Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ভারতের সামরিক শক্তি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এটিকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ করে তুলেছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কাছে এমন অনেক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রয়েছে, যা কেবল তাদের নির্ভুলতা এবং ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার জন্যই পরিচিত নয়, বরং প্রতিবেশী দেশগুলি বিশেষ করে পাকিস্তানের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জও তৈরি করে।
আমরা ভারতের সেই ১০টি সবচেয়ে বিপজ্জনক অস্ত্র সম্পর্কে জানব, যার সামনে পাকিস্তান মাথা নত করবে। এই অস্ত্রগুলি ভারতের মেক ইন ইন্ডিয়া উদ্যোগ এবং দেশীয় প্রযুক্তির প্রতীক, যা মুহূর্তের মধ্যে শত্রুদের ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।
অগ্নি-৫ হল ভারতের সবচেয়ে উন্নত ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM)। এর পাল্লা ৫,০০০ থেকে ৮,০০০ কিলোমিটার। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। এতে মাল্টিপল ইন্ডিপেন্ডেন্টলি টার্গেটেবল রি-এন্ট্রি ভেহিকেল (এমআইআরভি) প্রযুক্তি রয়েছে, যা একটি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে একাধিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে। অগ্নি-৫ এর পাল্লা এতটাই যে এটি সহজেই পাকিস্তানের যে কোনও অংশকে টার্গেট করতে পারে। এর নির্ভুলতা এবং হাইপারসনিক গতি এটিকে অজেয় করে তোলে।
আরও পড়ুন:- বিজেপির বিক্ষুব্ধদের সাপ, ব্যাঙের সঙ্গে তুলনা দিলীপের, জানতে বিস্তারিত পড়ুন
ব্রহ্মস ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগের ফলাফল। এটি বিশ্বের দ্রুততম সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইল। এর গতিবেগ ২.৮ থেকে ৩ ম্যাক (প্রায় ৩,৭০০ কিমি/ঘণ্টা)। এটি স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ থেকে উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে। ব্রহ্মসের পাল্লা ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এটি পারমাণবিক এবং প্রচলিত অস্ত্র বহন করতে সক্ষম। এই মিসাইলটি পাকিস্তানের নৌবাহিনী এবং উপকূলীয় ঘাঁটির জন্য একটি বড় হুমকি। সম্প্রতি ব্রহ্মসের একটি বর্ধিত পরিসরের সংস্করণও তৈরি করা হয়েছে।
ভারতের হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমনস্ট্রেটর ভেহিকেল (HSTDV) একটি বিপ্লবী অস্ত্র। এটি ডিআরডিও দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটির গতিবেগ ৭ ম্যাক (৮,৫৭৫ কিমি/ঘন্টা) এর বেশি, যার ফলে রাডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পক্ষে এটি শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ৬০০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্ভুলভাবে আক্রমণ করতে পারে। পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে এমন কোনও প্রযুক্তি নেই যা এই ক্ষেপণাস্ত্রের মোকাবেলা করতে পারে।
আরও পড়ুন:- আপনার চেনা এই ৪ মাছে বিষ আছে, খেলেই ধীরে ধীরে মরবেন
প্রলয় একটি দেশীয়ভাবে তৈরি এয়ার টু এয়ার ব্যালিস্টিক মিসাইল। এর পাল্লা ১৫০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ১,০০০ কেজি পর্যন্ত ওজন বহন করতে পারে। এর নির্ভুল আঘাত হানার ক্ষমতা শত্রুর বাঙ্কার, সামরিক ঘাঁটি এবং কমান্ড সেন্টার ধ্বংস করতে কার্যকর করে তোলে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে প্রলয় মোতায়েন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দ্রুত এবং মারাত্মক আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা রাখে।
নির্ভয় হল একটি দূরপাল্লার সাবসনিক ক্রুজ মিসাইল, যার পাল্লা ১,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা যেতে পারে। এতে টেরেন কনট্যুর ম্যাপিং (TERCOM) প্রযুক্তি রয়েছে, যা এটিকে রাডার এড়িয়ে লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে আঘাত করতে সক্ষম করে। পাকিস্তানের অনেক গভীরে হামলা চালাতে নির্ভয় ব্যবহার করা যেতে পারে।
K-9 বজ্র হল একটি ১৫৫ মিমি ৫২ ক্যালিবার আর্টিলারি গান। যা দক্ষিণ কোরিয়ার সহযোগিতায় তৈরি করা হয়েছে। এর পরিসীমা ৪৫ কিলোমিটার। এটি ১৫ সেকেন্ডে ৩টি শেল ছুঁড়তে পারে। K-9 বজ্র বিশেষভাবে মরুভূমি এবং পাহাড়ি অঞ্চলে মোতায়েনের জন্য তৈরি, যা এটিকে পাকিস্তান সীমান্তে একটি মারাত্মক অস্ত্র করে তোলে।
পিনাকা একটি দেশীয় মাল্টি-ব্যারেল রকেট লঞ্চার সিস্টেম যার পাল্লা ৪০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। এই সিস্টেমটি একসাথে একাধিক রকেট নিক্ষেপ করতে পারে। যা বিশাল এলাকা ধ্বংস করতে সক্ষম। শত্রুর সামরিক ঘাঁটি, ট্যাঙ্ক এবং সৈন্যদের লক্ষ্যবস্তুতে পিনাকা ব্যবহার করা হয়। এর উন্নত সংস্করণ পিনাকা এমকে-II আরও মারাত্মক।
রাফাল একটি মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান, যা ভারতীয় বিমান বাহিনীর গর্ব। এই জেটটি মেটিওর এবং স্ক্যাল্প মিসাইল দিয়ে সজ্জিত, যা ১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে নির্ভুল আঘাত হানতে পারে। রাফালের স্টিলথ প্রযুক্তি এবং উন্নত রাডার সিস্টেম এটিকে পাকিস্তানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য একটি বড় হুমকি করে তোলে। এই জেটটি আকাশ থেকে আকাশ এবং আকাশ থেকে ভূমি উভয় ধরনের আক্রমণে সক্ষম।
অর্জুন হল ভারতের মেন ব্যাটেল ট্যাঙ্ক, যা তার উন্নত বর্ম এবং গুলি চালানোর ব্যবস্থার জন্য পরিচিত। এর ১২০ মিমি প্রধান বন্দুক এবং লেজার-গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র এটিকে যুদ্ধক্ষেত্রে অজেয় করে তোলে। অর্জুনের সর্বশেষ সংস্করণ, Mk-1A, আরও উন্নত। আল-খালিদের মতো পাকিস্তানের ট্যাঙ্কগুলির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারত ২০১৯ সালে মিশন শক্তির অধীনে তার উপগ্রহ-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছিল। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি মহাকাশে শত্রু উপগ্রহ ধ্বংস করতে সক্ষম, যার ফলে তাদের যোগাযোগ এবং নজরদারি ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। পাকিস্তানের কাছে এমন কোনও প্রযুক্তি নেই।
ভারতের কৌশলগত শক্তি এবং পাকিস্তানের অবস্থান
ভারতের কাছে কেবল উন্নত অস্ত্রই নয়, বরং এর কৌশল ‘প্রথমে ব্যবহার নয়’ (NFU) নীতির উপর ভিত্তি করে তৈরি, যার অর্থ হল ভারত কেবল আত্মরক্ষার জন্য পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। অন্যদিকে, পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা যেমন শাহিন-III (২,৭৫০ কিমি) এবং বাবর ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা এবং প্রযুক্তি ভারতের তুলনায় কম। ভারতের কাছে ১৭২টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে, যেখানে পাকিস্তানের আছে ১৭০টি, কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা এবং নির্ভুলতায় ভারত এগিয়ে রয়েছে।