Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- টানা ৮ সপ্তাহ ধরে লাগাতার ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর সোনার বাজারে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। গত চার দিনে সোনার দাম প্রায় ২৫০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব এবং মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা এর প্রধান কারণ হিসেবে উঠে আসছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোনার দীর্ঘমেয়াদি চাহিদা শক্তিশালী থাকায় মূল্য আবারও ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।
শেয়ারবাজারে ধস, তবুও কেন কমছে সোনার দাম?
গত ছয় মাস ধরে ভারতের শেয়ারবাজারে টানা পতন চলছে। সাধারণত, যখন শেয়ারবাজারে বড় ধাক্কা আসে, তখন বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝোঁকেন। কারণ, সোনাকে সবসময় “সংকটের বন্ধু” বলে মনে করা হয়। কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
শেয়ারবাজারে অস্থিরতার মধ্যে গত আট সপ্তাহ ধরে সোনার দাম লাগাতার বাড়ছিল। তবে এখন বাজারে কিছুটা শীতল ভাব এসেছে। সোমবার (৩ মার্চ) IBJA-এর তথ্যমতে, ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৮৫০২০ টাকা ছিল, যা ২৮ ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৮৫০৫৬ টাকা। অথচ ফেব্রুয়ারির শুরুতে এই দাম ৮৭৬০০ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল!
এ বছর এখন পর্যন্ত ১১ বার সোনা সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে। তবে গত এক সপ্তাহে প্রায় ২৫০০ টাকা পর্যন্ত মূল্যহ্রাস হয়েছে। এমসিএক্স (MCX)-এর তথ্যমতে, ৩ মার্চ ট্রেডিং চলাকালীন ২৪ ক্যারেট সোনার দাম ৮৪,৫১১ টাকা পর্যন্ত নেমে আসে।
আরও পড়ুন:- এই ক্ষেত্রে দেশকে পিছনে ফেলে রেকর্ড আয়ের পথে বাংলা, জানতে বিস্তারিত পড়ুন
আন্তর্জাতিক বাজারেও কমেছে সোনার দাম
শুধু ভারতেই নয়, বিশ্ববাজারেও সোনার মূল্য কমেছে। গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম ৩ শতাংশেরও বেশি কমেছে। মূলত, বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি লাভ তোলার জন্য উচ্চ মূল্যে বিক্রি শুরু করায় এই পতন দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি, মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধি সোনার উপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি (Inflation) বাড়তে শুরু করেছে, ফলে ফেডারেল রিজার্ভ (Federal Reserve) সুদের হার কমানোর পরিকল্পনা কিছু সময়ের জন্য স্থগিত রাখতে পারে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাব সোনার বাজারেও পড়ছে।
সোনার দামে উত্থান আবার কবে হবে?
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে সোনার মূল্য কমেছে, তবে বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে সোনার দাম আবারও বাড়তে পারে। কারণ, বিশ্ব রাজনীতির অস্থিরতা এবং সেন্ট্রাল ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ কেনার প্রবণতা বাজারকে চাঙা রাখতে পারে।
বিশেষত, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সোনার মজুদ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। যেমন, চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (PBoC) জানুয়ারি মাসে ৪.৫ টন সোনা কিনেছে, যার ফলে তাদের মোট স্বর্ণ মজুদ ২,২৮৫ টনে পৌঁছেছে, যা তাদের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৫% এর বেশি।
ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক (RBI)ও সোনার বাজারে সক্রিয় রয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের সোনার রিজার্ভ বেড়ে ৮৭৯.০১ টনে পৌঁছেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৮% বেশি।
তাহলে বিনিয়োগের উপযুক্ত সময় কি এখন?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বল্পমেয়াদে সোনার দাম কিছুটা কমতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি আবারও বাড়বে। যারা কম দামে বিনিয়োগ করতে চান, তাদের জন্য এটি একটি ভালো সুযোগ হতে পারে।
বিশ্ব অর্থনীতি ও ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সোনার মূল্য অদূর ভবিষ্যতে আবারও চড়তে পারে। তাই বিনিয়োগকারীরা সতর্কতার সঙ্গে বাজার পর্যবেক্ষণ করলেই লাভবান হতে পারেন।