Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- দেশজুড়ে যুদ্ধ পরিস্থিতির মহড়া দেওয়া হবে আগামিকাল,বুধবার ৷ পশ্চিমবঙ্গের 17টি জেলায় এই মহড়া বা মক ড্রিল হবে ৷ এই নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে রাজ্য সরকারের কাছে নির্দেশিকা চলেও এসেছে ৷
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নির্দেশ অনুযায়ী, বুধবার দেশের 244টি জেলায় একই সময়ে হবে মক ড্রিল ৷ পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা-সহ 17টি জেলার 31টি জায়গায় হবে মক ড্রিল । এর জন্য এ, বি ও সি – তিনটি ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়েছে ৷ বিকেল চারটের সময় এই মহড়া হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ?
কোথায় কোথায় হবে মহড়া ?
কোচবিহার, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, মালদা, শিলিগুড়ি, গ্রেটার কলকাতা, দুর্গাপুর, হলদিয়া, হাসিমারা, খড়গপুর, বার্নপুর-আসানসোল, ফারাক্কা-খেঁজুরিহাট, চিত্তরঞ্জন, বালুরঘাট, আলিপুরদুয়ার, রায়গঞ্জ, ইসলামপুর, দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, কালিম্পং, জলঢাকা, কার্শিয়াং, কোলাঘাট, বর্ধমান, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি ও মুর্শিদাবাদে হবে মহড়া ।
আরও পড়ুন:- মকড্রিল মানে কী? ঠিক কী করতে হবে সাইরেন বাজলেই? জানুন
রাজ্য়ের কোন কোন জায়গায় হবে মক ড্রিল
যদিও, দেশের মধ্যে রাজস্থান, গুজরাত, জম্মু-কাশ্মীর প্রভৃতি রাজ্যে মক ড্রিলের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে ৷ এই রাজ্যগুলিতে 100টি জেলাকে স্পর্শকাতর হিসাবে চিহ্নিতও করা হয়েছে । 54 বছর পর যুদ্ধ প্রস্তুতির দেশজুড়ে এমন মহড়া লক্ষ্য করা যাবে ।
মহড়ায় কী কী করা হবে ?
এক কথায় মক ড্রিল বা মহড়া হল অনুশীলন । সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, দমকল বিভাগ প্রভৃতি জরুরি বিভাগে প্রায় সময় এই মক ড্রিল হবে ৷ অর্থাৎ, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে, আপৎকালীন পরিস্থিতে কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, কীভাবে সামাল দিতে হবে, তারই চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রস্তুতি হবে । সাইরেন বাজলে সেই সময় কী করতে হবে, ব্ল্যাক আউট হলে কী করতে হবে, সেসবেরই অনুশীলন হবে ৷ একেবারে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বা পরিবেশ তৈরি করেই হবে মক ড্রিল বা মহড়া ।
কেন্দ্র-রাজ্য বৈঠক
এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সঙ্গে মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের বৈঠক হয় ৷ সেখানে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়, বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেরা রাজ্য বাংলা । যুদ্ধ হলে যেকোনও সময় বড়সড় সংকট নেমে আসতে পারে রাজ্যের উপর । তাই রাজ্যকে কেন্দ্রের নির্দেশ, আগামিকাল, বুধবার থেকে সাতদিন নিজেদের সমস্ত ব্যবস্থাপনা গুছিয়ে নিতে হবে । এক্ষেত্রে যেখানে ত্রুটি রয়েছে, সেগুলি দ্রুত সংশোধন করতে হবে ৷
কেন্দ্রের নির্দেশিকা
এদিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন রাজ্যের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই যুদ্ধ ও নিজেদের ঘরোয়া পরিকাঠামোর প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন । এই বৈঠকে তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এনডিআরএফের ডিজি । রাজ্যের তরফে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্র সচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব রাজেশ সিনহা ৷ ছিলেন ডিজি (সিভিল ডিফেন্স) জগমোহন । এই বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে বার্তা দেওয়া হয়েছে, যদি কোনোভাবে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাহলে কীভাবে সামগ্রিকভাবে উদ্ধারকাজ বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে রাজ্যকে ।
রাজ্য সরকারের বক্তব্য কী ?
রাজ্যের এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, এই মকড্রিলের সঙ্গে সরাসরি সাধারণ মানুষের কোনও যোগ নেই । বরং এর সঙ্গে অনেক বেশি জড়িত বিভিন্ন ব্যবস্থা যেমন অ্যাম্বুল্যান্স, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা, উদ্ধার কাজ, হাসপাতালের বেড ইত্যাদি । সবকিছু কতটা সচল আছে ৷ সবটাই ঝালিয়ে নেওয়ার জন্যই এই ব্যবস্থা ।
প্রশাসন সূত্রে খবর, এই মুহূর্তে রাজ্যে বিভিন্ন প্রান্তে জেলা ধরে ধরে একাধিক সাইরেন রয়েছে । শুধু শহর কলকাতায় সাইরেন রয়েছে 95টি । তবে এর বড় অংশ দীর্ঘদিন অব্যবহারের ফলে অকেজো হয়েছিল । সেগুলিকে দ্রুত সারিয়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । এবার জেলা ধরে বিচার করলে প্রত্যেক জেলায় 20-25টি সাইরেন রয়েছে । তার মধ্যে প্রত্যেক জেলার হেড কোয়ার্টারে একটি সাইরেন থাকছে ।
ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রাজ্যজুড়ে 62টি স্যাটালাইট ফোন রয়েছে । রাজ্যের সঙ্গে সিভিল ডিফেন্সের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হবে এয়ারফোর্স । এয়ারফোর্সের মাধ্যমেই খবর আসবে সিভিল ডিফেন্সের কাছে । এরপর সিভিল ডিফেন্স থেকে অন্যান্য সর্বত্র সেই খবর বা সাবধানবাণী পৌঁছে দেওয়া হবে । সেই মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে ।
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে দ্রুত প্রত্যেক জেলা ধরে ধরে কন্ট্রোল রুম তৈরি করার কথা বলা হয়েছে । যেগুলি সকাল থেকে রাত সারাক্ষণ চলবে । যেহেতু বর্ষার কথা মাথায় রেখে মে মাস থেকেই রাজ্যে এই ধরনের কন্ট্রোলরুম চালু হয়ে যায় । আপাতত সেগুলিকেই যুদ্ধ হলে উদ্ধার কাজ ও বিপর্যয় মোকাবিলায় ব্যবহার করা হবে ।
নবান্ন সূত্রে খবর, আপাতত রাজ্যের হাতে রয়েছে সাত দিন । সেখানে পরিকাঠামোগত খামতি থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সমস্তই জোগাড় করতে হবে রাজ্যকে । সেটাই আদতে হবে মকড্রিল । যুদ্ধের সময় সাধারণ মানুষকে রক্ষার পদ্ধতি ।
আরও পড়ুন:- পাক সেনার ওপর বড় হামলা, অফিসার সহ নিহত ৬ । জানুন বিস্তারিত