মুর্শিদাবাদে অশান্তির পিছনে ‘চক্রান্ত’, তথ্য ফাঁস করবেন বলে হুঁশিয়ারি মুখ্যমন্ত্রীর

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- দু’দিনের সফরে মুর্শিদাবাদে পৌঁছেই বিস্ফোরক মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । বহরমপুরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি দাবি করেন, মুর্শিদাবাদের সাম্প্রতিক অশান্তির পেছনে ‘চক্রান্ত’ রয়েছে এবং তদন্তে প্রাপ্ত সমস্ত তথ্য তিনি প্রকাশ্যে আনবেন ।

সোমবার দুপুরে বহরমপুরে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মুর্শিদাবাদ একটা সময়ে বাংলার রাজধানী ছিল । এখানকার দুটো ওয়ার্ডে গোলমাল হয়েছে । দু-তিন জন লোক এই গোলমাল পাকাচ্ছে । কারা করিয়েছে, কীভাবে করিয়েছে, আমি ক্রসচেক করছি । কিছু সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাতেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে । পুরো তথ্য হাতে এলেই প্রকাশ করব ।”

মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ ও সুতির মতো উপদ্রুত এলাকায় যাওয়ার কথা । তার আগেই স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি । বলেন, “এখানে এক সংগঠনের নেতা 48 ঘণ্টা আলো নিভিয়ে দিয়েছিলেন । কী লুকোতে চেয়েছিলেন তিনি ?”

ভারত সেবাশ্রম সংঘের এক সাধুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

এ প্রসঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী কারও নাম না-করে ভারত সেবাশ্রম সংঘের এক সাধুর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । তিনি বলেন, “এখানে একটা সেবাশ্রম আছে । তিনি কী করেন, তার কী কীর্তি ! তিনি কীভাবে মানুষকে প্ররোচিত করেন, বেলডাঙা থেকে শুরু করে, সুতি ধুলিয়ান সর্বত্র । আমি প্রত্যেকটি কাজ জানি । আমাকে এত দুর্বল ভাবার কারণ নেই । এমনকি উনি মাঝে মাঝে রাতে লাইট নিভিয়ে দেন । যখন ওয়াকফ নিয়ে আন্দোলন হচ্ছিল, 48 ঘণ্টা লাইট অফ করে রেখেছিলেন । উনি এটা করতে পারেন না । এটা ক্রিমিনাল অফেন্স ।”

মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, “অন্ধকার করছেন কেন ? মুখটা লুকিয়ে রাখবেন বলে ? এভাবে অন্ধকার করা যায় না । যদি কোনও ঘটনা ঘটে সিসিটিভিতে ওঠে । আপনারা কী লুকাতে চেয়েছিলেন ? আমি পরিষ্কার পুলিশকে বলেছি, সিআই অফিস ওখান থেকে পাশে সরিয়ে দেবে । আপনি সেন্ট্রাল প্রোটেকশনে আছেন থাকুন না, আমি কারও ক্ষতি চাই না ৷”

তিনি আরও বলেন, “ভারত সেবাশ্রমকে আমি শ্রদ্ধা করি । দিলীপ মহারাজ আমাদের সমস্ত অনুষ্ঠানে যান । আমি গঙ্গাসাগরে গেলে গঙ্গাসাগরের ভারত সেবাশ্রম সংঘ আমাদের খুব সাহায্য করে । আমি প্রত্যেক বছর সেখানে যাই । কিন্তু এখানকার ব্যাপারটা আলাদা । এখানে অনেক কাহিনি আছে । সেই কাহিনিগুলো প্রেসকে বলছি আপনারা খুঁজে বের করুন ।”

বিভাজনের রাজনীতি নয়, সীমান্ত দেখুন: বিজেপিকে বার্তা

বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “আপনারা সীমান্তের বিষয়টা দেখুন । দেশকে বাঁচান । সাম্প্রদায়িক অশান্তি নিয়ে রাজনীতি করবেন না । আমি তা সহ্য করব না ।” তিনি আরও বলেন, “বাংলা কখনও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বরদাস্ত করে না । এখানে চক্রান্ত করে একটা সম্প্রদায়ের উপর অন্য এক সম্প্রদায়কে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে ।”

মানবাধিকার কমিশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন

অশান্তির ঘটনার পর মুর্শিদাবাদে যায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও মহিলা কমিশন । তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর দাবি, “ঘটনার পরদিনই মানবাধিকার কমিশন চলে এল ! কই, মণিপুরে তো যাননি ? এটা পরিকল্পনা করে করা হয়েছে ৷”

নিহতদের পরিবার নিয়ে রাজনীতির অভিযোগ

অশান্তিতে নিহত হন ধুলিয়ানের হরগোবিন্দ দাস ও তাঁর পুত্র চন্দন দাস । বিজেপি নেতারা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে 20 লক্ষ টাকার সাহায্য দেয় । এই প্রেক্ষিতেই মমতা এদিন বলেন, “আমি 10 লাখ করে দুটো পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে আসতাম । আপনারা তাঁদের লুকিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, এখন তাঁদের দিয়ে আমাকে গালাগাল দেওয়াচ্ছেন । অশান্তি আপনারা করবেন, আর দোষ আমার ঘাড়ে চাপাবেন ?” বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যদি গুলি না-চলত, তবে পরের দিন এই ঘটনা ঘটত না ।”

‘সব ধর্ম সমান, কিন্তু দাঙ্গাকারীরা শত্রু’

নাম না-করে কিছু হিন্দু ধর্মীয় নেতার বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর তোপ, “কিছু লোক ধর্মীয় নেতা সেজেছে । এরা রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চায় । আমি সকলকে মিত্র ভাবি, তবে যারা দাঙ্গা করে তারা মিত্র নয় ।”

প্রমাণ হাতে আসছে, সত্যি সামনে আনব: মমতা

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন হুঁশিয়ারির সুরে বলেন, “মুর্শিদাবাদে কী হয়েছিল, তার প্রমাণ আমার কাছে রয়েছে । আরও কিছু প্রমাণ হাতে এলে সমস্ত তথ্য জনসমক্ষে তুলে ধরব ।” তিনি আরও জানান, অশান্তির নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে ৷ বাংলায় কোনও সম্প্রদায় আক্রান্ত হোক, এটা তিনি চান না বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী ।

আরও পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গে টোটো নিয়ে নতুন নিয়ম চালু, জানা জরুরি

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন