পরিবারের 4 সদস্যকে খুনের দায়ে বাড়ির ছোট ছেলেকে ফাঁসির সাজা, জানতে বিস্তারিত পড়ুন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- 2021 সালের 19 জুন৷ কালিয়াচক 3 নম্বর ব্লকের বীরনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরনো 16 মাইল এলাকার এক ঘটনায় কেঁপে উঠেছিল গোটা দেশ ৷ ওই গ্রামের একটি বাড়ি সংলগ্ন নির্মীয়মান গুদামঘর থেকে উদ্ধার হয়েছিল চার চারটি পচাগলা মৃতদেহ ৷ দেহগুলি ওই বাড়ির সদস্যদেরই ৷ খুন করেছিল বাড়ির 19 বছর বয়সী ছোট ছেলে ৷

সৌভাগ্যক্রমে ভাইয়ের পরিকল্পনা থেকে বেঁচে যায় বড় ছেলে ৷ তিনিই 18 জুন রাতে কালিয়াচক থানায় গিয়ে গোটা ঘটনা খুলে বলেন ৷ ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷ সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই 19 জুন ভোরে ওই বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ ৷ চারটি দেহ উদ্ধারের পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় ছোট ছেলে আসিফ মহম্মদকে ৷

Death Sentence

আদালতে আসিফ মহম্মদ 

 

সেই হাড়হিম করা ঘটনার চার বছর পর অবশেষে শনিবার মিলল বিচারের বাণী ৷ এই ঘটনায় আসিফ মহম্মদকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন মালদা জেলা আদালতের বিচারক ৷ এই মামলার রায়দান ঘিরে এদিন দুপুর থেকে জেলা আদালত চত্বরে মানুষের ভিড় জমে যায় ৷

এই মামলায় পুলিশি তদন্ত যত এগিয়েছে, ততই একের পর এক রহস্যের খোলসা হয়েছে ৷ এই খুনের ঘটনা ঘটেছিল 2021 সালের 28 ফেব্রুয়ারি ৷ পরিবারের চার সদস্যকে খুন করার পর বাড়িতেই ছিল আসিফ ৷ প্রতিদিন গুদামঘরে গিয়ে মৃতদেহগুলি পর্যবেক্ষণ করত৷ পুলিশি জেরায় সে জানায়, এই খুনের পরিকল্পনায় সে ডার্ক ওয়েবেরও ব্যবহার করেছিল ৷ সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে প্রথমে সে বাড়ির পাঁচ সদস্যকে অজ্ঞান করে দেয় ৷

সে পুলিশকে আরও জানায়, প্রত্যেককে টেনে নিয়ে যায় পাশে নির্মীয়মান গুদামঘরে ৷ সেখানে কাঠের কফিন তৈরি করে সবাইকে শুইয়ে দেয় ৷ তারপর ছেড়ে দেয় জলের কল ৷ জলে ডুবে মৃত্যু হয় বাবা জাওয়াদ আলি, মা ইরা বিবি, বোন আরিফা খাতুন, ঠাকুমা আলেকজান বিবির ৷ সৌভাগ্যক্রমে দাদা আরিফের জ্ঞান ফিরে আসে ৷ ভাইয়ের সঙ্গে একরকম মারামারি করে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে কলকাতা চলে যান ৷ জুন মাসে মামার পরামর্শে তিনি কালিয়াচক থানায় ভাইয়ের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷

খুনের পর আসিফ চারটি দেহ ওই গুদামঘরেই পুঁতে দেয় ৷ বাড়ির আশেপাশে নজরদারি চালাতে গোটা বাড়ি মুড়ে ফেলেছিল সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে ৷ তার ঘর থেকে একাধিক ইলেকট্রনিক গ্যাজেটও বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ ৷ এই মামলার শুরুতেই পুলিশি তদন্তে উঠে আসে আসিফের দুই বন্ধুর নাম ৷ ওই দু’জনের হেফাজত থেকে বাজেয়াপ্ত হয় পাঁচটি অত্যাধুনিক পিস্তল, 10টি ম্যাগাজিন ও 80 রাউন্ড কার্তুজ ৷ পুলিশি জেরায় দু’জনই জানায়, এসব অস্ত্রশস্ত্র আসিফই তাদের কাছে রাখতে দিয়েছিল ৷ এই মামলা এখনও মালদা জেলা আদালতের মুখ্য দায়রা বিচারকের এজলাসে বিচারাধীন ৷

এদিন বেলা সাড়ে 12টা নাগাদ সংশোধনাগার থেকে আসিফকে জেলা আদালতে নিয়ে আসা হয় ৷ হলুদ টিশার্ট ও সাদা হাফ প্যান্ট পরিহিত আসিফের মুখ এদিনও ছিল অভিব্যক্তিহীন ৷ এজলাস শুরু হতেই বিচারক শুভায়ু বন্দ্যোপাধ্যায় আসিফকে জিজ্ঞেস করেন সে খাবার খেয়েছে কি না, জল খাবে কি না ৷ কম্পিউটার নিয়ে তার আগ্রহ, ভবিষ্যতে সে কম্পিউটার নিয়ে পড়াশোনা করবে কি না, সেসব নিয়ে আসিফের সঙ্গে কথা বলেন বিচারক৷ সবকিছুতেই হ্যাঁ উত্তর দেয় আসিফ ৷

খুন নিয়ে তাকে প্রশ্ন করতেই বিচারককে সে জানায়, সে খুন করেনি ৷ তাকে প্রশ্ন করা হয়, একথা সে আগে জানায়নি কেন ? আসিফের উত্তর, শরীর খারাপ ছিল ৷ এর কিছুক্ষণ পরেই তাকে বিচারক জানান, তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে ৷ তাই তাকে দোষী সব্যস্ত করা হয়েছে ৷ তবে এই কথা শোনার পরও একই রকম ভাবলেশহীন ছিল সে ৷

এরপরেই দু’পক্ষের ক্লোজিং স্টেটমেন্ট শোনেন বিচারক ৷ সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় 1980 সালের একটি মামলায় রায়ের উদাহরণ টেনে আসিফের ফাঁসির সাজা দাবি করেন ৷ অন্যদিকে আসিফের তরফে জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের আইনজীবী দু’একটি মামলার উদাহরণ টেনে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন সাজার সওয়াল করেন ৷ প্রায় আড়াই ঘণ্টা দু’পক্ষের কথা শোনার পর আসিফের ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেন মালদা জেলা আদালতের বিচারক ৷

পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “তিনটি ধারায় গতকাল অভিযুক্তকে দোষী সব্যস্ত করা হয়েছিল ৷ তার মধ্যে 201 ধারায় প্রমাণ লোপাট, বড় ভাইকে খুনের চেষ্টা করার জন্য 307 ধারায় এবং পরিবারের চার সদস্যকে খুনের জন্য 302 ধারায় আসিফ মহম্মদকে দোষী সব্যস্ত করা হয় ৷ আজ দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক দোষীকে 201 ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড ও 10 হাজার টাকা জরিমানা করেন ৷ জরিমানা অনাদায়ে দু’মাসের কারাদণ্ড দেন৷ 307 ধারায় 10 বছরের কারাদণ্ড ও 10 হাজার টাকা জরিমানা করেন ৷ জরিমানা অনাদায়ে দু’মাসের কারাদণ্ড এবং 302 ধারায় আসিফ মহম্মদকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছেন ৷’’

আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘‘এই ঘটনাকে বিচারক বিরলের মধ্যে বিরলতম বলে উল্লেখ করেছেন ৷ এই মামলায় মোট 19 জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে ৷ সম্পত্তি হাতানোর জন্যই খুনের এই পরিকল্পনাকে বাস্তব রূপ দেওয়া হয়েছে ৷ খুনের পরিকল্পনায় সে ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড, ফিজিক্যাল ওয়ার্ল্ড, এমনকি ডার্ক ওয়েবেরও সাহায্য নিয়েছিল ৷”

আরও পড়ুন:- দুরন্ত কামব্যাক, মে মাসেই ৪৮% দাম বেড়েছে এই মাল্টিব্যাগার স্টকের।

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন