150 বছর আগে আবিষ্কৃত গিরগিটির গোপন রহস্য উন্মোচন বাঙালি বিজ্ঞানীর, বিস্তারিত জেনে নিন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- আজ থেকে প্রায় দেড়শো বছর আগে ব্রিটিশ ভারতের প্রাণীবিদ্যা জরিপের গবেষক ফার্ডিনান্ড স্টোলিজকা পার্সিয়ান লং-টেইল্ড ডেজার্ট গিরগিটি আবিষ্কার করেছিলেন । মূলত, সিন্ধু নদী তীরবর্তী অঞ্চল করাচি, সাক্কার-সহ মরু এলাকা থেকে পাঁচটি নমুনা সংগ্রহ করেন তিনি । সেই নমুনা দীর্ঘদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ‘মেসালিনা ওয়াটসোনানা’ নামে পরিচিত এই পার্সিয়ান লং-টেইল্ড ডেজার্ট গিরগিটির আবিষ্কার করেন। কিন্তু, সেই নমুনাগুলো ভারতে আছে না অন্য কোথাও, তা নিয়ে এতদিন ধাঁধার মধ্যে ছিলেন বিজ্ঞানীরা।

এর মধ্যে ইরান-সহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা সেই নমুনা সংগ্রহ বা তা চিহ্নিতকরণের জন্য বেশ কয়েকবার চেষ্টাও চালিয়েছিলেন। কিন্তু, তা নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত এগিয়েও সম্পূর্ণ কাজ সম্ভব হয়নি। অবশেষে সেই সমস্যার অর্থাৎ ধাঁধার সত্য উদঘাটন করলেন দুই বিজ্ঞানী। এই রহস্য উন্মোচনের তথ্য সম্প্রতি বিজ্ঞান জার্নাল Zootaxa-তে প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় প্রাণীবিদ্যা জরিপের দুই গবেষক মর্ফলজি প্রক্রিয়ায় ‘মেসালিনা ওয়াটসোনানা’র রহস্য উন্মোচন করেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন বাঙালি গবেষক সুমীধ রায় এবং ওড়িশার প্রত্যুষ পি মহাপাত্র।

বাঙালি গবেষক সুমীধ রায় বলেন, “মেসালিনা ওয়াটসোনানা নামে পরিচিত এই গিরগিটি মূলত 1872 সালে ফার্ডিনান্ড স্টোলিজকা নামে একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আবিষ্কার করছিলেন। তারপর স্টোলিজকার সংগ্রহ নিয়ে কোনও কাজ হয়নি। সরকারি নাম নিয়েও ধন্দ
থেকে যায় । ZSI (জুওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) সংগ্রহ তালিকায় থাকা গিরগিটিগুলি থেকে ফার্ডিনান্ড স্টোলিজকা আবিষ্কৃত কোনটি তাও এতদিন জানা যায়নি। যা এখন জানা গেল ৷”

তিনি আরও বলেন, “স্টোলিজকা যে নমুনাগুলি সংগ্রহ করেছিলেন সেগুলি কলকাতা, লন্ডন এবং ভিয়েনার মিউজিয়ামে আছে। এগুলি নিয়ে এতদিন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মরুভূমির প্রাণী নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীদের কাছে বিভ্রান্তিকর ছিল। তা এখন দূর করা গিয়েছে।”

ZSI সূত্রের দাবি, বিজ্ঞানী সুমীধ রায় এবং ডঃ প্রত্যুষ পি. মহাপাত্র গিরগিটির পুরনো রেকর্ডগুলি সাবধানতার সঙ্গে পর্যালোচনা করেন। প্রাণীদের নামকরণের নিয়মগুলি অনুসরণ করেন। তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে কলকাতার ZSI (ক্যাটালগ নম্বর ZSI-R-5050)-তে সংরক্ষিত একটি নির্দিষ্ট গিরগিটি ‘মেসালিনা ওয়াটসোনানা’র চূড়ান্ত উদাহরণ হিসেবে বেছে নেন। এই নির্বাচিত ‘নমুনা’ কে লেকটোটাইপ বলা হয়।

সুমীধ রায় বলেন, “1998 সালে ইন্দ্রনীল দাস নামে এক বাঙালি গবেষক সংরক্ষণের পাঁচটি নমুনাকে দেড়শো বছরের পুরনো নমুনা হিসেবে বলেছিলেন। সেই থেকেই এই পাঁচটি স্যাম্পেলকে ফার্ডিনান্ড স্টোলিজকার সংগৃহিত নমুনা হিসেবে ধরা হত। কিন্তু, নির্দিষ্ট তথ্য বা প্রমাণ সেইভাবে পাওয়া যায়নি। এতদিন এই নিয়ে কেউ চর্চাও করেনি। সেই জায়গায় আমরা চেষ্টা করেছিলাম এর রহস্য উদঘাটনের।”

তিনি আরও বলেন, “দেড়শো বছরের পুরনো রেকর্ড ঘেঁটে এই গিরগিটি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। তারপর মরফোলজি প্রক্রিয়ায় গবেষণা চালানো হয়। গত বছর ইরানের বেশ কয়েকজন গবেষক এই গিরগিটি সম্পর্কে গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু তা সম্পূর্ণ হয়নি। শেষ পর্যন্ত আমাদের সংগ্রহে থাকা এই গিরগিটিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে।”

ZSI গবেষকদের দাবি, ‘মেসালিনা ওয়াটসোনানা’ নামের এই গিরগিটির 15টি প্রজাতি রয়েছে। মূলত, এদের মাথার কাছের ত্বক খসখসে হয় (রাফ স্কিন)। পুরুলিয়াতেও এই প্রজাতি দেখা যায়। এছাড়াও ভিয়েনা, আফগানিস্তান, ইরানের মরুভূমিতে এই প্রজাতির গিরগিটি পাওয়া যায়।

ZSI পরিচালক ডঃ ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “স্টোলিকজকার কাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷ তিনি যে মূল নমুনাগুলি সংগ্রহ করেছিলেন তার অনেকগুলি এখনও বিশ্বের নানা সরীসৃপের নাম বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যার একাধিক নমুনা কলকাতার ZSI-তে আছে। ফলে, এই নমুনা থেকেই নতুন প্রজাতির নামকরণ করাটাই যে বিশেষ কাজ, এমনটা নয়। বরং সেই সমস্ত বিজ্ঞানীদের মহান মহান কাজগুলিকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সম্মান জানানো। এই নতুন সরকারি নামকরণ একই ধরনের মরুভূমির গিরগিটি সম্পর্কে ভবিষ্যতের গবেষণাকে আরও সহজ করে তুলবে।”

উল্লেখ্য, আধুনিক বিজ্ঞানের জন্য পুরনো বৈজ্ঞানিক সংগ্রহ কতটা গুরুত্বপূর্ণ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক ইতিহাসের সম্পদ সংরক্ষণের জন্য ZSI একটি মূল্যবান স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরও পড়ুন:- মারণ ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কোন কোন খাবার খাবেন ? দেখে নিন তালিকা

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন