Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ১২ লক্ষ টাকা অবধি আয়ে কর শূন্য! কেন্দ্রীয় বাজেট পেশের সময় নির্মলা সীতারামনের ঘোষণা শেষ হওয়া মাত্রই দেশের ৯ কোটি করদাতার গরিষ্ঠ অংশ ক্যালকুলেটর নিয়ে বসে পড়েছিলেন, ২৫-২৬ অর্থবর্ষে বাড়তি ক’টা টাকা তা হলে থাকছে তাঁদের পকেটে।
তবে তখনও (বা এখনও অনেকেই) তাঁরা ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেননি ফাইন প্রিন্টটা কোথায়, ক্যাচটা কোথায়! যেটা আগে বুঝে না নিলে ট্যাক্স প্ল্যানিং কিন্তু মাটি হয়ে যেতে বাধ্য।
ধরা যাক ক’বাবুর কথা। শুধু মাসমাইনে দিয়ে আর ক’জনের চলে বলুন। তাই আয়ের সোর্স ডাইভার্সিফাই করতে যোগ করেছেন ইন্টারেস্ট ইনকাম। আগামী বছরে পারিবারিক ফ্ল্যাট বেচে পাওয়া টাকার ক্যাপিটাল গেনসও থাকবে। আর সঙ্গে রয়েছে শেয়ারবাজার-মিউচুয়াল ফান্ড ইনকামের উপর লং-শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেনস।
এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই, যে এগুলি সব মিলিয়ে বছরে ১২ লক্ষ টাকা হলে, সীতারামনের আশ্বাসে ২৫-২৬ অর্থবর্ষে তাঁকে কোনও ট্যাক্স দিতে হবে না।
কারণ নির্মলা কোথাও বলেননি, যে ১২ লক্ষ টাকা সম্পূর্ণ করছাড় যোগ্য আয়। তিনি যেটা বলেছেন, সেটা হলো, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৭৫ হাজার টাকা বাদ দেওয়ার পর ১২ লক্ষ টাকা অবধি রেগুলার ট্যাক্সেবল ইনকামের উপর u/s 87-A ধারায় সম্পূর্ণ ট্যাক্সেই ‘রিবেট’ পাওয়া যাবে।
আর সেটাই ক্যাচ! আরে আমরা কি অত টার্মিনোলজি, জার্গন-টার্গন বুঝি? ছাড় মানে তো ছাড়। আমার ১২.৭৫ লক্ষ টাকা অবধি বার্ষিক আয়। বাদ দিলাম ৭৫,০০০ এর স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন। পড়ে রইল ১২ লক্ষ টাকা, তা হলে কর ‘শূন্য’ ব্যস, অঙ্ক এই তো?
ঠিক! এবং একই সঙ্গে ভুলও। কী হেঁয়ালি করছেন বলার আগে জেনে রাখুন, যদি এই ১২.৭৫ লক্ষ টাকা আয় যদি আপনার স্যালারি/পেনশন, বিজ়নেস ইনকাম, এফডি ইন্টারেস্ট, ডিভিডেন্ড, রেন্টাল ইনকাম-এর মতো হেড থেকে আসে, তা হলে এটা ঠিক।
আর যদি এর মধ্যে শেয়ার এবং ইক্যুইটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে প্রাপ্ত ক্যাপিটাল গেনস বা জমি/বাড়ি বিক্রি থেকে জন্মানো ক্যাপিটাল গেনস ঢুকে থাকে তা হলে, ঠিক নয়। আয়কর আইনের u/s 87-A ধারায়, এগুলি ‘রিবেট’ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। মানে সোজা কথায়, ইনকাম ট্যাক্স স্ল্যাবের রেট ছাড়া যে সব আয়ের উৎসে কর স্পেশ্যাল রেট (লং-শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেনস) মেনে হয়, সেখান থেকে আয় যদি আপনার বার্ষিক আয়ের ব্যালান্স শিটে ঢুকে থাকে, তা হলে ১২.৭৫ লক্ষ টাকা তো দূর, ১২ লক্ষ হলেও ‘ভালো’ টাকাই ট্যাক্স দিতে হতে হবে আপনাকে। লং টার্ম ক্যাপিটাল গেনস এর সঙ্গেই এই রিবেট না পাওয়ার তালিকায় থাকবে লটারি বা বেটিং থেকে প্রাপ্ত আয়ও।
ব্যাপারটা বুঝতে হলে আপনাকে ডান দিকের চার্ট ভালো করে পড়তে হবে। একই আয়ের উৎস এবং একই টাকা আয় থাকলেও, নতুন নিয়মে বাড়তি কিছু টাকা করছাড় পাওয়া যাবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু তার পরেও ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর ‘শূন্য’ হওয়ার কোনও পথ রাখেননি নির্মলা।
তবে এখানে বেশ কিছু জিনিস বোঝার রয়েছে। লিস্টেড সিকিওরিটি ছাড়া যে কোনও অ্যাসেট বিক্রিতে শর্ট টার্ম ক্যাপিটাল গেন হলে, তার জন্য কিন্তু আয়কর আইনের u/s 87-A ধারায় ‘রিবেট’ পাওয়া যাবে। কারণ, তার ট্যাক্সেবিলিটি স্ল্যাব রেট মেনেই হয়। কিন্তু লং টার্ম ক্যাপিটাল গেনস এর ক্ষেত্রে রিবেট এর কোনও সংস্থান নেই।
ধরা যাক, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ৭৫ হাজার টাকা বাদ দেওয়ার পর আপনার বার্ষিক রেগুলার ট্যাক্সেবল ইনকাম-এর পরিমাণ ১২ লক্ষ টাকাই। যার মধ্যে ২ লক্ষ টাকা লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেনস। বা আপনার বার্ষিক আয় ১৫ লক্ষ টাকার মধ্যে ৪ লক্ষ টাকা লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেনস। এই দুই ক্ষেত্রেই ২/৩ লক্ষ টাকার উপর ১২.৫% হারে ট্যাক্স হিসেব করতে হবে এবং বাদবাকি টাকায় কর কিন্তু শূন্য হবে না মোটেই। তা স্ল্যাব রেট মেনে চুকাতে হবে। পাশের চার্ট দেখুন। ১২ লক্ষ টাকা ট্যাক্সেবল ইনকামে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে যেখানে বাকি টাকার উপর স্ল্যাব মেনে ৫০ হাজার টাকা ট্যাক্স দিতে হত, সেখানে নতুন স্ল্যাব মেনে ট্যাক্স ৪০,০০০ হাজার টাকা হচ্ছে।
আগের নিয়মে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ওই ৫০ হাজার টাকার উপর কোনও ‘রিবেট’ মিলত না আয়কর আইনের u/s 87-A ধারায়, কারণ তখন তা পেতে আয়ের ঊর্ধ্বসীমা ছিল বার্ষিক ৭ লক্ষ টাকা, যা বেড়ে ১২ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। ফলে একই আয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে যেখানে প্রায় ৬০,০০০ টাকা ট্যাক্স চাপত আপনার, সেখানে ২৫-২৬ অর্থবর্ষে (এডুকেশান সেস) ধরে প্রায় ৮০% ট্যাক্স কম হতে চলেছে ক’বাবুর।
মাথায় রাখতে হবে, ৫-১০ টাকার এদিক ওদিকেও কিন্তু ট্যাক্স রিবেট পাওয়া বা না-পাওয়া নির্ধারিত হয়ে যাবে। ফলে, অর্থবছর শুরুর আগে ট্যাক্স প্ল্যানিং করে রাখা অত্যন্ত জরুরি। এবং তার জন্য কোন খাতে ছাড় পাওয়া সম্ভব, কোন খাতে নয়, সেটা ভালো করে বুঝে নিতে হবে।
এটাও মাথায় রাখুন, এইসব হিসেবই কিন্তু নিউ রেজ়িম-এর জন্য। ফলে ওল্ড রেজ়িমে আয়কর রিটার্ন দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলে, চিত্রনাট্যটা সে ভাবেই কিন্তু ছকে ফেলতে হবে আপনাকে।