Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বড়বাজার এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪ জন। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ঘটনার পরেই হোটেল মালিক আকাশ চাওলা এবং ম্যানেজার গৌরব কাপূরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিউজ এইট্টিন বাংলার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই কলকাতা পুরসভার ইঞ্জিনিয়াররা প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সেই রিপোর্টে উঠে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য।
প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, হোটেলের দোতলায় ইন্টেরিয়ার ডেকোরেশনের কাজ চলছিল। ওই কাজ চলার সময়েই আগুন লাগে। পুরসভার তদন্তে উঠে এসেছে, কাজের সময়ে লোহার তৈরি সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছিল। আয়রন ও স্টিলের রড দিয়ে নির্মাণকাজ হচ্ছিল কোনও ইঞ্জিনিয়ারের নজরদারি ছাড়াই। অনুমতি না নিয়েই এই কাজ চলছিল বলে অভিযোগ। পাশাপাশি, কাজ করছিলেন অদক্ষ শ্রমিকরা।
পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, হোটেলটির বহুতলের নকশায় বা বাইরের কোনও গঠনগত পরিবর্তন ধরা পড়েনি। আইবি বুক অনুযায়ী অনুমোদিত কাঠামোর বাইরে কিছু করা হয়নি। পুরসভার প্রয়োজনীয় লাইসেন্সও নবীকরণ করা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে। তবে, দোতলার অভ্যন্তরীণ নির্মাণ নিয়ে গাফিলতি ছিল বলেই মনে করছেন তদন্তকারী ইঞ্জিনিয়াররা।
এই প্রাথমিক রিপোর্ট দমকল বিভাগ এবং পুলিশের সঙ্গে আলোচনার পর কলকাতার মেয়রের কাছে জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুরসভা।
অন্যদিকে, ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল ফরেনসিক দলের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, দোতলার যেই অংশে কাজ চলছিল, তার পাশেই ছিল রান্নাঘর। সেখানে রান্নার ব্যবস্থাও ছিল। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অনুমান, কাজ করছিলেন যে শ্রমিকরা, তাঁদের কেউ হয়তো রান্না করছিলেন বা সিগারেট-বিড়ি খাচ্ছিলেন। আগুন লাগার সূত্রপাত সেখান থেকেই হতে পারে।
দোতলায় মজুত ছিল প্রচুর পরিমাণে প্লাইউড এবং স্পিরিট জাতীয় দ্রাহ্য পদার্থ। যার ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে। ঘটনাস্থলে একটি বিস্ফোরিত সিলিন্ডারও পাওয়া গেছে। আগুনের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয় এই বিস্ফোরণ।
দোতলায় আগুন লাগার পর ধোঁয়ায় ঢেকে যায় তিন তলা থেকে ছয় তলা পর্যন্ত। জানলা না থাকায় এবং ঘরগুলি সম্পূর্ণ আবদ্ধ থাকার ফলে ভেতরে আটকে পড়ে অনেকে। শ্বাসরোধ হয়ে তাঁদের মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।
পুরো ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। প্রশাসনের তরফে চলছে তদন্ত। অগ্নিকাণ্ডের মূল কারণ ও দায়ীদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ, দমকল এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দল।