Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ক্রমবর্ধমান ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা মোকাবিলায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এবার রাজ্যজুড়ে জোর দেওয়া হচ্ছে কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যুক্ত ধান চাষে, যা ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে প্রমাণিত। পঞ্চায়েত দফতরের অধীনস্থ ওয়েস্ট বেঙ্গল কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (WBCADC) এবং বাঁকুড়ার ধান গবেষণা কেন্দ্র যৌথভাবে এমন কিছু ধানের জাত চিহ্নিত করছে, যেগুলির জিআই কম এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
উদ্যোগ এবং প্রশিক্ষণ:
WBCADC-এর বোর্ড অব ডিরেক্টরসের সদস্য শুভাশিস বটব্যাল জানিয়েছেন, তাঁরা কটকের ন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটে চিঠি পাঠিয়েছেন এবং কম GI যুক্ত চার-পাঁচটি ধানের জাতের বীজ সরবরাহের অনুরোধ করেছেন। একই সঙ্গে, কৃষকদের এই বিশেষ ধান চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বাঁকুড়ার সোনামুখী ব্লকের নচনহাটি গ্রামে একটি তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। বাঁকুড়ার ধান গবেষণা কেন্দ্রের যুগ্ম অধিকর্তা চন্দন ভুঁইয়ার নেতৃত্বে কৃষকদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণে জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ উৎপাদন, বপন, পরিচর্যা এবং ধান সংগ্রহের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া হাতে-কলমে শেখানো হয়, যাতে ফসল রোগমুক্ত থাকে।
মাটির স্বাস্থ্য ও উন্নত জাত:
প্রশিক্ষণে মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা, প্রয়োজন অনুযায়ী জীবাণু দমন এবং প্রয়োজনীয় মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস যোগ করার বিষয়েও বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়ায় ইতিমধ্যেই সাতটি ধানের জাত সফলভাবে উৎপাদিত হয়েছে – ধীরেন, ধ্রুব, সম্প্রীতি, পুষ্পা, অজিত, এমটিইউ 7029 এবং এমটিইউ 1153। এই জাতগুলি শুষ্ক জলবায়ুর উপযোগী এবং তুলনামূলকভাবে কম জলেই চাষ করা সম্ভব। প্রতিটি জাতই বিভিন্ন মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টে সমৃদ্ধ। উদাহরণস্বরূপ, ‘সম্প্রীতি’ ধানে প্রচুর পরিমাণে লোহা ও জিঙ্ক রয়েছে, যা রক্তাল্পতায় ভোগা গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী ৷
সোনামুখী কম্প্রিহেনসিভ এরিয়া ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান শুভাশিস বটব্যাল বলেন, “আমরা এই বিশেষ ধানের জাতগুলিকে ব্যাপক হারে চাষে ব্যবহার করতে চাই। সোনামুখীতে এ বছর 400 মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।”
সোনামুখী: ‘ভাত ঘর’ থেকে নতুন মাইলফলক- উল্লেখ্য, ‘ভাত ঘর’ নামে পরিচিত সোনামুখী ইতিমধ্যেই বছরে 300 মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের নজির গড়েছে। এর পাশাপাশি, সরিষা ও বাজরার উৎপাদনেও এই অঞ্চল রাজ্যে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে।
কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ধানের চাষের মাধ্যমে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের খাদ্যাভ্যাসে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এই উদ্যোগ সফল করার জন্য প্রশাসন তৎপর।
আরও পড়ুন:- পুরীর জগন্নাথ মন্দিরেই চৈতন্য দেবকে খুন করা হয়েছিল? উঠে এল রোমহর্ষক তথ্য