সরকারি জমির পাট্টা বিলিতে অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ, বিস্তারিত জেনে নিন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- প্রাসাদোপম বাড়ি, সেই বাড়ির গ্যারেজে রয়েছে চারচাকা গাড়িও ৷ বাড়ির এক সদস্য তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ ৷ তাঁর এক ভাই তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ৷ রীতিমতো বিত্তশালী পরিবার ৷ অভিযোগ, তৃণমূলের সেই জনপ্রতিনিধির ভাই আর আত্মীয়দের মধ্যে বিলি করা হয়েছে প্রায় তিন বিঘা সরকারি জমির পাট্টা ৷ আর সেই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ঘাসফুল শিবিরেরই একাংশ, সরব বিরোধীরাও ৷

ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকে ৷ যদিও এ নিয়ে মুখ কুলুপ এঁটেছেন অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলাম ও তাঁর পরিবার ৷ তবে, তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য কর্মাধ্যক্ষ ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে শোরগোল পড়েছে এলাকায় ৷

হরিশচন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকে জমি সংক্রান্ত অভিযোগ নতুন নয় ৷ সম্প্রতি এই ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুরজিৎ দাস এবং বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে পাট্টা বিলি নিয়ে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল ৷ অভিযোগ, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই দু’জন বিত্তশালীদের সরকারি জমির পাট্টা বিলি করছেন ৷ এর বিরুদ্ধে ক’দিন আগে গভীর রাত পর্যন্ত ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে তাঁর দফতরে ঘেরাও করে রাখেন পঞ্চায়েত সমিতির বেশিরভাগ সদস্য ৷ যদিও, পুলিশি হস্তক্ষেপে তাঁরা নিজেদের অবস্থান তুলে নেন ৷

তবে, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের বিক্ষোভের জেরে নড়েচড়ে বসে চাঁচল মহকুমা প্রশাসন ৷ হরিশচন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকে পাট্টা বিলির বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ তখনই দেখা যায়, পাট্টা প্রাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষের ভাই তথা স্থানীয় ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সামিরুল ইসলামের ৷

সেই সঙ্গে রয়েছে তাঁর ভাই মানজারুল ইসলাম, দুই ভ্রাতৃবধূ আফসানা খাতুন ও মমতাজ বিবি, সিভিক ভলান্টিয়ার ভাইপো সাব্বির আহমেদ-সহ চার নিকটাত্মীয়ের নামও ৷ প্রত্যেকের নামে 25 শতক করে সরকারি জমির পাট্টা বরাদ্দ করা হয়েছে ৷ এরপরেই শোরগোল পড়ে যায় গোটা এলাকায় ৷ বিত্তশালী হওয়ার পরও তাঁরা কীভাবে সরকারি জমির পাট্টা পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷

Government Land Scam

হরিশচন্দ্রপুর-2 ব্লকে সরকারি জমির পাট্টার নথি ৷ (ছবি- ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর)

পঞ্চায়েত সমিতির মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ নজিবুর রহমানের বক্তব্য, “মূলত পাট্টা সংক্রান্ত বিষয়েই আমরা পুলিশ ও মহকুমা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছি ৷ আমাদের ভূমি কর্মাধ্যক্ষ নিয়ম না-মেনে তাঁর আত্মীয়স্বজনকে সরকারি জমির পাট্টা পাইয়ে দিয়েছেন ৷ তৃণমূলের নেতা হলেও তাঁর রেহাই নেই ৷ দুর্নীতিতে যে জড়িত থাকবে, আমরা তার বিরুদ্ধে সরব হব ৷ সরকারি আধিকারিক হলেও আমরা দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করব না ৷ তাই আমরা বিএল অ্যান্ড এলআরও’র বিরুদ্ধেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ এখনও পর্যন্ত জানতে পেরেছি বিএল অ্যান্ড এলআরও এবং ভূমি কর্মাধ্যক্ষ তিন থেকে সাড়ে তিন বিঘা সরকারি জমির পাট্টা বেআইনিভাবে ভুল লোকজনকে পাইয়ে দিয়েছেন ৷ কিন্তু, এর পরিমাণ আরও বাড়বে ৷ সেটা আগামী শুক্রবার পরিষ্কার জানতে পারব ৷ বিএল অ্যান্ড এলআরও অফিসে যে কোনও কাজ করতে গেলেই মোটা অংকের টাকা লাগছে ৷ আমরা এ নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছি ৷”

নজিবুর বলেন, “বিএল অ্যান্ড এলআরও সরকারি নিয়ম মেনে পঞ্চায়েত সমিতিতে বৈঠক এবং রেজোলিউশন করেই পাট্টা প্রাপকদের তালিকা তৈরি করেছিলেন ৷ কিন্তু পরবর্তী সময়ে রেজোলিউশন হয়ে যাওয়া তালিকা থেকে পাট্টা প্রাপকদের নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম ঢোকানো হয়েছে ৷ বিএল অ্যান্ড এলআরও এবং ভূমি কর্মাধ্যক্ষ যে এমন কাজ করতে পারেন, সেটা আমরা কেউই বুঝতে পারিনি ৷ এই এলাকার মানুষজনের উদ্দেশে আমার বার্তা, তাঁরা যেন কোথাও কোনও দালাল চক্রের ফাঁদে পা না-দেন ৷ তাঁরা কোনও বিষয়ে আমাদের পরামর্শ নিতে চাইলে, আমরা তাঁদের সবরকম সহায়তা করতে তৈরি রয়েছি ৷”

এই ঘটনা নিয়ে সুর চড়িয়েছে বিজেপি ও সিপিআইএম ৷ বিজেপির জেলা কমিটির সদস্য কিষান কেডিয়া বলছেন, “তৃণমূল মানেই চোর ৷ তাদের অধিকাংশ নেতাই চোর ৷ কিন্তু, হরিশচন্দ্রপুরে তৃণমূলের মধ্যে কিছু লোক এখনও সৎ ৷ তাই ওরা বেশি চুরি করতে পারছে না ৷ আজ যারা চুরি করেছে, তারা গরিব মানুষের জমি চুরি করে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বাড়িয়েছে ৷ ওদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়েরের পাশাপাশি তদন্ত হওয়া উচিত ৷ ভূমি কর্মাধ্যক্ষের এই চুরি পঞ্চায়েত সমিতির 75 শতাংশের বেশি সদস্য ধরে ফেলেছেন ৷ অর্থাৎ, ওই ভূমি কর্মাধ্যক্ষের সঙ্গে কোনও বড় নেতার যোগসাজশ রয়েছে ৷ তা না-হলে তিনি এই কাজ করতে পারেন না ৷ এটা প্রশাসনকেও দেখতে হবে ৷”

এ নিয়ে সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য জামিল ফিরদৌস বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারটাই সারদা-নারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে তৈরি হয়েছে ৷ দিদিমণি রাইটার্স হোক, নবান্ন হোক কিংবা জনসভা, সব জায়গাতেই বলে থাকেন, আমি চুরি করব ৷ তুই বলার কে ? যে প্রশাসনের এই ভাষা তাতে স্বাভাবিকভাবেই গোটা পশ্চিম বাংলায় পঞ্চায়েত হোক, সরকারি হোক, নবান্নের 14তলা থেকে শুরু করে, কালীঘাট ও বুথস্তর পর্যন্ত দুর্নীতিতে ভরে গিয়েছে ৷ দুর্নীতিই তৃণমূলের বড় পেশা ৷ দুর্নীতি ছাড়া তৃণমূল এক সেকেন্ডও চলতে পারবে না ৷”

এ’বিষয়ে অভিযুক্ত বিএল অ্যান্ড এলআরও সুরজিৎ দাস কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷ ফোন ধরেননি বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মোজাহিদুল ইসলাম ৷ তবে, চাঁচলের মহকুমাশাসক সৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে আইনানুগ পদক্ষেপ করা হবে ৷”

আরও পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গে টোটো নিয়ে নতুন নিয়ম চালু, জানা জরুরি

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন