Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- প্রতিটি মানুষই কখনও না কখনও দুঃস্বপ্ন দেখেন। কেউ হঠাৎ হঠাৎ দেখেন, কেউ মাঝে মধ্যেই দেখেন। কেউ প্রায় নিয়মিতই ঘুমোলে দুঃস্বপ্ন দেখেন। গবেষণা বলছে, কিন্তু যদি ভয়াবহ স্বপ্ন বারবার ঘুমের মধ্যে আসতে থাকে, তাহলে তা স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ লক্ষণ হতে পারে। ইউরোপীয় একাডেমি অফ নিউরোলজি কংগ্রেসে জুন মাসে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, যেসব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতি সপ্তাহে দুঃস্বপ্ন দেখেন, যাঁরা খুব কম বা কখনও দুঃস্বপ্ন দেখেন না, তাঁদের তুলনায় অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি ৩ গুণ বেশি থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে, ঘন ঘন দুঃস্বপ্ন আসলে শরীরের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলে।
গবেষণায় ধূমপান, স্থূলত্ব, খাদ্যাভ্যাস এমনকি শারীরিক কার্যকলাপের অভাবের মতো সুপরিচিত ঝুঁকির কারণগুলির চেয়ে দুঃস্বপ্নকে ‘অকাল মৃত্যুর পূর্বাভাস’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাহলে দুঃস্বপ্ন, বার্ধক্য এবং অকাল মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক কী? এই বিষয়ে জানুন।
আরও পড়ুন:- বাড়ি বাড়ি ফ্রিতে বিদ্যুৎ দিচ্ছে SBI. কারা এই সুবিধা পাবেন ? জেনে নিন
গবেষণা কী বলছে?
দুঃস্বপ্ন দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যের উপর কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে? গবেষকরা এটি জানার চেষ্টা করেছেন যে একজন ব্যক্তি কতবার দুঃস্বপ্ন দেখলে তা তার কোষের বয়সের সঙ্গে কীভাবে প্রভাব ফেলে। এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন যুক্তরাজ্যের ডিমেনশিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ডঃ আবিদেমি ওতাইকু। তাঁর দল ৮ থেকে ১০ বছর বয়সী ২৪২৯ জন শিশু এবং ২৬ থেকে ৮৬ বছর বয়সী ১,৮৩,০১২ জন প্রাপ্তবয়স্কের তথ্য বিশ্লেষণ করে ১৯ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করেছেন।
দলের গবেষণাগুলি অবাক করার মতো। তাঁরা বলেন, যারা সপ্তাহে একবার বা তার বেশি দুঃস্বপ্ন দেখেন তাঁদের টেলোমেরেস (ক্রোমোজোমের প্রান্তে প্রতিরক্ষামূলক আবরণ) ছোট হয়। এই টেলোমেরগুলি সুস্থ কোষ বিভাজনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং যখন এগুলি ছোট হয়ে যায়, তখন এটি কোষগুলির দ্রুত বার্ধক্যের ইঙ্গিত দেয়।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে প্রাপ্তবয়স্করা যারা প্রায়শই দুঃস্বপ্ন দেখেন, যারা খুব কমই বা কখনও দুঃস্বপ্ন দেখেন না তাদের তুলনায় ৭০ বছর বয়সের আগে তাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি।
‘১৮ বছরের এই গবেষণায়, ২২৭ জন অকাল মৃত্যু ঘটেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে যারা দুঃস্বপ্ন দেখেননি তাদের তুলনায়, যারা সপ্তাহে একবার দুঃস্বপ্ন দেখেছেন তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি তিনগুণ বেশি ছিল।
দুঃস্বপ্ন কেন বার্ধক্যকে ত্বরান্বিত করে?
গবেষকরা দেখেছেন যে দুঃস্বপ্ন ঘুমের মান এবং ঘুমের সময়কাল উভয়ই ব্যাহত করে, যা শরীরের কোষীয় স্তরে নিজেকে মেরামত করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। যখন ঘুম ক্রমাগত ব্যাহত হয় বা কমে যায়, তখন শরীর সারা রাত ধরে শারীরিক গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগুলি মিস করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, কম ঘুম এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপের সংমিশ্রণ আমাদের কোষ এবং আমাদের দেহের বয়স বাড়ানোর গতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
‘ওতাইকু এর পেছনের বিজ্ঞান সম্পর্কে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘আমাদের ঘুমন্ত মস্তিষ্ক স্বপ্ন এবং বাস্তবতার মধ্যে পার্থক্য করতে পারে না। এই কারণেই দুঃস্বপ্নের সময় প্রায়শই ঘাম হয়, শ্বাসকষ্ট হতে পারে এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। আর আমাদের জাগিয়ে তোলে।’ এই স্বপ্নের চাপের প্রতিক্রিয়া আমরা জাগ্রত অবস্থায় যে কোনও অভিজ্ঞতার চেয়ে অনেক বেশি তীব্র হতে পারে এবং এই ধরনের তীব্র ঘটনা দীর্ঘ সময় ধরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে। কর্টিসল হলো মানসিক চাপের সময় শরীর থেকে নিঃসৃত একটি হরমোন এবং কোষের বার্ধক্য ত্বরান্বিত করতে পারে।
ওতাইকু বলেন, কিছু সাধারণ জীবনযাত্রার পরিবর্তন দুঃস্বপ্ন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ভাল ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ, এর মধ্যে রয়েছে বিষণ্ণতা বা উদ্বেগের চিকিৎসা নেওয়া এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভৌতিক সিনেমা দেখা এড়িয়ে চলা।
আরও পড়ুন:- বাজারে ছেয়ে গিয়েছে ভেজাল রসুন, কীভাবে চিনবেন কোনটা খাঁটি? এক ক্লিকে জেনে নিন