ দিনের কাজ ও ৩ দিনের ছুটি ! নতুন বিলের সম্ভাবনা
এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ইরানকে শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি ইরানে রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তনও ইজরায়েলের লক্ষ্য বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। ইরানের সর্বোচ্চ শাসক আয়াতোল্লাহ আলি খামেনেইয়ের (Ali Khamenei) বিরুদ্ধে অস্থিরতা বাড়িয়ে তেহরানে শাসন পরিবর্তনের আশা করছে ইজরায়েল। পর্যবেক্ষকদের মতে ইরানের বর্তমান শাসকের বিরুদ্ধে জনগনের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। বেহাল অর্থনীতি, বাক স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ, নারী অধিকার এবং সংখ্যালঘু অধিকার নিয়ে হতাশ অনেকেই। যার সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে ২০২২ সালে সঠিকভাবে হিজাব না পরার কারণে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর। ইজরায়েল সামরিক দমনপীড়নের মাধ্যমে বিক্ষোভকে সাময়িক ভাবে ধামাচাপা দিতে পারলেও মানুষের ক্ষোভের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলছেই। হামলার প্রথমেই ইজরায়েল এক ধাক্কায় ইরানের সামরিক নেতৃত্বকে শেষ করে দিতে পেরেছে। পরমাণু বিজ্ঞানিদের হত্যা ইরানের পরমাণু শক্তিধর হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে। বিবিসির মতো সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, ‘ইজরায়েলের আক্রমণ ইরানের নেতৃত্বের কাছে প্রকৃতপক্ষেই হুমকিস্বরূপ। যা শেষ পর্যন্ত খামেনেইয়ের পতনকে নিশ্চিত করতে পারে। ’
ইজরায়েলের এই কৌশল দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফসল বলে মনে করা হচ্ছে। ইরানে সরাসরি হামলা চালানোর আগে তার সহযোগীদের বিভিন্ন ভাবে হামলা করে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে লাগাতার গাজায় হামলা চালিয়ে হামাসের কোমড় ভেঙে দেওয়া হয়েছে। হামাস এখন এতটাই দুর্বল, যে সামান্যতম প্রত্যাঘাত করার ক্ষমতাও তারা হারিয়েছে।
একই ভাবে ইজরায়েল লেবানন-ভিত্তিক হেজবোল্লা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেও আক্রমণ শুরু করেছে, এর সম্পূর্ণ নেতৃত্ব এবং তাদের বেশিরভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। হামাস এবং হেজবোল্লাকে ঘিরেই মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ কাজ করত। ফলে হামাস ও হেজবোল্লার দুর্বল হয়ে যাওয়া ইরানের জন্য বড় ধাক্কা। এরই সঙ্গে সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের সাহায্য করে ইরান ঘনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করাও ইজরায়েলের পরিকল্পনারই অংশ। এতে ইরান ও সিরিয়ার মধ্যে কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের অবসান ঘটে। এর ফলে ইসরায়েল কৌশলগত গোলান হাইটস আক্রমণ এবং দখল করতে সক্ষম হয়, যার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ দুর্বল হয়ে পড়ে। এবং ক্রমশ তেহরানের উপর চাপসৃষ্টি হতে থাকে।
কট্টরপন্থী ইসলামী ধর্মগুরু এবং কিছু অনির্বাচিত সংস্থা ইরানের অর্থনীতি এবং সামরিক বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। ইজরায়েল আশা করছে যে তাদের অবিরাম আক্রমণ সরকারকে অস্থির করে তুলবে এবং একটি গণবিদ্রোহের পথ প্রশস্ত হবে। কিন্তু খামেনেইয়ের অপসারনের পর বিকল্প মুখ কে হতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।