Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- দক্ষিণবঙ্গের গরু চুরির সবথেকে বড় চক্রের পাণ্ডা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে অবশেষে গ্রেফতার করল বাঁকুড়ার জয়পুর থানার পুলিশ। ২০২৫-এর জানুয়ারি মাসে বাঁকুড়ার কোতুলপুর ও জয়পুর থানা এলাকায় একসঙ্গে আটটি গোরু চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে পুর্ব মেদিনীপুর জেলার চণ্ডীপুর থানা এলাকা থেকে ওই পান্ডা ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের হেফাজত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি করা গোরু। পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত একটি ট্রাককে। পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম সৌরভ ঘোষ ও শেখ আমির হোসেন। আমিরের বাড়ি হুগলির খানাকুল থানা এলাকায় হলেও মূল পান্ডা সৌরভের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার নোদাখালি এলাকায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে চলতি বছর ১৯ জানুয়ারি বাঁকুড়ার কোতুলপুর ও জয়পুর থানা এলাকায় একাধিক গরু চুরির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় সিট গঠন করে তদন্তে নেমে সে সময় জয়পুর থানা এলাকা থেকে বেশ কিছু চুরি করা গরু-সহ একটি ট্রাক আটক করে পুলিশ। ট্রাক থেকে আটক করা হয় বেশ কয়েকজন পাচারকারীকেও। এরপর তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে ধীরে ধীরে ওই চক্রের মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করলেও চক্রের মূল পান্ডা সৌরভ ঘোষের নাগাল কিছুতেই পাচ্ছিল না পুলিশ। অবশেষে বিশেষ প্রযুক্তি, কৌশল ও সূত্র কাজে লাগিয়ে পুর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর থেকে এক সহযোগী- সহ সৌরভকে গ্রেপ্তার করে জয়পুর থানার পুলিশ।
আরও পড়ুন:- সুখবর ! সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে স্টেট ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! শীঘ্রই আবেদন করুন
ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গরু চুরি পাচার কাণ্ডের যে তথ্য পুলিশের হাতে আসে তাতে চক্ষু চড়কগাছ হয় তদন্তকারীদের। জানা গিয়েছে সৌরভ ঘোষ এই চক্র পরিচালনা করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরু চুরি ও পাচারের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগণার মহেশতলা, নদেখালি ও ফলতা এলাকা থেকে পেশাদার চোর নিয়োগ করত সৌরভ। নিযুক্তদের চুরি ও পাচারের জন্য গোরু পিছু দেওয়া হত ৫০০ টাকা। আগে থেকে রেইকি করে একসঙ্গে একইদিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ টি গোরু চুরির ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে তা নিযুক্ত পেশাদার চোরদের বুঝিয়ে দিত সৌরভই। চুরির পর দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে গোরু নিয়ে যাওয়া হত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায়। চুরি করা গোরু পরিবহণের জন্যও বিশেষ কৌশল ব্যবহার করত সৌরভ। ফাইনান্সের কিস্তি চালাতে না পারা ট্রাক মালিকদের কাছ থেকে ফাইনান্সের কিস্তি মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে ট্রাক ধার নিত সৌরভ। সেই ট্রাকগুলিকেই ব্যবহার করা হত গরু পরিবহণের জন্য। গরু চুরি করে তা পাচার করা পর্যন্ত গোরু পিছু সৌরভের খরচ হত মেরেকেটে এক হাজার টাকা।
সেই গরুই দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিভিন্ন কষাইখানায় বিক্রি করা হত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। বিপুল লাভের এই ব্যবসায় অত্যন্ত বিলাস বহুল জীবন যাপন করত সৌরভ। মাসের বেশিরভাগ দিনই সে বাড়িতে না কাটিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে নামীদামী হোটেলে দিন কাটাতো। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে সৌরভ মোবাইল ফোন ব্যবহার করত খুব কম। ব্যবহার করলেও অল্প দিনের ব্যবধানে বদল করে ফেলত সিম কার্ড। আর এভাবেই ধীরে ধীরে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দিয়েছিল নিজের সাম্রাজ্য। পুলিশের দাবী চক্রের মূল পান্ডা সৌরভকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাজকর্ম নিয়ে আরো বিশদে জানার পাশাপাশি চক্রে আর কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা তা জানার চেষ্টা চালানো হবে।
আরও পড়ুন:- একটাই বাড়িতে বাস করেন গোটা শহরের মানুষ, জানুন কেন এমন সিস্টেম
আরও পড়ুন:- যাদবপুরের পড়ুয়াদের ‘কুকুরের’ সঙ্গে তুলনা কল্যাণের, জানুন বিস্তারিত