15 বছর আগে নিখোঁজ পরিযায়ী শ্রমিক যেভাবে ঘরে ফিরলেন তা সিনেমাকেও হার মানাবে, জানুন বিস্তারিত

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- এ যেন টলিউডের কোনও চিত্রনাট্যের থেকেও বেশি ৷ টানটান উত্তেজনার পর ফিল গুড ক্লাইম্যাক্স ৷ কিন্তু কখনও কখনও বাস্তব সেই চিত্রনাট্যকেও যেন হার মানায় ৷ তেমনই কাহিনি উঠে এসেছে মানিকচক ব্লকের এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অখ্যাত মীরাগ্রামে ৷

দীর্ঘ 15 বছর আগে ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন এক পরিযায়ী শ্রমিক ৷ এতদিন কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর ৷ পরিবারের লোকজনও আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন ৷ ভেবেছিলেন, আর ওই শ্রমিক বেঁচে নেই ৷ তবে নিকষ অন্ধকারে টিমটিম করে জ্বলে থেকেছিল স্ত্রীর আশা ৷ হয়তো সে কোথাও আছে ৷ বেঁচেই আছে ৷ কোনওদিন তার সঙ্গে নিশ্চয়ই দেখা হবে ৷ তাই স্বামীর শেষকৃত্য করতে দেননি কাউকে ৷ সেই আশাই মীরাগ্রামের সীমা বিবির কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁর স্বামীকে ৷ শনিবার ঘরে ফিরেছেন মোস্তাফা ৷ এমন ঘটনায় হতবাক সবাই ৷ নির্বাক সীমা-মোস্তাফা ৷

মীরাগ্রামের মীর মোস্তাফার বয়স এখন 46 বছর ৷ কিন্তু গত 15 বছরে আঙুলের ফাঁক গলে বয়সটা মনে হয় তাঁর বেড়ে গিয়েছে ত্রিশের ব্যবধানে ৷ একটা সময় গ্রামে ডাকাবুকো হিসাবে পরিচিত ছিলেন ৷ কারও প্রয়োজনে একবার ডাকলেই তিনি হাজির ৷ সদা হাস্যময় সেই যুবক এখন অনেকটাই বুড়িয়ে গিয়েছেন ৷ সম্ভবত পিছনের সেই 15 বছর তাঁকে সামনের দিকে এগিয়ে দিয়েছে অনেকটাই ৷ অল্প বয়স থেকেই শ্রমিকের কাজ করতেন তিনি ৷ পরে ভিনরাজ্যেও কাজে যেতে শুরু করেন ৷ বিয়ে করেন সীমা বিবিকে ৷ দুটি ছেলে হয় তাঁদের ৷

15 বছর আগে উত্তরপ্রদেশে টাওয়ারের কাজ করতে গিয়েছিলেন তিনি ৷ গ্রামের আরও কয়েকজনের সঙ্গে ৷ কাজ সেরে একসঙ্গেই গ্রামে ফিরছিলেন তাঁরা ৷ পথে কোনও এক স্টেশনে ট্রেন দাঁড়িয়ে পড়ে ৷ পানীয় জল শেষ হয়ে যাওয়ায় মোস্তাফা বোতলে জল ভরতে প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়েন ৷ যখন তিনি বোতলে জল ভরছিলেন, সেই সময় ট্রেন ওই স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যায় ৷ দেখতে পাননি মোস্তাফা ৷ আর দেখা যায়নি তাঁকেও ৷ শুধু দেখা নয়, সেই থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজও পাওয়া যায়নি ৷

 

মোস্তাফার সঙ্গীরা গ্রামে ফিরে গোটা ঘটনা সীমা বিবিদের খুলে বলেন ৷ চিন্তায় ঘুম উড়ে যায় সবার ৷ কান্নার রোল পড়ে যায় বাড়িতে ৷ কথা হারিয়ে ফেলে লোফা বেওয়া ৷ মোস্তাফার মা ৷ তড়িঘড়ি তাঁরা মানিকচক থানায় মোস্তাফার নামে মিসিং ডায়েরি করেন ৷ মানিকচক থানার তরফে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ কিন্তু কোনও কাজ হয়নি ৷ হারিয়েই যান ডাকাবুকো যুবকটি ৷

এরপরেই ঘটে সেই চিত্রনাট্য ৷ মীরাগ্রামেরই কিছু শ্রমিক উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের একটি গ্রামে টাওয়ারের কাজ করছিলেন ৷ প্রবল গরমে তাঁদের ভীষণ তৃষ্ণা পেয়েছিল ৷ তাঁরা টাওয়ারের জায়গা থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি ভুট্টার জমিতে স্যালো পাম্পে জল আনতে যান ৷ পাম্পের কাছে গিয়েই হতবাক হয়ে পড়েন তাঁরা ৷ দেখেন, ভুট্টা খেতে জল দিচ্ছেন তাঁদের গ্রামের হারিয়ে যাওয়া মোস্তাফা ৷ তাঁরা মোস্তাফার ভিডিয়োগ্রাফি করে সেখান থেকেই গ্রামের একজনের মোবাইলে পাঠান ৷ ওই ব্যক্তি সীমা বিবি, লোফা বেওয়াদের সেই ভিডিয়ো ক্লিপ দেখালে সবাই মোস্তাফাকে চিনতে পারেন ৷ পরিবারে খুশির হাওয়া বয়ে যায় ৷ সঙ্গে সঙ্গে মোস্তাফার দুই ছেলে-সহ গ্রামের কয়েকজন গাজিয়াবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ৷ অবশেষে শুক্রবার মাঝরাতে মালদায় ফেরেন মোস্তাফা ৷ শনিবার বাড়িতে ফিরেছেন তিনি ৷

মোস্তাফার ছেলের বক্তব্য :

মোস্তাফার বড় ছেলে মীর ইমদাদ বলেন, “তখন আমরা দুই ভাই খুব ছোট ৷ আমি সাড়ে তিন বছরের ৷ সেদিনের কথা আমার মনে নেই ৷ মা আর দাদির মুখে শুনেছি, বাবা উত্তরপ্রদেশে খাটতে গিয়েছিল ৷ ফেরার সময় একটি স্টেশনে ট্রেন থামলে জল নিতে নেমেছিল ৷ ট্রেন বাবাকে ছেড়ে চলে যায় ৷ বাবার সঙ্গীরা গ্রামে ফিরে জানায়, বাবা জল নেওয়ার পর আর ট্রেনে চাপতে পারেনি ৷ তখন বাড়ির লোকজন বাবাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করে ৷ পুলিশকেও সব জানায় ৷ কিন্তু বাবার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ কয়েকদিন আগে গ্রামের কয়েকজন সেখানে খাটতে গিয়েছিল ৷ তারা দেখতে পায়, বাবা ভুট্টার জমিতে জল দিচ্ছে ৷ ওরা বাবাকে চিনতে পারে ৷ বাবার সঙ্গে কথা বলে ৷ বাবা গাজিয়াবাদের কোনও এক প্রধানের বাড়িতে কাজ করত ৷ ওরাই বাবাকে স্টেশন থেকে নিয়ে গিয়েছিল ৷ পুরনো দিনের কথা বাবার মনে আছে ৷ আমাদের সবাইকে চিনতে পারছে ৷ আমরা কয়েকজন উত্তরপ্রদেশ থেকে বাবাকে বাড়ি ফিরিয়ে এনেছি ৷ আজ গ্রামের সবাই বাবাকে দেখতে এসেছে ৷ পঞ্চায়েতের সদস্য ও প্রধানের প্রতিনিধিও এসেছেন ৷”

পঞ্চায়েত প্রধানের বক্তব্য :

এনায়েতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের প্রতিনিধি সুনন্দ মজুমদার বলেন, “আজ আমরা এমন একটা ঘটনার সাক্ষী হলাম যেটা কোনও সিনেমাকেও হার মানাবে ৷ দীর্ঘ 15 বছর পর মোস্তাফা ঘরে ফিরে এসেছেন ৷ 15 বছর আগে তিনি গাজিয়াবাদে কাজ করতে গিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান ৷ তাঁর খোঁজ পেতে পরিবার ও পুলিশ অনেক চেষ্টা করেছে ৷ কিন্তু তাঁকে পাওয়া যায়নি ৷ তাঁর ঘরে ফেরার আশা সবাই ছেড়ে দিয়েছিল ৷ কিন্তু অভাবনীয়ভাবে তাঁকে উদ্ধার করা গিয়েছে ৷ তিনি জানিয়েছেন, ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার পর স্টেশনে তিনি উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরছিলেন ৷ এক ব্যক্তি তাঁকে উদ্ধার করে তাঁর বাড়ি নিয়ে যান ৷ সেখানেই ছিলেন তিনি ৷ তাঁকে প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়েছে ৷ এখানকার কিছু পরিযায়ী শ্রমিক গাজিয়াবাদে কাজ করতে গিয়ে তাঁকে খুঁজে পান ৷ তাঁরা মোস্তাফাকে চিনতে পারেন ৷ তাঁদের মাধ্যমে আজ মোস্তাফা ঘরে ফিরেছেন ৷ 15 বছর পর ছেলেকে ফিরে পেয়ে তাঁর মা কান্নাকাটি করছেন ৷ আবেগে স্ত্রী নির্বাক হয়ে গিয়েছেন ৷ মোস্তাফাও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ৷ ঠিকমতো কথা বলতে পারছেন না ৷ মোস্তাফার ঘরে ফেরার খবর পেয়ে প্রত্যেক গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য এখানে চলে এসেছেন ৷ মোস্তাফা ও তাঁর পরিবারের জন্য যা যা করা যায়, আমরা করব ৷”

আরও পড়ুন:- ১ জুন থেকে এই ফোনগুলিতে কাজ করবে না WhatsApp, আপনার ফোন নেই তো?

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন