Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পহেলগাঁও হামলার জবাব কীভাবে দেবে ভারত, তা নিয়ে নানা জল্পনা চলছেই। তার মাঝেই দেশবাসীকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত করছে সরকার। বুধবার দেশজুড়ে চলবে মক ড্রিল। দেশের ২৫৯টি এলাকায় এই মহড়া চলবে। কী কী হবে এই মক ড্রিলে? এই সময়ে সাধারণ নাগরিককে কী করতে হবে? রইল সব প্রশ্নের উত্তর।
১৯৭১ সালের পর এই প্রথম, দেশের সমস্ত রাজ্যে চলবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মহড়া। দেশের ২৭টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ২৫৯টি জায়গায় এই মহড়া হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের ৩১টি জায়গাও। যা এই আবহে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
কী কী হবে মক ড্রিলে?
মূলত বিমান হামলা হলে কী পদক্ষেপ করতে হবে তারই মহড়া চলবে বুধবার। সব রাজ্যকে পাঠানো নির্দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, দেখে নিতে হবে বিমান হামলার সময়ে সতর্কতামূলক সাইরেন ব্যবস্থা সক্রিয় রয়েছে কি না। পাশাপাশি রাতে হামলার ক্ষেত্রে যুদ্ধবিমানের খবর পাওয়া মাত্র যাতে হঠাৎ করে সমস্ত আলো নিভিয়ে দিয়ে ‘ক্র্যাশ ব্ল্যাকআউট’ করে শত্রু বিমানবাহিনীকে বিভ্রান্ত করে দেওয়া যায়, তারও মহড়া হবে।
গুরুত্বপূর্ণ ভবন, সেতু, তেলের ডিপো, রেলস্টেশন বা বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো আগে থেকেই ঢেকে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে স্যাটেলাইটে ধরা না পড়ে।
সিভিল ডিফেন্স বা অসামরিক প্রতিরক্ষা প্রোটোকল সম্পর্কে নাগরিক ও পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, হামলার সময়ে বা জরুরি অবস্থায় নাগরিকদের যথাসম্ভব সমন্বয় রেখে দ্রুততার সঙ্গে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার প্রশিক্ষণ হবে।
জেলাশাসক, অসামরিক প্রতিরক্ষা স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ডদের সঙ্গে স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে মক ড্রিলে। স্কুল, অফিস, কমিউনিটি সেন্টারে হবে ওয়ার্কশপ। হামলা হলে, কাছাকাছি আশ্রয়স্থল কীভাবে খুঁজে বের করতে হবে, তা শেখানো হবে। হামলার মুহূর্তে মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ করা, প্রাথমিক চিকিৎসা করাও শেখানো হবে তাদের।
সাধারণ নাগরিকরা মক ড্রিলের সময়ে কী করবেন?
হঠাৎ ব্ল্যাকআউট বা অন্ধকার হয়ে যাবে শহর। নিভে যাবে সমস্ত আলো। অন্ধকারে কোনও এয়ার স্ট্রাইক হলে মোকাবিলা করতে হবে এভাবেই।
এয়ার রেড সাইরেন বাজবে দেশের ২৫৯ এলাকায়। সাধারণ মানুষকে সতর্ক করার জন্য বাজবে এই অ্যালার্ম। আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। প্রথম সাইরেন বাজার ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে সকলকে ঘরে কিংবা নিরাপদ স্থানে ঢুকে পড়তে হয়। জানলা-দরজা বন্ধ করে ফেলতে হয়। সমস্ত আলো নিভিয়ে ফেলতে হয়। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হলে নাগরিকদের কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া হবে সেই প্রস্তুতি যাচাই করে নিতেই বাজানো হবে এই সাইরেন। সেই অভ্যাস তৈরির কারণেই মহড়ায় বাজবে সাইরেন।
নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হাতের কাছে রাখতে হবে টর্চ, প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সহ মেডিক্যাল কিট।
এ ছাড়াও সঙ্গে রাখতে হবে নগদ। ব্ল্যাকআউটের সময়ে ইলেকট্রনিক ডিভাইস কাজ না করার সম্ভাবনা প্রবল। ডিজিটাল লেনদেন পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। ফলে হাতে টাকা রাখা অত্যন্ত জরুরি বলেই জানানো হয়েছে।
ওয়ার সাইরেন কী?
এই সাইরেনগুলি সাধারণত প্রশাসনিক ভবন, পুলিশ সদর দফতর, ফায়ার স্টেশন, সামরিক ঘাঁটি এবং শহরের জনবহুল এলাকায় উঁচু স্থানে লাগানো হয়। এর শব্দে একটানা অস্বস্তিকর কম্পন থাকবে, যা সাধারণ হর্ন বা অ্যাম্বুল্যান্সের শব্দ থেকে একদম আলাদা হবে। ২-৫ কিলোমিটার পর্যন্তও এই সাইরেন শোনা যাবে। বাজানোর অর্থ সাধারণ মানুষকে যুদ্ধ বা বিমানহানার মতো পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো। সেই মহড়াই চলবে বুধবার।
এর আগে কখন বেজেছিল সাইরেন?
১৯৬২-চিনের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে।
১৯৬৫ এবং ১৯৭১, পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে।
১৯৯৯-এ কার্গিল যুদ্ধের সময়ে।
আরও পড়ুন:- সন্তানদের আমেরিকা বর্ডারে ছেড়ে চলে যাচ্ছে ভারতীয় বাবা-মা, কারণ জেনে নিন