বিজেপির বিক্ষুব্ধদের সাপ, ব্যাঙের সঙ্গে তুলনা দিলীপের, জানতে বিস্তারিত পড়ুন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- সাতসকালে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে চা-চক্রে যোগদান এবং সেখান থেকেই রাজ্য তথা দেশের রাজনীতি নিয়ে মূল্যবান মতামত দেওয়া, বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৷ সেই চা-চক্রে যোগ দিতে গিয়েই বৃহস্পতিবার সকালে তিনি বিক্ষোভের মুখে পড়লেন ৷ বিক্ষোভ দেখালেন যাঁরা, তাঁরা সকলেই নিজেদের বিজেপি কর্মী বলেই দাবি করেছেন ৷

দিলীপ ঘোষ 2015 সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সভাপতি হন ৷ 2021 সালের মাঝামাঝি তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় ৷ এই সময়কালে বাংলায় নির্বাচনী রাজনীতিতে বিজেপির শ্রীবৃদ্ধি ঘটে ৷ লোকসভা ও বিধানসভায় ভালো ফল করে বিজেপি ৷ দলীয় কর্মসূচি থেকে ‘কড়া’ ভাষণ দিলীপ ঘোষকে বঙ্গ রাজনীতিতে ‘দাবাং’ নেতার তকমা দিয়েছে ৷

কিন্তু বুধবার দিঘার জগন্নাথ মন্দির দর্শনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও দীর্ঘ আলাপচারিতার পর তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির অন্দরেই ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হয়েছে ৷ বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই সোশাল মিডিয়ায় দলের নেতা-কর্মীরা প্রতিবাদ করতে শুরু করেছিলেন ৷ সেই প্রতিবাদ বৃহস্পতিবার সকাল হতেই প্রকাশ্যে চলে আসে ৷

এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাটে একটি চা-চক্রে যোগ দেওয়ার কথা ছিল দিলীপ ঘোষের ৷ সেই খবর জানাজানি হওয়ার পর থেকে ঘটনাস্থলে হাজির হন বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা-কর্মী-সমর্থকরা ৷ ওই চা-চক্র না আয়োজন করার দাবি জানানো হয় ৷ পরে দিলীপ ঘোষ এলেও বিক্ষোভ জারি থাকে ৷ তাঁর সঙ্গে বিক্ষুব্ধ বিজেপি নেতা-কর্মীদের বচসায় জড়িয়ে পড়তেও দেখা যায় ৷

আরও পড়ুন:- মে মাসে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা কবে ঢুকবে? যদি টাকা না আসে, কী করবেন? জেনে নিন

দিলীপ ঘোষ অবশ্য স্বমেজাজেই ছিলেন ৷ পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘‘এগুলো কিছু না । কিছু লোক ভারতীয় জনতা পার্টিকে দখল করতে চায় । পুরনো কর্মীরা সব বসে গিয়েছেন ৷ তাঁরা বহু কষ্টের মধ্যে রয়েছেন । এরা যদি যোগ্য হতো, তাহলে পার্টি হেরে যাচ্ছে কেন ? লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাচ্ছে । পার্টিকে কব্জা করার রাজনীতি হচ্ছে । অনেক লোক এসেছে । তাঁরা চলে গিয়েছেন ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আর এগুলো তো তৃণমূলের সংস্কৃতি । যেসব লোকেরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তাঁরা তৃণমূল থেকে এসেছে । তাই তাঁরা এসব করছেন । পার্টিতে সবাই আদর্শবাদী, এখানে কোনও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নেই । এখানে ব্যক্তি বলে কেউ নেই ।’’ বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের সাপের সঙ্গে তুলনা করেন ৷ বলেন, ‘‘কার্বলিক অ্যাসিড দিয়েছি বলে সব গর্ত থেকে বেরিয়ে আসছে সব সাপ-ব্যাঙ ৷’’

বিজেপি নেতা তথাগত রায়ও দিলীপ ঘোষের সমালোচনায় সরব হয়েছেন ৷ এই নিয়ে মেদিনীপুরের প্রাক্তন সাংসদের বক্তব্য, ‘‘তথাগত কী করেছে পার্টির জন্য ? একটা কোনও কাউন্সিলর, একটা এমএলএ কাউকে জেতাতে পেরেছে । তখন পার্টির চার শতাংশ ছিল, আর এখন 40 শতাংশ হয়েছে । এতে কষ্ট কেন হচ্ছে ? এখন তো আনন্দ হওয়া উচিত । আমার আনন্দ হচ্ছে ।’’

মেদিনীপুরে আক্রান্ত বিজেপির জেলা সভাপতি

দিলীপ ঘোষ যখন বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন, সেই সময় তাঁর অনুগামী হওয়ার অভিযোগে আক্রান্ত হতে হল বিজেপির এক জেলা সভাপতিকে ৷ ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা সদর মেদিনীপুরে ৷ সেখানে বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সমিতকুমার মণ্ডল পার্টি অফিসে ঢুকতে গিয়ে আক্রান্ত হন ৷

Dilip Ghosh

বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সমিতকুমার মণ্ডলের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ৷ বৃহস্পতিবার৷ 

 

অভিযোগ, দুপুর তিনটে নাগাদ বিজেপির জেলা সভাপতি সমিতকুমার মণ্ডল পার্টি অফিসে ঢুকতে যান ৷ সেই সময় তাঁর সঙ্গে বচসা বাঁধে বিক্ষুব্ধ কর্মীদের ৷ তাঁদের সঙ্গে রীতিমতো ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়ে যায় ৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আবার গাড়িতে উঠে বসেন সমিত ৷ সেই সময় গাড়িও ভাঙচুরের চেষ্টা করা হয় ৷ সেই সময় ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান ওই জেলা সভাপতি ৷ যদিও তাঁর পক্ষ যাঁরা নিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে বিক্ষুব্ধদের লড়াই লেগে যায় ৷ কয়েকজন মারধরও করা হয় ৷

Dilip Ghosh

বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সমিতকুমার মণ্ডলের সঙ্গে কর্মীদের বচসা৷ বৃহস্পতিবার৷

 

বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতা সুজয় দাস বলেন, “গতকাল আমরা দিলীপ ঘোষের ওই ঘটনার পর থেকেই বিজেপি অফিসে তালা লাগিয়ে দিয়েছিলাম রাগে ক্ষোভে । কিন্তু আমরা নিজেরাই তালা খুলে দিয়েছি । কারণ, এটা বিজেপি পার্টি অফিস ৷ দিলীপ ঘোষ এখানে একজন নেতা মাত্র । আজকে ওঁরই অনুগামী জেলা সভাপতি বিভিন্ন মণ্ডল সভাপতিদের নিয়ে এখানে এসেছিলেন এই পার্টি অফিসে নিজেদের দখল রাখতে । আমরা তাই তাঁর কাছে কারণ জানতে চেয়েছি এবং ঢুকতে দিইনি ।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা মনে করি এই দিলীপ অনুগামী জেলা সভাপতি একজন সিপিএমের হার্মাদ ও তৃণমূলের কট্টর সমর্থক । আমরা তাই ওঁকেই পার্টি অফিসে ঢুকতে দেব না । তাছাড়া দিলীপ ঘোষকে আমরা কোনোভাবে নেতা হিসেবে মানছি না ।’’

আরও পড়ুন:- ৬ মিনিট বাথরুম ব্যবহারের জন্য ৮০০ টাকা! দিনেদুপুরে ‘ডাকাতি’

বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সমিতকুমার মণ্ডল বলেন, “গতকাল থেকে বেশ কিছু বিজেপি কর্মী নামে পরিচিত লোকজন আমাদের পার্টি অফিসে তালা দিয়ে দিয়েছে । আজকে যখন আমি দুপুরবেলায় পার্টি অফিসে ঢুকতে যাচ্ছিলাম মণ্ডল সভাপতিদের নিয়ে, সেই সময় আমার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করা হয়েছে এবং আমার গাড়ির কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়েছে । আমরা এই নিয়ে আইনত ব্যবস্থা নেব এবং দল যা নির্দেশ দেবে, আমরা সেই মোতাবেক কাজ করব ।’’

Dilip Ghosh

মেদিনীপুরে পার্টি অফিসে যাওয়ার পথে জেলা সভাপতি সমিতকুমার মণ্ডল৷ বৃহস্পতিবার৷ 

 

উল্লেখ্য, মমতার সঙ্গে দিলীপের সাক্ষাতের ছবি-ভিডিয়ো সামনে আসতেই একপ্রস্থ বিক্ষোভ বুধবারই হয়েছিল মেদিনীপুরে ৷ মেদিনীপুরের সিপাই বাজারে বিজেপি জেলা পার্টি অফিসে তালা লাগানোর সঙ্গে দিলীপ ঘোষের ছবিতে জুতো দেওয়া হয় ৷ ‘দিলীপ ঘোষ মুর্দাবাদ’ স্লোগানও দেন বিজেপি নেতাকর্মীরা । সকালে অবশ্য পার্টি অফিসের তালা খুলে দেন বিক্ষুব্ধ কর্মীরাই ৷ তার পর জেলা সভাপতিকে ঘিরেই বিক্ষোভ হল ৷

আরও পড়ুন:- বিজ্ঞানের নয়া আবিষ্কার, ক্রিম লাগালেই গায়েব হবে ভুঁড়ি! কীভাবে কাজ করে? জানুন

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন