কলকাতা হাইকোর্ট নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়েছে। মেধাতালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও বয়সসীমা অতিক্রম করার অজুহাতে এক চাকরিপ্রার্থীকে নিয়োগপত্র থেকে বঞ্চিত করেছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)। কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে সম্পূর্ণ বেআইনি বলে ঘোষণা করে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বেঞ্চ ওই প্রার্থীকে অবিলম্বে নিয়োগপত্র দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এই রায়টি রাজ্যজুড়ে বহু চাকরিপ্রার্থীর জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে এসেছে
আরও পড়ুন : স্টেট ব্যাংকের জনপ্রিয় প্রকল্পে মিলছে প্রচুর সুদ ! সারাজীবন টেনশন ফ্রি থাকুন
ঘটনার প্রেক্ষাপট
মামলার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন মানসী পাল নামে একজন চাকরিপ্রার্থী। তিনি নবম-দশম শ্রেণীর শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন এবং মেধাতালিকাতেও তাঁর নাম ছিল। কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন তাঁকে নিয়োগপত্র দিতে অস্বীকার করে। কারণ হিসেবে দেখানো হয় যে, তিনি বয়সের ঊর্ধ্বসীমা পার করে ফেলেছেন। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই মানসীদেবী কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ ও রায়
বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এই মামলায় কমিশনের ভূমিকায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন:
- বেআইনি সিদ্ধান্ত: আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, বয়সসীমার অজুহাতে মেধাতালিকায় থাকা একজন প্রার্থীকে নিয়োগ থেকে বঞ্চিত করা সম্পূর্ণ বেআইনি। কমিশনের জারি করা প্রত্যাখ্যান মেমোটিও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
- দু’সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগ: আদালত স্কুল সার্ভিস কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে যে, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মানসী পালকে নিয়োগপত্র দিতে হবে।
- কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন: বিচারপতি বসুর মতে, কমিশনের এই ধরনের কাজের জন্য যোগ্য প্রার্থীরা বছরের পর বছর ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কমিশনের এমন আচরণ একাধিক মামলার জন্ম দিচ্ছে, যা বিচার ব্যবস্থার উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।
এই রায়ের প্রভাব
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায় শুধুমাত্র মানসী পালের ক্ষেত্রেই নয়, রাজ্যজুড়ে আরও অনেক চাকরিপ্রার্থীর জন্য গভীর প্রভাব ফেলবে।
- নতুন আশার আলো: যাঁরা মেধাতালিকায় থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বা পদ্ধতিগত ত্রুটির কারণে নিয়োগ পাননি, তাঁরা এই রায়কে হাতিয়ার করে পুনরায় আবেদন করার সাহস পাবেন।
- কমিশনের উপর চাপ: এই রায়ের ফলে স্কুল সার্ভিস কমিশন আগামী দিনে আরও সতর্কভাবে কাজ করতে বাধ্য হবে। যোগ্য প্রার্থীদের অধিকার সুনিশ্চিত করতে তাদের আরও স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ হতে হবে।
- নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা: আশা করা যায়, এই রায়ের পর রাজ্যের সামগ্রিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ এবং ত্রুটিমুক্ত হবে।