চালের দাম বৃদ্ধিতে মাথায় হাত মধ্যবিত্তের, কারণ কি ফড়ে-রাজ ?

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি । ভাত ছাড়া বাঙালির চলে না । ফলে কমবেশি প্রতিটা পরিবারেই অন্যান্য জিনিসের চেয়ে চালের খরচ বেশি । অথচ গত কয়েকদিনে সেই চালের দাম কেজি প্রতি একধাক্কায় 10-25 টাকা বেড়ে গিয়েছে । পরিস্থিতি এমনই যে, যে কৃষক বস্তা প্রতি ধান বিক্রি করেছিলেন 800-1000 টাকায় (এক বস্তায় 26 কেজি ধান) সেই কৃষককে আজ চাল কিনতে হচ্ছে 60-62 টাকায় । শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরবঙ্গের ছবিটাও প্রায় একই রকম । উত্তরবঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলি । পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য টাস্ক ফোর্স নামানো হয়েছে ।

ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে পূর্ব বর্ধমানে রত্না চালের দাম ছিল 40 টাকার আশেপাশে । সেই চালের দাম 50 টাকা । লাল স্বর্ণ চালের দাম 37 টাকা । মিনিকিট চালের দাম যেখানে মাস দুয়েক আগে ছিল 40-42 টাকার আশেপাশে ছিল ৷ সেই চালের দাম আজ 60-62 টাকায় ঘোরাফেরা করছে ।

চাল ব্যবসায়ীদের মতে, ধানের উৎপাদন কমার ফলেই চালের দাম বেড়েছে । মাসখানেক পরে বাজারে নতুন চাল এলে দাম কিছুটা কমতে পারে । তবে কয়েকদিনে যেভাবে চালের দাম একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে, তাতে খদ্দেরদের জবাব দিতে সমস্যায় পড়ে গিয়েছেন তাঁরা । সেক্ষেত্রে তাঁরা অনেকে মিনিকিট চালের জায়গায় রত্না কিংবা আইআর-36 চাল কিনে বাড়ি ফিরছেন ।

আরও পড়ুন:- রাজ্যে অষ্টম শ্রেণী পাশে প্রচুর পদে চাকরি। নূন্যতম মাসিক বেতন 12,000 টাকা। বিস্তারিত দেখে নিন

এদিকে হঠাৎ করে চালের দাম বাড়তে থাকায় কেন চালের দাম বাড়ছে, সেটা খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করে জেলা প্রশাসন। টাস্ক ফোর্স গঠন করে তাদের সদস্যরা খাদ্য দফতর থেকে রাইসমিলের গোডাউনে তল্লাশি চালানো হয়। তারা পাইকারি ব্যবসাদার থেকে খুচরো সব ধরনের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে চালান দেখে দামের তারতম্য খোঁজার চেষ্টা করেন । কেজি প্রতি কত টাকা লাভ রাখছেন, তা খতিয়ে দেখা হয় ।

High Price of Rice

চালের দাম বৃদ্ধিতে মাথায় হাত মধ্যবিত্তের, কারণ কি ফড়ে-রাজ! (নিজস্ব ছবি)

 

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দেড় মাসে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে মিনিকিট চালের দাম । কেজি প্রতি দাম বেড়েছে আট থেকে দশ টাকা । দাম বেড়েছে লাল স্বর্ণ চালেরও । ফলে সাধারণ মানুষ সমস্যার মধ্যে পড়েছেন । এছাড়া পাল্লা দিয়ে দাম বেড়েছে বাঁশকাটি ও গোবিন্দভোগ চালেরও ।

তবে চাল ব্যবসায়ী থেকে রাইস মিল সংগঠন সকলেই একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন কিছুদিন আগে পর্যন্ত সাধারণ মানুষ স্বর্ণ চালের ভাত খেতেই অভ্যস্থ ছিলেন । কিন্তু দিনে দিনে দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ মানুষ মিনিকিট চালের ভাত খেতে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছেন । শুধু তাই নয়, রেশনের চাল বিক্রি করে সেই টাকা দিয়ে অনেকে মিনিকিট চাল কিনছেন ।

জেলা খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মরশুমে রাজ্যে ধান উৎপাদন ভালো হয়েছিল । এছাড়া আগে বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণ চাল রফতানি করা হতো । এখন সেই তুলনায় অনেক কম পরিমাণ চাল বাংলাদেশে যাচ্ছে । ফলে এইভাবে দাম বেড়ে যাওয়ার কোনও কারণ নেই । তাহলে কি চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করার পিছনে ফড়েদের ভূমিকা রয়েছে ? সেটাও খাদ্য দফতর খতিয়ে দেখছে ৷

তবে চাষিদের মতে চালের দাম বাড়লেও চাষিরা কিন্তু ধানের দাম পাননি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ধান চাষে ক্ষতির মুখে পড়তে হয় কৃষকদের। কৃষক তাদের ধান আড়তদারের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছে । তাই কৃষকের হাতে এখন কোনও ধান নেই । ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা নিয়েছে মিল মালিকদের হাতে । কৃষকদের হাতে ধান থাকলে খোলা বাজারে একটা প্রতিযোগিতা তৈরি হতো। ফলে বাজারে এত দাম দিয়ে চাল কিনতে হতো না ।

 

ধানচাষি সন্তু কুমার সর বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রচুর ধান নষ্ট হয়ে যায় ৷ ফলে উৎপাদন কম হয়েছে এখন আর কোনও চাষির হাতে ধান নেই ৷ বিভিন্ন রাইস মিল চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনে নিয়ে, তা মজুত করে রেখে দেয় ৷ চাষিরা ধানের দাম পাননি । প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরে চাষিরা যে ধান কাটতে পেরেছিল, সেই লাল স্বর্ণ ধানের দাম যায় বস্তা প্রতি 800-1150 টাকার মধ্যে । ধান এখন সব মিলারের হাতে । ফলে দাম নিয়ন্ত্রণ তারাই করছেন । আমরা বাজার থেকে 60-62 টাকা কেজি দরে চাল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছি ।’’

চাল বিক্রেতা আশিস দাঁ বলেন, ‘‘গত দু’মাসে চালের দাম একলাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে । বিশেষ করে বেড়ে মিনিকিট, বাঁশকাটি, গোবিন্দভোগ চালের দাম । মানুষের মধ্যে মিনিকিট চালের ভাত খাওয়ার প্রবণতা অনেকটা বেড়েছে । তবে চাহিদা বাড়লেও চালের যোগান নেই । ধান পাওয়া যাচ্ছে না । ধানের অবস্থা খুব খারাপ । আসলে মিনিকিট ধান প্রচুর পরিমাণে রফতানি করা হয়েছে ।’’

 

তিনি আরও বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের জেরে স্বর্ণ ধান নষ্ট হয়ে যায় ফলে স্বর্ণ চাল রফতানি করা যায়নি । সেই সময় মিনিকিট চালের দাম কম থাকায় মিনিকিট চাল রফতানি করা হয় । ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে মিনিকিট চালের দাম অনেকটা কম ছিল । এখন সেই দাম এক লাফে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে । অন্যান্য সময় মিলের তুলনায় হাঁসকিনের দাম বেশি থাকে ৷’’

আশিস দাঁ আরও বলেন, ‘‘কিন্তু এখন বড় বড় মিলগুলো ধান না পাওয়ায় মিনিকিট চালের দাম তুলনামূলক বেশি । এবছর বৈশাখ মাসের শেষের দিকে যদি ধান ভালো করে ওঠে, তাহলে আবার মিনিকিট চালের দাম অনেকটাই কমে যাবে । বোরো ধান নতুন করে না ওঠা পর্যন্ত চালের দাম কমার সম্ভাবনা কম ।’’

উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলাতে চালের দাম কমানো-সহ একাধিক দাবিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার তরফে জলপাইগুড়ি 73 মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানো হয় । সংগঠনের নেতা গোবিন্দ রায়, সমিজুদ্দিন মহম্মদ থেকে শুভায়ু বল সকলেই দাবি জানিয়েছেন, যাতে চালের দাম কমানোর জন্য সরকার তৎপর হয় । তাঁদের মতে, যেভাবে দিনে দিনে চালের দাম বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে । অথচ সরকার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না ।

বর্ধমান ডিস্ট্রিক্ট রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘এখন আর চাষিকে অভাবী বিক্রি করতে হয় না । রেশনের দোকানের মোটা চাল কেউ খাচ্ছেন না বেশিরভাগ মানুষ ৷ এখন মিনিকিট চালের ভাত খেতেই অভ্যস্থ । ফলে মিনিকিট চালের চাহিদা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে । সেই তুলনায় যোগান কম থাকায় দাম বাড়ছে । এদিকে চাষিরাও দেখছে বৈশাখ মাসের আগে তো মিনিকিট ধান উঠবে না । ফলে তারা ধান ধরে রাখছে ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এছাড়া সাধারণ মানুষ পুরনো চালের ভাত খেতে বেশি পছন্দ করে । ফলে নতুন চাল উঠলেও আগ্রহ কিছুটা কম থাকে । ফলে চাষিরাও ধান আটকে রাখছে । এখন চাষিকে অভাবী বিক্রি করতে হয় না । ফলে তারা ধানকে ধরে রাখতে পারছে । এই কারণে যোগান কম থাকায় চালের দাম বাড়ছে ।’’

পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েষা রানি এ বলেন, ‘‘চালের দাম কেন বাড়ছে টাস্ক ফোর্স বিষয়টি দেখছে । পরিকল্পনামাফিক যদি কেউ চালের দাম বাড়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’’

আরও পড়ুন:- দেদার AC চালিয়েও বিল কম আসবে, জেনে নিন সিক্রেট টিপস

আরও পড়ুন:- চিনকে ধাক্কা দিতে অস্ট্রেলিয়া আর আফ্রিকাতে এই জিনিসের খোঁজ চালাচ্ছে ভারত, জানতে বিস্তারিত পড়ুন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন