শান্তিনিকেতনের আদিবাসী গ্রামে প্রথম উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ 2 বীরাঙ্গনা ৷

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ছেলেবেলায় বাবাকে হারিয়েছে ৷ মায়ের সঙ্গে মাঠে চাষের কাজ করে ৷ তার ফাঁকে চলে পড়াশোনা । এভাবেই শান্তিনিকেতনের আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রাম সাহেবডাঙা থেকে প্রথম উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করল দুই বীরাঙ্গনা । এর আগে, এই গ্রামের মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরনোও তাদেরই হাত ধরে ৷

সুমিত্রা টুডু ও বাসন্তি টুডু ৷ তাদের দেখেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে গ্রামের আর পাঁচটা খুদের ৷ দুই কন্যাকে নিয়ে উচ্ছ্বাসিত গোটা গ্রাম ৷ তবে তাদের সাফল্যের এই পথটা সহজ ছিল না ৷ সেকথা বলতে গিয়ে তাদের গলা ধরে আসে ৷ বাঁধ ভাঙে চোখের জল ৷ গ্রামে বাল্যবিবাহ রদ ও ছোটদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী করে তোলাই লক্ষ্য দুই ছাত্রীর ৷

ETV BHARAT

স্কুল থেকে মার্কশিট নিচ্ছে আদিবাসী ছাত্রী 

 

আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন শহর বোলপুরের অদূরে কংকালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত সম্পূর্ণ আদিবাসী অধ্যুষিত সাহেবডাঙা গ্রাম ৷ শান্তিনিকেতন থানার এই গ্রামে অধিকাংশই কাঁচা ঘর ৷ অর্থাৎ, মেলেনি সরকারি আবাস যোজনার বাড়ি ৷ নেই পর্যপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা ৷ একটি নলকূপ ভেঙে গেলে অন্যটিই পুরো গ্রামের একমাত্র ভরসা ৷ অপরিচ্ছন্ন পুকুর, ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট । গ্রাম সড়ক যোজনাও পৌঁছয়নি এই সাহেবডাঙায় ৷

ETV BHARAT

আদিবাসী গ্রামে প্রথম উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ 2 ছাত্রী 

 

গ্রামে নেই কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় ৷ রয়েছে একটি মাত্র শিশুশিক্ষা কেন্দ্র । অথচ এই গ্রামে বাস প্রায় 46টি পরিবারের ৷ উন্নয়নের আলো পৌঁছায়নি এহেন গ্রাম থেকে প্রথমবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করল বোলপুর শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যালয়ের ছাত্রী বাসন্তী টুডু ও সুমিত্রা টুডু । এর আগে গ্রামের কেউ এই গণ্ডি পার করেনি ৷

আরও পড়ুন:- পরমাণু হামলায় কীরকম ক্ষতির সম্ভাবনা? জানুন

উল্লেখ্য, এই বীরভূম জেলাতেই রয়েছে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী, বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয় সহ একাধিক কলেজ ৷ শিল্প, শিক্ষা, সংস্কৃতির পীঠস্থান বোলপুর-শান্তিনিকেতন । অথচ বিশ্বভারতী থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে একটি গ্রামে শিক্ষার আলো পৌঁছল এতকাল পর ৷ তাও এই দুই ছাত্রীর হাত ধরে । যা একটা নজির ৷

তাদের এই সাফল্যের নেপথ্যে যিনি আছেন তিনি হলেন শিক্ষক বুদ্ধিশ্বর মণ্ডল ৷ বোলপুরের রজতপুর গ্রামের পূর্ব-বাহাদুরপুরের বাসিন্দা তিনি ৷ তাঁর বাড়ি থেকে সাহেবডাঙা গ্রামের দূরত্ব প্রায় 12 কিলোমিটার । সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে দিনের পর দিন এই গ্রামে গিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়িয়েছেন তিনি ৷ আজ গ্রামবাসীরা তাঁর জয়জয়কার করছেন ৷

ETV BHARAT

মেয়ের জন্য খুশিতে চোখে জল মায়ের (নিজস্ব চিত্র)

 

বুদ্ধিশ্বর মণ্ডল বলেন, “এরা খুব কষ্ট করে বড় হয়েছে । সরকারি কোনও সহযোগিতা নেই ৷ মাঠে ধান কাটা থেকে ধান পোঁতা, এই সমস্ত কাজ করে তার ফাঁকে পড়াশোনা করেছে ৷ গ্রামে এরাই প্রথম মাধ্যমিক পাশ করেছিল ৷ এবার এরাই প্রথম উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হল ৷ আমি খুবই খুশি ।”

সুমিত্রা ও বাসন্তী ছোটবেলাতেই তাদের বাবাকে হারিয়েছে ৷ গ্রামে প্রায় পাশাপাশিই তাদের বাড়ি ৷ দু’জনের মায়ের নাম একই, লক্ষ্মী টুডু ৷ মায়ের সঙ্গে গ্রামের মাঠে ধান পোঁতা, ধান কাটার কাজ করে তারা ৷ তাও নিজেদের জমি নয় ৷ অপরের জমিতে দিনমজুরের কাজ করে ৷ এরই ফাঁকে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিকে উত্তীর্ণ সুমিত্রা ও বাসন্তী । বাসন্তীর প্রাপ্ত নম্বর 229 ও সুমিত্রার প্রাপ্ত নম্বর 219 ।

তাদের দেখে গ্রামের বাকি খুদেরাও এখন পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে ৷ গত কয়েক বছরে এই গ্রাম ও আশপাশের প্রায় 60 জন ছোট থেকে বড় ছেলেমেয়ে পড়াশোনার প্রতি যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে ৷ এর ফলে আপ্লুত সকলে ৷ অথচ তাদের নিয়ে কোনও মাতামাতি নেই প্রশাসনের কোনও কর্তাব্যক্তির । মাতামাতি নেই কোনও বিজ্ঞাপন কোম্পানির ৷

নিজেদের জীবনসংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল চলে আসে সুমিত্রা ও বাসন্তীর ৷ তারা বলে, “খুব আনন্দ হচ্ছে । খুব কষ্ট করতে হয়েছে ছোট থেকে । মায়ের সঙ্গে মাঠে কাজ করেছি, এখনও করি ৷ ফেই ফাঁকেই পড়াশোনা করেছি । বুদ্ধিশ্বর স্যার আমাদের সবসময় সাহায্য করেছেন ৷ সবার জন্যই এই সাফল্য ৷ মা খুব খুশি ৷ তবে আমাদের গ্রামের অবস্থা ভালো নয় ৷ জল নেই, রাস্তা নেই ৷ সরকারি কোনও সাহায্য মেলেনি কোনওদিন । আমরা গ্রামের বাকি ছেলেমেয়েদের পড়াতে চাই ৷ আর যেন তাড়াতাড়ি বিয়ে না-করে কেউ, পড়াশোনা করুক ৷ পড়াশোনা করলে তবেই সবাই ভালোবাসবে । ওরা নিজেরা কিছু করতে পারবে ৷”

দু’জনের মা-ই জানালেন, খুব কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছেন ৷ আজ মেয়ের জন্য তারা খুবই খুশি ও গর্বিত ৷ সুমিত্রা ও বাসন্তীর সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা গ্রাম ৷ তালাবু বাস্কি নামে এক গ্রামবাসী বলেন, “ছোট থেকেই ওদের বাবা নেই ৷ দিনমজুরের কাজ করে । ওদের জন্য আমরা খুব খুশি ৷ গ্রামের বাকি বাচ্চারাও এগিয়ে আসছে পড়তে ৷ বুদ্ধিশ্বর স্যার সবথেকে বেশি সময় দিয়েছেন ৷ ওঁর জন্যই সব কিছু হয়েছে । আজ গ্রামের গর্ব ওরা ৷”

আরও পড়ুন:- আর ২৫ বছর বাঁচতে পারলেই অমর হয়ে যাবে মানুষ ? গবেষণায় চাঞ্চল্য

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন