Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বর্তমানে LPG রান্নার গ্যাস ছাড়া রান্নাবান্না ও খাওয়া দাওয়া একপ্রকার অচল। আর শহুরে জীবনের প্রায় সমস্ত বাড়িতেই রান্নার গ্যাসের (Liquefied petroleum gas) মাধ্যমেই রান্না করা হয়। আর সেই গ্যাস বুকিং যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে খাওয়া দাওয়ার ও প্রচন্ড সমস্যা হয়। আর LPG Gas এর প্রতিটি গ্রাহকদের জন্য হঠাৎ করে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন বাধ্যতামূলক করায় রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের ডেলিভারি বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে বহু গ্রাহক চরম সমস্যায় পড়েছেন। এই নিয়ম কার্যকর করার আগে গ্রাহকদের কোনও ধরনের আগাম নোটিস দেওয়া হয়নি, ফলে অনেকেই এই নতুন নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন। ফলস্বরূপ, বুকিং করা সত্ত্বেও সিলিন্ডার পাচ্ছেন না অনেক গ্রাহক, যা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের অসুবিধা সৃষ্টি করছে।
LPG রান্নার গ্যাস নিয়ে আগাম নোটিশ
রান্নার গ্যাসের বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন (LPG biometric authentication) বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তটি গ্রাহকদের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল। গ্যাস সংস্থাগুলি এই নিয়ম কার্যকর করার আগে কোনও আনুষ্ঠানিক নোটিস জারি করেনি। ফলে, অনেক গ্রাহক এই নিয়ম সম্পর্কে জানতেই পারেননি।
আচমকা গ্যাস বুকিং বন্ধ হওয়ায় গ্রাহকেরা জানিয়েছেন, “মোবাইলে বা অন্য কোনও মাধ্যমে বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করার জন্য কোনও মেসেজ বা নোটিস পাইনি। এমনকি এই প্রক্রিয়ার শেষ তারিখ কবে, সেটাও স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। হটাত করেই গ্যাস বুকিং বন্ধ হয়ে গেছে!” এই তথ্যের অভাবে গ্রাহকরা হতাশ এবং বিভ্রান্ত। বুকিং করা সিলিন্ডার ডেলিভারি না হওয়ায় অনেক পরিবারের রান্নার কাজ ব্যাহত হচ্ছে, যা তাঁদের দৈনন্দিন জীবনে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে।
গ্রাহকদের সমস্যা
রান্নার গ্যাসের বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের এই নতুন নিয়মের কারণে বিভিন্ন ধরনের গ্রাহক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। যাঁরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন, তাঁদের নামে থাকা গ্যাস সংযোগের (LPG Cooking Gas Connection) জন্য বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। শহরের প্রচুর গ্রাহক রয়েছেন, যারা স্বামী স্ত্রী দুজনেই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। আর তাদের নামে যে গ্যাস সংযোগ রয়েছে। ছুটির দিন ছাড়া কিভাবে বায়োমেট্রিক করবেন? এর ফলে প্রচুর গ্রাহক গ্যাস সিলিন্ডার ছাড়া সমস্যায় পড়েছেন।”
এছাড়া, অনেক গ্রাহক মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। অ্যাপের প্রক্রিয়াটি জটিল এবং বারবার চেষ্টা করেও অনেকে এটি সম্পন্ন করতে পারছেন না। শহরের বাসিন্দারা রান্নার জন্য গ্যাসের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল। অনেকের বাড়িতে বিকল্প ব্যবস্থা, যেমন কাঠ বা কয়লার চুলা, নেই। ফলে, সিলিন্ডার ডেলিভারি বন্ধ হয়ে গেলে তাঁদের রান্নার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, যা তাঁদের জীবনযাত্রাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া
হটাত করেই অনেকের গ্যাস ডেলিভারি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় গ্যাস সিলিন্ডার নিতে আসা গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। এক গ্রাহক জানান, “আমি বুকিং করেছিলাম, কিন্তু বায়োমেট্রিক না করার কারণে সিলিন্ডার দেওয়া হচ্ছে না। এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। গ্যাস ছাড়া আমাদের রান্না বন্ধ হয়ে যাবে।তাদের অভিযোগ, বুকিং বাতিল করার আগে অন্তত একটি নোটিস দেওয়া উচিত ছিল। বায়োমেট্রিক করা বাধ্যতামূলক এটা কখনও স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। এই নিয়ম সম্পর্কে অনেকেই কিছুই জানেন না।” গ্রাহকদের এই ক্ষোভের কারণ হলো তথ্যের অভাব এবং হঠাৎ করে ডেলিভারি বন্ধ হওয়া।
গ্যাস সংস্থার বক্তব্য
গ্যাস সংস্থাগুলির দাবি, বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের জন্য গ্রাহকদের প্রায় এক বছর সময় দেওয়া হয়েছিল। ডিলাররা বিভিন্নভাবে গ্রাহকদের সচেতন করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু অনেক গ্রাহকই এই বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার এক আধিকারিক জানান, “উজ্জ্বলা গ্যাস সংযোগ নিয়ে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গেছে, অনেক গ্রাহক সিলিন্ডার ব্যবহার না করলেও তাঁদের অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির টাকা জমা হচ্ছে। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন চালু হলে প্রকৃত গ্রাহকদের সংখ্যা নির্ধারণ করা যাবে এবং ভুয়ো গ্রাহকদের বাদ দেওয়া সম্ভব হবে।”
তিনি আরও জানান, যে কোনও ডিলারের অফিসে গেলে কয়েক মিনিটের মধ্যে বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। এছাড়া, মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমেও এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে, যাতে বাইরে থাকা গ্রাহকদের কোনও সমস্যা না হয়। তবে, গ্রাহকরা অভিযোগ করছেন যে অ্যাপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক করা অত্যন্ত জটিল এবং প্রায়শই ব্যর্থ হয়।
গ্রাহকদের দাবি
গ্রাহকরা মনে করেন, এই নিয়ম কার্যকর করার আগে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। ডিলারের অফিসে নোটিস ঝোলানো বা মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে গ্রাহকদের সচেতন করা যেত। এক গ্রাহক বলেন, “যদি আমরা আগে থেকে জানতাম, তাহলে বায়োমেট্রিক করার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারতাম। কিন্তু হঠাৎ করে গ্যাস ডেলিভারি বন্ধ করায় আমরা বিপাকে পড়েছি।” এছাড়া, অ্যাপের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা এবং গ্রাহকদের জন্য স্পষ্ট নির্দেশিকা প্রকাশ করা প্রয়োজন। গ্রাহকদের মতে, ডিলারের অফিসে নোটিস বোর্ডে স্পষ্ট তথ্য থাকলে অনেকেই এই নিয়ম সম্পর্কে আগে থেকে জানতে পারতেন।
উপসংহার
রাজ্যের বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার অফিসে গ্রাহকদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রান্নার গ্যাস বুকিং করা সত্ত্বেও সিলিন্ডার ডেলিভারি না হওয়ায় তাঁরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অফিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, নির্দেশ অনুযায়ী বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত কোনও সিলিন্ডার ডেলিভারি করা হবে না। এই পরিস্থিতি গ্রাহকদের মধ্যে হতাশা ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, এবং তাঁরা দ্রুত সমাধানের দাবি জানাচ্ছেন। তবে এই মুহুর্তে সমস্ত গ্রাহকদেরই গ্যাস বুকিং ও ডেলিভারি নিশ্চিত করতে এই মাসের মধ্যেই রান্নার গ্যাসের বায়োমেট্রিক আপডেট করে নেওয়া উচিৎ।