Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিশ্বব্যাঙ্ক তাদের সর্বশেষ গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্টে, 2025-26 অর্থবছরের জন্য ভারতের অর্থনৈতিক আর্থিক বৃদ্ধির হার 6.3 শতাংশ অনুমান করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে, বিশ্বব্যাঙ্ক এই অনুমান জানুয়ারিতে 6.7 শতাংশ থেকে কমিয়ে 6.3 শতাংশে নিয়ে আসে। বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা এবং নীতিগত অনিশ্চয়তাকে এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্দার কবলে বিশ্ব অর্থনীতি:
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনা এবং নীতিগত অস্পষ্টতার কারণে, এই বছর বিশ্বব্যাপী আর্থিক বৃদ্ধির হার মাত্র 2.3 শতাংশ হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে, যা 2008 সালের পর থেকে সবচেয়ে ধীর গতির আর্থিক বৃদ্ধির নজির (যদি বিশ্বব্যাপী মন্দা বাদ দেওয়া হয়)। জানুয়ারিতে এই অনুমান ছিল 2.7 শতাংশ। বিশ্বব্যাঙ্ক সতর্ক করে দিয়েছে যে, যদি শীঘ্রই কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এটি মানুষের জীবনযাত্রার মানের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
ভারতের সর্বশেষ কর্মক্ষমতা এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবস্থান:
যদিও চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (Q4) ভারতের জিডিপি আর্থিক বৃদ্ধি ছিল 7.4 শতাংশ, গোটা অর্থবছরে (FY25) মাত্র 6.5 শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কোভিড সময়ের পর থেকে সবচেয়ে ধীরতম আর্থিক বৃদ্ধির রেকর্ড। তা সত্ত্বেও, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (RBI) মুদ্রানীতি কমিটি FY26-এর জন্য জিডিপি আর্থিক বৃদ্ধি 6.5 শতাংশে বজায় রেখেছে ৷ তবে বাণিজ্য অস্থিরতা নিয়ে এখনও উদ্বেগ রয়ে গিয়েছে ৷ বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
ভারত-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের নতুন দিগন্ত:
টানা চতুর্থ বছর ধরে আমেরিকা ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে রয়ে গিয়েছে। 2024-25 সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ 131.84 বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। ভারতের রফতানির 18 শতাংশ, আমদানির 6.22 শতাংশ এবং মোট পণ্য বাণিজ্যের 10.73 শতাংশে আমেরিকার অংশীদারিত্ব ছিল। আমেরিকার সঙ্গে ভারতের 41.18 বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য উদ্বৃত্তও রয়েছে। উভয় দেশই 2030 সালের মধ্যে এই বাণিজ্য 500 বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে।
ভারত কী চায় আর আমেরিকা কী চায়?
ভারত চায় যে তার পণ্য যেমন বস্ত্র, রত্ন ও গয়না, চামড়া, পোশাক, প্লাস্টিক, রাসায়নিক, চিংড়ি, তৈলবীজ, আঙ্গুর এবং কলার উপর আমদানি শুল্ক কমিয়ে দিক আমেরিকা।
পাশাপাশি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চায় ভারত যেন বৈদ্যুতিক যানবাহন, পেট্রোকেমিক্যাল, অ্যালকোহল, দুগ্ধজাত পণ্য, আপেল, বাদাম এবং জেনেটিকালি মডিফাইড (জিএম) উৎপাদনের উপর শুল্ক ছাড় দেয়। যদিও ভারত এখনও জিএম উৎপাদনে আমদানির ব্যাপারে সতর্ক।
শুল্ক যুদ্ধ এবং 90 দিনের শান্তি:
10 এপ্রিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের উপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক 90 দিনের জন্য স্থগিত করে, যা 9 জুলাই পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এটি বাণিজ্য আলোচনায় ইতিবাচক পরিবেশ তৈরির প্রচেষ্টা বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে 2 এপ্রিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রায় 60টি দেশ থেকে আসা পণ্যের উপর নতুন শুল্ক আরোপ করে, যার প্রভাব ভারতও পড়ে। এই সিদ্ধান্তের আওতায়, ভারত থেকে আসা সামুদ্রিক খাবার এবং ইস্পাতের মতো শিল্প ধাতুর উপর অতিরিক্ত 26 শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।
ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ উভয়ই রয়েছে:
ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে স্থিতিশীল বলে মনে হচ্ছে, তবে বিশ্ব বাণিজ্যে ক্রমাগত পরিবর্তনশীল নীতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৃহৎ অংশীদারদের সঙ্গে উত্থাপিত প্রশ্নগুলি আগামী মাসগুলিতে অর্থনীতির দিক নির্ধারণ করবে। ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি যদি ইতিবাচক দিকে অগ্রসর হয়, তবে এটি ভারতীয় শিল্পের জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে যখন বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি মন্দার আশঙ্কার মুখোমুখি হচ্ছে।
আরও পড়ুন:- আপনি এসির তাপমাত্রা কতোতে সেট করবেন সেটা ঠিক করবে মোদি সরকার, আসছে নির্দেশিকা