Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- দিল্লির দূষণ নিয়ে চর্চা কম হয় না। তাতে দূষণ যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে তা নয়। তবে যদি মনে করে থাকেন দিল্লিই ভারতের সবথেকে দূষিত শহর, তা হলে ভুল করছেন। অন্তত, ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’ বা ‘ক্রেয়া’ (CREA)-এর প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের সর্বাধিক দূষিত শহরগুলির ক্রমতালিকায় রাজধানী আছে দ্বিতীয় স্থানে। প্রতিবেদন অনুসারে, এই নিয়ে টানা চতুর্থ মাস দিল্লি এই জায়গায় রয়েছে।
‘ক্রেয়া’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫-এর জানুয়ারিতে দিল্লিতে পিএম২.৫ (PM2.5)-এর গড় ঘনত্ব ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১৬৫ মাইক্রোগ্রাম। ২৩ দিন রাজধানীর বাতাসের গুণমান ছিল ‘অত্যন্ত খারাপ’ পর্যায়ে। তিন দিন ছিল ‘গুরুতর’, অর্থাৎ পিএম২.৫-এর ঘনত্ব ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২৫০ মাইক্রোগ্রামের বেশি। আর তিন দিন ছিল ‘খারাপ’ স্তরে এবং দুই দিন ‘মাঝারি’ স্তরে। অর্থাৎ জানুয়ারিতে একটি দিনের জন্যও ‘ভালো’ গুণমানের বাতাসে শ্বাস নিতে পারেননি দিল্লিবাসী।
এ তো গেল দিল্লির কথা। রাজধানী, তাই অবিরাম চর্চায় থাকে দিল্লির দুষণ। কিন্তু জানুয়ারিতে এই ক্রমতালিকায় যদি দিল্লি এক নম্বরে না থাকে, তাহলে আছে কোন শহর? শহরটির নাম হয়তো অনেকেরই অজানা। অসম সীমানাবর্তী মেঘালয়ের শিল্প শহর বিরনীহাট। গত মাসে সবচেয়ে দূষিত ভারতীয় শহরের তকমা জুটেছে এই শহরের। জানুয়ারি মাসে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই শহরটিতে পিএম২.৫-এর গড় ঘনত্ব রেকর্ড করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটারে ২১৪ মাইক্রোগ্রাম।
এই শহরের দূষণ নিয়ে দিল্লির মতো চর্চা না হলেও, ২০২৩ এবং ২০২৪…পরপর দুই বছর বিরনীহাটই ছিল ভারতের সবথেকে দূষিত শহর। এই শহরের বাতাসের গুণমান সূচক ধারাবাহিকভাবে ‘খুব খারাপ’ স্তরে রয়েছে। এর পিছনে প্রধানত দায়ী এই অঞ্চলের ৪১টি কারখানা। যার মধ্যে রয়েছে লোহা ও ইস্পাত কারখানা, ডিস্টিলারি, সিমেন্ট কারখানা এবং পানীয় উৎপাদন কারখানা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, শহরে এখন আর একটিও গাছের পাতা সবুজ নেই, বাদামী রঙের হয়ে গিয়েছে। বহু মানুষ শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ এবং যক্ষ্মার মতো রোগে ভুগছেন।
জানুয়ারিতে ভারতের সবথেকে দূষিত ১০ শহরের তালিকায় রয়েছে বাংলার দুটি শহরও…ব্যারাকপুর এবং হাওড়া। ব্যারাকপুর রয়েছে তালিকার অষ্টম স্থানে, হাওড়া দশম। ব্য়ারাকপুরের ক্ষেত্রে মাসের একটি দিন অন্তত বাতাসের গুণমান সূচক ‘সন্তোষজনক’ ছিল। ৬ দিন ছিল ‘মাঝারি’, ১১ দিন ‘খারাপ’ এবং ৯ দিন ‘খুব খারাপ’। আর হাওড়ায় ৩ দিন বাতাসের গুণমান সূচক ছিল ‘মাঝারি’, ১৬ দিন ‘খারাপ’ এবং ১২ দিন ‘খুব খারাপ’। অবশ্য দুই শহরের কোনোটিতেই এক দিনের জন্যও বাতাসের গুণমান সূচক ‘গুরুতর’ রেকর্ড করা হয়নি। ব্যারাকপুরে পিএম২.৫-এর গড় ঘনত্ব ছিল প্রতি ঘনমিটারে ১১৩ মাইক্রোগ্রাম এবং হাওড়ায় ১১১ মাইক্রোগ্রাম।
এ ছাড়া এই ১০ শহরের ক্রমতালিকায় রয়েছে হাজিপুর (তৃতীয়), তালচের (চতুর্থ), পাটনা (পঞ্চম), চণ্ডীগড় (ষষ্ঠ), গুয়াহাটি (সপ্তম) এবং মুজাফ্ফরপুর (নবম)। হাজিপুর, পাটনা এবং মুজাফ্ফরপুর…তিনটি শহরই বিহারের। বস্তুত এই রাজ্যকে বলা যেতে পারে সবচেয়ে দূষিত শহরের ডেরা। রাজ্যের ২৪টি শহরের মধ্যে ২১টি শহরেরই বাতাসের গুণমান ছিল ‘ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড’ (NAAQS)-এর উপরে।