ডিজিটাল থ্রেট ! এই সময়ে মানসিকভাবে কীভাবে সামলে ওঠা যায়, টিপস দিলেন জিনিয়া

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- যদিও শারীরিক অন্যান্য সমস্যার মতো মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হলে সঠিক কাউন্সেলিং ও চিকিৎসায় পুরোপুরি আরোগ্য লাভ করা যায় । কিন্তু শারীরিক বেদনার মতো জটিলতা তৈরি না-হওয়ায় অনেকেই বুঝতে পারেন না, কখন আসলে তাদের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত । মানসিক, পারিবারিক বা সামাজিক নানা ট্যাবুও এক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

ডিপ্রেসন একটা ভয়ংকর জিনিস ৷ কী থেকে হচ্ছে আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না ৷ বর্তমান যুগে এআই ও সোশাল মিডিয়ার ব্যবহার এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, মানুষের যে কোনও আকারে ছবি নিমেষেই ভাইরাল হচ্ছে ৷ একজন মহিলার যদি কখনও অর্ধনগ্ন ছবি ভাইরাল হয়, এর পরের পরিস্থিতি এক বড় মানসিক রোগের আকার ধারণ করছে বলে জানাচ্ছেন মনোবিদরা ৷

গত জানুয়ারির ঘটনা । সোশাল মিডিয়া চর্চার বিষয়বস্তু থেকে সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী জিনিয়া সেন । অভিযোগ ছিল, দেব অনুরাগীদের কুরুচিকর আক্রমণের শিকার পরিচালক-প্রযোজক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় । প্রতিবাদ করলে অশালীন আক্রমণের মুখে পড়তে হয় শিবপ্রসাদের স্ত্রী জিনিয়া সেনকেও । এখানেই শেষ নয়, কুরুচিকর মিম থেকে শুরু করে অশ্লীল মন্তব্যও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হয় । এই ছবি ভাইরাললের পর তাঁর মনের অবস্থা কেমন ছিল ?

এই ছবি ভাইরাল হওয়ার পর আপনার মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল ?

জিনিয়া সেন বলেন, “আমি বলতে চাই আমার যে প্রথম রিয়াকসন আমি ভীষণ রেগে গিয়েছিলাম ৷ এর থেকেও বেশি আমি লজ্জিত হয়েছিলাম যে আমার ছবি লোকে শেয়ার করছে ৷ আমি এবং আমার পরিবারের লোকজন ভীষণ প্রাইভেট পিপল ৷ যেমন আমি সি-বিচে গিয়েছি ফলে আমি বিকিনি পরেছি সেই বিকিনির ছবি তো আমি দেব না ৷ সেটা আমার ভীষণ একটা ব্যক্তিগত জায়গা ৷ এই ছবিগুলি যখন বিকৃত করে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয় তখন একটা বাজে ব্যাপার ৷ এতটাই রাগ হয়েছে, যদি সেই লোকটাকে সামনে পাই কী করব জানি না ৷ আমি নিজে জানি না কীভাবে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করব ৷

তবে আজকের দিনে এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ যে কোনও মেয়ের সঙ্গে যখনতখন কিছু হতে পারে ৷ যেমন- এখানে ঘটে যাওয়া রেপ কেসের কিনারা হয়নি তখন অন্য মেয়ের ছবি ভাইরাল হচ্ছে সেটা একই মানসিকতার প্রতিফলন ৷ এই বিকৃত মানসিকতার মানুষ একটা নেকেড মহিলার ছবি দেখতে চায় ৷ আমি সিদ্ধান্ত নিই এই অন্যায় মেনে নেব না, আমি সাইবারে ও থানাতে কেস করি সেটা এখনও চলছে ৷ কিছুদিন আগে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন সেখানে আমার মন্তব্য দিয়েছি ৷ তবে যে কোনও কেউ যা খুশি করবে আমি ইগনোর করব, আমি সেই মানুষ নয় ৷ ফলে কেউ যদি সোশাল মিডিয়ায় অর্ধনগ্ন ছবি ভাইরাল করে, তবে আমিও শাস্তি দেব ৷”

আজ আপনার কাল অন্যদের হতে পারে, মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে কী টিপস দেবেন সাধারণ মানুষকে ?

তিনি বলেন, “এরপরও আমার পরিচিত এইরকম হয়েছে ৷ কঞ্চন মল্লিকের স্ত্রী শ্রময়ী ৷ তাঁকে নিয়ে যখন প্রচুর ট্রোলিং সেক্ষেত্রে সে ও একই পদক্ষেপ নিয়েছে ৷ আমার সঙ্গে কথাও হয়েছে ৷ তাই একজন মহিলা হিসাবে কোথাও না কোথাও সবাই যুক্ত ৷ তাই সবসবয় একজন মানুষ হিসাবে বলা যায় কিছু হলে এইরকম স্টেপটাই নেওয়া উচিত ৷ সেখানে আমি ওকে অনেকক্ষেত্রে ইন্সপায়ার করেছি ৷ আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যেখানে চিপ ইন্টারনেটের যুগে কোনওমতেই কমানো সম্ভব হচ্ছে না ৷ তাই কে বা কারা করছে সেটাকে অবশ্যই খুঁজে বের করা উচিত ৷ এইরকম ক্রাইম কোনও কিছু হলেই সাইবার সেলকে জানানো উচিত ৷ এখানে সাইবার সেলের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে ৷ হয়ত কন্ট্রোল করা সম্ভব নয়, কিন্তু কেউ যদি এই ধরনের সমস্যায় পড়েন এটা করা আমার মনে হয় একটা উদাহরণ ৷ ফলে কিছু লোক তো ভয় পাবে ৷”

তিনি বলেন, এরজন্য একটু তো ডিপ্রেশন হবেই ৷ দুঃখতো হয়ই ৷ ছবি যখন এইভাবে দেখছে, শেয়ার হচ্ছে এটা দেখে লোকজন মজা নিচ্ছে সেটা তো একটা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতির একটা পর্যায় ৷ এছাড়াও শরীর যেটা রিভিল করতে চাও না মানে আমার ক্ষেত্রে আমি চাই না যে, আমার বিকিনি ছবি আসুক সেটা একটা ডিপ্রেসন ৷ সেটা খুবই সাময়িক ৷ এই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রে আমার পরিবার আমার সঙ্গে ছিল ৷ তবে আমি বলব হাতে যতটুকু আছে করা কিছু প্রয়োজন ৷ তবে এরকম হলে মানুষের ডিপ্রেসন হবে কিন্তু সবার ক্ষেত্রে আলাদা ৷”

আরও পড়ুন:- ২১শে এপ্রিল থেকে রেশন কার্ডের নিয়মে বড় পরিবর্তন। বিপদে পড়তে না হলে জেনে নিন

mental Health

মনোবিদ অনন্যা ভট্টাচার্য

 

এই সমস্যায় কী রকম অবস্থা হয় মানসিক অবস্থা কেমন ও কীভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন এই বিষয়ে মনোবিদ অনন্যা ভট্টাচার্য বলেন, “একটা কথা সবসময় মাথায় রাখা প্রয়োজন এআই জিনিসটা যেমন ভালো তেমনই খারাপ ৷ ছোটবেলায় একটা লাইন পড়তাম বিজ্ঞান আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ ৷ এআই যেমন অনেক কিছুই করতে পারে ৷ ভালো দিকও যেমন আছে খারাপ কিছুও করা যেতে পারে ৷ আজকাল আমরা দেখতে পাচ্ছি এআই-এর মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি ভাইরাল হচ্ছে ৷ বলাই যায় ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে তাঁর শরীর নিজস্ব অধিকার ৷ সুতরাং সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারইম্পোজ করে যখন বাইরে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তখন সেটা ভাইরাল হয়ে যাচ্ছে নিমেষেই ৷ কোথাও দাঁড়িয়ে টাকা পয়সা অর্জন করছে ৷ তাই সামাজিকভাবে অপমানিত হতে হচ্ছে ৷ আমাদের মাথায় রাখতে হবে কোথাও গিয়ে ব্যক্তিগত জায়গা লঙ্ঘন হচ্ছে ৷ এর ফলাফল সেই ব্যক্তি চূড়ান্ত ডিপ্রেসনে চলে যেতে পারে ৷ এরফলে প্যানিক অ্য়াটাক, সোশাল আইসোলেসন বা ফোবিয়া এই সমস্ত জিনিসগুলি হতে পারে ৷

পরবর্তীকালে তাঁর কেরিয়ারের দিক থেকে দেখতে গেলে সেই জায়গায় একটা প্রভাবিত হতে পারে ৷ তাই কীভাবে জীবনে এগিয়ে যাওয়া যাবে সেই জায়গাটায় প্রভাব পড়ছে ৷ ফলে তাঁর জীবন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পদ্ধতিতে হাত পরে যাচ্ছে ৷ এরফলে একদিক থেকে যেমন সামাজিকভাবে আইসোলেটেড হচ্ছে আবার কোথাও দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে নিজেকে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে সেটা অনিইচ্ছাকৃত ৷ এরপর আমরা দেখতে পাচ্ছি, মানুষ একটা ডিপ-ডিপ্রেসনে চলে যাচ্ছে ৷ ফলে একটা সুইসাইড করার প্রবণতা তৈরি হতে পারে ৷ আমারা দেখতে পাচ্ছি এআই দিয়ে নেকেড ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে আক্ষরিক অর্থে একটা সামাজিক অবক্ষয় হচ্ছে ৷ সবদিক থেকে একটা মনো সামাজিক অবক্ষয় তৈরি হচ্ছে ৷”

মনোবিদ অনন্য়া ভট্টাচার্য জানান, এরজন্য সবার আগে যেটা প্রয়োজন সাইবার সেলে গিয়ে অভিযোগ করা ৷ এরপর পরবর্তী মানসিক দিক থেকে সুস্থ থাকতে একজন মনোবিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন ৷

জিনিয়া সেই কাজটাই করে দেখিয়েছেন ৷ একজন মহিলা হিসাবে তিনিও চুপ করে বসে থাকেন নি ৷ সমাজে এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়াটা প্রয়োজন ৷ শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী জিনিয়া সেনও সমাজের যে কোনও মহিলার ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও সমস্যা হলে উঠে দাঁড়ানোর একটা রস্তা বলে দিয়েছেন ৷

(বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷)

আরও পড়ুন:- ১১ কোটি প্যান কার্ড বাতিল! জানুন প্যান আধার লিংক না করলে কী কী বিপদ হবে?

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন