Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের গারমেন্ট সেক্টর নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর ৩৫ শতাংশের বিশাল শুল্ক আরোপ করেছে। বাংলাদেশের উপর এত উচ্চ শুল্ক আরোপের ফলে, তৈরি পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে ইউনূসের দেশকে বিশ্ব বাজারে আরও প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে।
৩ মাস ধরে আলোচনার পর বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার নিজের ট্রুথ অ্যাকাউন্টে এই ঘোষণা করেছেন তিনি। গত ৩ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। সে সময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এর আগে আমেরিকায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ করে শুল্ক ছিল।
ইউনূসকে ট্রাম্পের চিঠি
সোমবার বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণের ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হতে চলায় ট্রাম্প এই ঘোষণা করেন। এর আগে ৯ জুলাই থেকে শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও সেটি পিছিয়ে ১ অগাস্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহম্মদ ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেছেন, ‘২০২৫ সালের ১ অগাস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো সব বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক বসবে। এটি খাতভিত্তিক শুল্কের সঙ্গে আলাদাভাবে যোগ হবে। উচ্চ শুল্ক এড়াতে যদি কোনও পণ্য ঘুরপথে যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তাহলে সেই পণ্যের ওপরও উচ্চ শুল্কই আরোপ করা হবে।’
আরও পড়ুন:- ৯ জুলাই বামেদের বনধ, তার আগে সরকারি কর্মীদের বড় নির্দেশ নবান্ন থেকে ।
সংকটে বাংলাদেশ
এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ায় এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে। তাতে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক, কারণ যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রধান রফতানি গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র, যেখানে তৈরি পোশাক খাতের পণ্যই সর্বাধিক প্রাধান্য পায়। এই মুহূর্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা রফতানি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক ভয়াবহ সংকেত। বছরে প্রায় ৮৪০ কোটি ডলারের পণ্য আমেরিকায় রফতানি করে বাংলাদেশ, যার মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই গার্মেন্টস পণ্য। যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক আরোপের ফলে এই বিপুল পরিমাণ রফতানি হুমকির মুখে পড়বে। দেশটির আমদানিকারকেরা যদি শুল্কের কারণে বিকল্প উৎস বেছে নেয়—যেমন ভারত, ভিয়েতনাম বা লাতিন আমেরিকা—তবে বাংলাদেশের রফতানি বাজারে বড় ধরনের ধস নামবে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাক শিল্পে নিয়োজিত লাখো শ্রমিকের কর্মসংস্থান অনিশ্চয়তায় পড়বে। অনেকে বলছেন, ইতোমধ্যে কিছু ক্রেতা আগাম অর্ডার স্থগিত করতে শুরু করেছেন। এতে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ঝুঁকি নয়, সামাজিক স্থিতিশীলতাও হুমকির মুখে পড়বে।
আশার আলো ভারতের
বাংলাদেশের জন্য এটি নিছক একটি বাণিজ্য সংকট নয়, এটি কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য, এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ওপর সরাসরি আঘাত। এদিকে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের পর মঙ্গলবার ভারতের টেক্সটাইল কোম্পানিগুলির শেয়ারের দাম ৮ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। গোকালদাস এক্সপোর্টসের শেয়ারের দাম ৭.৮ শতাংশ বেড়ে ৯৭০ টাকা, কেপিআর মিলস ২ শতাংশ বেড়ে ১,১৮১.৩ টাকা, বর্ধমান টেক্সটাইলস ৭.৪ শতাংশ বেড়ে ৫৩৫.৭৫ টাকা এবং ওয়েলস্পান লিভিং এর শেয়ারের দাম ২ শতাংশ বেড়ে ১৪৫.৬৫ টাকা হয়েছে। প্রসঙ্গত আমেরিকার পোশাক বাজারে ভিয়েতনামের ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এবং ভারতের ৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
ভারত পোশাক তৈরির জন্য একটি নির্ভরযোগ্য দেশ হিসেবে ক্রমেই সামনে আসছে। আমেরিকান কোম্পানিগুলি ভারতের রাজনৈতিক পরিবেশকে স্থিতিশীল বলে মনে করে। তারা এখান থেকে পোশাক অর্ডার করা সুবিধাজনক বলে মনে করে। ভারত থেকে বেশিরভাগ সুতির পোশাক আমেরিকায় যায়। তবে, দেশে ক্রমবর্ধমান শ্রম ব্যয়, ছোট কারখানা এবং ব্যয়বহুল পরিবহন এখনও উদ্বেগের বিষয়। আমেরিকা এখন ভারত থেকে পোশাক কিনতে পছন্দ করছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে আমেরিকান কোম্পানিগুলি ভারতের দিকে ঝুঁকছে। ভারতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে উৎপাদন এবং সরবরাহ চেইন মসৃণ। আমেরিকান ক্রেতারা ভারতকে নির্ভরযোগ্য বলেও মনে করেন।
চিনের অংশ হ্রাস পাচ্ছে
মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিশন (ITC) তাদের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলির কথা উল্লেখ করেছে। গত কয়েক বছরে এই সমস্ত দেশ চিনকে ছাড়িয়ে গেছে এবং আমেরিকার কাছে পোশাক বিক্রিতে এগিয়ে গেছে। বিশেষ বিষয় হল, ২০১৩ সালে আমেরিকা যত পোশাক আমদানি করেছিল তার ৩৭.৭% চিন থেকে এসেছিল। কিন্তু, ২০২৩ সালে এই সংখ্যা কমে ২১.৩% হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে, ভারতের অংশ ৪% থেকে বেড়ে ৫.৮% হয়েছে। ২০২৩ সালে, ভারত আমেরিকায় ৪.৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাক রফতানি করেছে। এর অর্থ হল আমেরিকা ভারতীয় পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হয়ে উঠেছে। তবে, ভিয়েতনাম সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে। গত দশকে ভিয়েতনাম তার অংশ ১০% থেকে বাড়িয়ে ১৭.৮% করেছে।
আমেরিকান কোম্পানিগুলি ভারত থেকে পোশাক কিনছে
আমেরিকান কোম্পানিগুলি এখন বাংলাদেশ বা অন্য কোনও এশিয়ান দেশের তুলনায় ভারত থেকে পোশাক কিনতে বেশি পছন্দ করছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এর প্রধান কারণ। USITC রিপোর্টে বলা হয়েছে যে সুতির পোশাকের ক্ষেত্রে ভারত অনেক এগিয়ে। এর কারণ হল ভারতে কাঁচামালের প্রাপ্যতা। অর্থাৎ, সুতো থেকে কাপড় তৈরি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়াটি এখানেই সম্পন্ন হয়। এই কারণে, আমেরিকান কোম্পানিগুলি ভারতকে একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী বলে মনে করে। ভারত যত পোশাক রফতানি করে তার এক-তৃতীয়াংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যায়। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের চতুর্থ বৃহত্তম সরবরাহকারী। তবে, ভারতকে শ্রম খরচ, উৎপাদন ক্ষমতা এবং উৎপাদিত ফাইবার (MMF) থেকে তৈরি পণ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করতে হবে। তবেই এটি রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন:- মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ পুরুষদের থেকে অনেকটাই ভিন্ন, জেনে রাখা দরকার