Bangla News Dunia, Pallab : গত কয়েকদিন ধরে ‘শক্তি’ নামক একটি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় নিয়ে বাংলা জুড়ে তৈরি হয়েছিল প্রবল আতঙ্কের পরিবেশ। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে একাধিক অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে যে, মে মাসের শেষ সপ্তাহে ‘শক্তি’ নামের একটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়তে চলেছে পশ্চিমবঙ্গে কিংবা বাংলাদেশের উপকূলে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের একটি অংশ জানিয়েছিলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হবে বঙ্গোপসাগরে এবং তা ধেয়ে আসবে উপকূলের দিকে। নাম পর্যন্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল— ‘শক্তি’, যার অর্থ “শৌর্য” এবং নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা।
কিন্তু ঠিক এই সময়েই চমকপ্রদ এক ঘোষণা করে বসল মৌসম ভবন (IMD – India Meteorological Department)। তাদের অফিসিয়াল বুলেটিনে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে, ‘সাইক্লোন শক্তি’-র কোনও অস্তিত্বই নেই! তাহলে এতদিন ধরে যা রটে গিয়েছিল, তার উৎস কী? সত্যিই কি শক্তি নামে কোনও ঝড় আসছে না ?
আরও পড়ুন : পশ্চিমবঙ্গ সরকার দিচ্ছে ১০০০ টাকা ! কারা পাবেন, কীভাবে আবেদন করবেন ?
আতঙ্কের শুরু: বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ভীতি তৈরি হয়, তার পিছনে মূল কারণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস। মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম রিপোর্ট করে, ১৬-১৮ মে-র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ (Low Pressure Area) সৃষ্টি হতে চলেছে, যা শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। এই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেওয়া হয় ‘শক্তি’। পূর্বাভাসে জানানো হয়, ২৩ মে থেকে ২৬ মে-র মধ্যে এটি ভারতের পূর্ব উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে।
এই খবর শোনার পর থেকেই বাংলায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। উপকূলবর্তী জেলাগুলি যেমন পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, ও কলকাতা— সবাই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে ঝড় মোকাবিলার জন্য।
হঠাৎ বদলে গেল ছবি: মৌসম ভবনের অফিসিয়াল বক্তব্য
১৩ মে, ২০২৫ তারিখে মৌসম ভবনের পক্ষ থেকে একটি অফিসিয়াল বুলেটিন প্রকাশ করা হয়, যেখানে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়:
“বর্তমানে আন্দামান সাগরের উপরে একটি সাইক্লোনিক সার্কুলেশন তৈরি হয়েছে। এটি কোনও ঘূর্ণিঝড় নয়, বরং এটি একটি নিম্নচাপ প্রবণতা মাত্র।“
এছাড়াও তারা জানায়, ‘সাইক্লোনিক সার্কুলেশন’ এবং ‘সাইক্লোনিক স্টর্ম’— এই দুটি পরিভাষার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেখানে ‘সার্কুলেশন’ হল শুধুমাত্র একটি ঘূর্ণায়মান নিম্নচাপ, সেখানে ‘স্টর্ম’ হল একটি সুসংগঠিত, শক্তিশালী বায়ুর চাপের সিস্টেম, যার গতি প্রতি ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
অর্থাৎ, ‘শক্তি’ নামে ঘূর্ণিঝড় তৈরির কোনও অফিসিয়াল স্বীকৃতি এখনও পর্যন্ত নেই।
কীভাবে রটে গেল বিভ্রান্তি?
অনেক সময় পূর্বাভাসের প্রাথমিক ধাপেই কিছু সম্ভাব্য নাম প্রকাশ্যে আসে। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ২০২৫ সালের ঘূর্ণিঝড়ের জন্য যে নামের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, তার মধ্যে ‘শক্তি’ ছিল একটি নাম। তবে কোনও ঘূর্ণিঝড় গঠিত হলে তবেই সেই নাম চূড়ান্তভাবে প্রয়োগ হয়। কিন্তু বিভিন্ন অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই নামটিকে ঘূর্ণিঝড় হিসেবে নিশ্চিত করে প্রকাশ করা হয়, যার ফলে বিভ্রান্তি ছড়ায়।
তাহলে বাংলায় ঝড় হবে না?
এই মুহূর্তে মৌসম ভবনের বক্তব্য অনুযায়ী, কোনও ‘সাইক্লোনিক স্টর্ম’ বাংলার দিকে এগিয়ে আসছে না। তবে, ‘সাইক্লোনিক সার্কুলেশন’ থাকলে তার প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টিপাত, দমকা হাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এর মানে, ২৪ মে থেকে ২৬ মে-র মধ্যে কিছুটা বৃষ্টিপাত বা হালকা ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই।
আবহাওয়াবিদদের সতর্ক বার্তা
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের মতে, যেকোনও নিম্নচাপকে নিয়ে দ্রুত ঘূর্ণিঝড় তকমা দিয়ে দেওয়া খুবই বিপজ্জনক। এর ফলে মানুষের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। তারা জানাচ্ছেন, ঘূর্ণিঝড় গঠনের বিষয়টি অনেক পর্যবেক্ষণের পর নিশ্চিত করা হয় এবং কোনও ঘূর্ণিঝড় গঠনের কমপক্ষে ৪৮ ঘণ্টা আগে মৌসম ভবন অফিসিয়াল বুলেটিন জারি করে।