Bangla News Dunia , পল্লব চক্রবর্তী : প্রাচীন স্ক্যান্ডেনেভিয়ান শব্দ ‘কাকা’ থেকে এসেছে কেক কথাটি। সেই কেকের থেকে আজকের কেক পুরোপুরি আলাদা। তখন কেক ছিল মূলত পাউরুটি। স্বাদ মিষ্টি করা হত মধু দিয়ে। থাকত বাদাম ও কিসমিস, কারেন্টস, সিট্রনের মতো শুকনো ফল। মধ্যযুগে বেকারি গুলিতে মাঝে মাঝে ফ্রুটকেক ও জিঞ্জারব্রেড বানানো হত। কয়েক মাসেও নষ্ট হত না।
আজকের কেক-র শুরু ১৭ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপের বেকারিতে। ওই সময় চিনির গুড়ো, ডিমের সাদা অংশ ও সুগন্ধী মিশ্রণ ফুটিয়ে কেক সাজানো বা আইসিং করা হত। ১৮৪০ সালে বেকিং পাওডারের আবিষ্কার হলে কেক তৈরি অনেক সহজ হয়ে যায়। কেকের মিশ্রণকে ইস্টের পরিবর্তে বেকিং পাউডার দিয়ে ফারমেন্ট করা সম্ভব হয়। সেই কেকও আজকের কেকের সমতুল্য ছিল না। আজকের কেক আসতে অপেক্ষা করতে হয় উনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত।
‘দ্য ক্যাসেলস নিউ ইউনিভার্সাল কুকারি বুক’ থেকে লেয়ার কেকের এক নতুন রেসিপি পাওয়া যায়। ওই রেসিপি ছিল তখনকার রেসিপির থেকে অনেকটাই আলাদা। ফ্রান্সের অ্যান্টোনিন ক্যারিমকে বলা হত কেকের বিশিষ্ট শেফ। আগে পাউরুটি, কেক বানানো হত হাত দিয়ে। রুটি তৈরির সময় আটা বা ময়দার বল বানানো হয়, ঠিক তা বানিয়ে বেলন দিয়ে একটু বেলে বা হাত দিয়ে টিপে কিংবা প্যানে বসানো হত। গোল তাওয়ায় গোটা কেকের সব টুকু অংশ ভাল ভাবে সেঁকা যেত। ওই সময় থেকে কেকের আকার গোল হয়ে আসছে। পরবর্তীতে প্যান বা তাওয়ার বদলে ছাঁচ ব্যবহার শুরু হয়। ছাঁচ গুলির আকারও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ছিল গোল। এখনও বেশিরভাগ কেকের আকার হয় গোল।
ক্যালেন্ডারে ক্রিসমাস বা বড় দিনের কেকের আলাদা অবস্থান রয়েছে। ইতিহাস বলছে, ৩৩৬ সালে রোমান সম্রাট কনস্টানটাইনের আমলে ক্রিসমাস বড়দিন পালন করা হয়। ক্রিসমাসে কেক খাওয়ার রীতি অবশ্য শুরু হয়য় তারও অনেক পরে। কেক বানানো ও খাওয়ার ট্রাডিশনটা ইংরেজদের। তবে ক্রিসমাস পালন যখন শুরু হয় তখন তখন কেক ছিল না ছিল প্লাম পরিজ। ক্রিসমাসের আগের দিন উপবাস করার নিয়ম ছিল। উপবাসের পরে বড়দিনের ঠিক আগে ইংরেজরা উপবাস ভাঙতেন পরিজ খেয়ে। বেশ কয়েক ঘন্টা খালি পেটের পর ভারি খাবার পেটে পড়লে শরীর খারাপ হতে পারে কিন্তু পরিজ খেলে সেটা হবে না। পরিজের মিশ্রণে শুকনো ফল, মশলা ও মধু মিশিয়ে সেটি ক্রিসমাস পুডিংয়ের আকার নেয়।
১৬ শতকে ক্রিসমাসের কেক বা পুডিঙের রেসিপি থেকে ওটমিল বাদ যায় পরিবর্তে মাখন, ময়দা ও ডিম যোগ হয়। বড়দিনের আগে শুকনো ফল ও মশলা ব্যবহার করে কেক। কেক গুলিই কালক্রমে ‘ক্রিসমাস কেক’ নামে পরিচিতি পায়। ক্রিসমাস কেকের ভেতরে আবার রামে ভেজানো কারেন্টস ও কিশমিশ থাকে। ইংল্যান্ডে বড়দিনে ‘ইউল লগ’ বা ‘চকোলেট লগ’ নামে কেক খাওয়ার রীতি। কানাডাতে ইংরেজিভাষী মানুষদের কাছে কেক ক্রিসমাস কেক নামেই পরিচিত। জাপানের ক্রিসমাস কেক ফ্রস্টেড স্পঞ্জি। থাকে স্ট্রবেরি, চকোলেট আর ফল।
আরও খবর পেতে ফলো করুন আমাদের চ্যানেল