Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- টালমাটাল পরিস্থিতি বাংলাদেশে। কী এমন হল, রাতারাতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদ ছেড়ে দিতে চাইছেন মুহাম্মদ ইউনূস? তবে কি ফের একবার উত্তাল হয়ে উঠবে পড়শি দেশ? সেক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চাল চালতে পারে বাংলাদেশের সেনা।
জানা গিয়েছে, বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান মুহাম্মদ ইউনূসকে এমন তিন বার্তা দিয়েছেন, যা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে হুঁশিয়ারি বলেই মনে করা হচ্ছে। এক, ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে ভোট হবে। দুই, সেনার বিষয়ে ইউনূস যেন হস্তক্ষেপ না করেন এবং তিন, মায়ানমারের সঙ্গে ব্লাডি করিডয় বন্ধ করে দিতে হবে।
দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা প্রধানের কাছে ‘ব্লাডি করিডর’ শব্দের প্রয়োগ তাঁর দুর্বলতাকে সকলের সামনে স্পষ্ট করে তুলেছে। এর আগে অবশ্য ছাত্রদের তৈরি নয়া রাজনৈতিক দল NCP-র লাগাতার ক্ষমতা প্রদর্শনের জেরেও ব্যাকফুটে চলে গিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনূস। নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত ইউনূস বাংলাদেশের উপদেষ্টা প্রধানের পদে বসার পর থেকে গত ৯ মাসে খুব একটা শান্তি পাননি, তেমনটাই অনুমান করা যাচ্ছে। এবার তাঁর গলার কাঁটা ‘ব্লাডি করিডর’।
আরও পড়ুন:- ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বেড়েছে? এসব ড্রিঙ্কে জব্দ হবে
কী এই ‘ব্লাডি করিডর’?
মুহাম্মদ ইউনূসের সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম এই করিডর বাংলাদেশ ও মায়ানমারকে সংযুক্ত করছিল। এই করিডরের আসল নাম, ‘চটগাঁও রাখিন করিডর’। বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠানোর স্বার্থে এই করিডর নির্মাণ করা হচ্ছিল।
মুহাম্মদ ইউনূসের বিদেশ বিষয়ক পরামর্শদাতা তৌহিদ হুসেন সেনার সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একতরফা ঘোষণা করেছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার আমেরিকার প্রস্তাবিত রাখাইন করিডর নির্মাণে সম্মত। তৌহিদের এই বক্তব্য বাংলাদেশ সেনাকে অগ্রাহ্য করার সমান ছিল। তখন থেকেই চিন্তা বেড়েছিল, আদৌ এই করিডর তৈরি সম্পন্ন হবে? এমন থিওরিও বাংলাদেশের অন্দরে আলোচিত হচ্ছে, আমেরিকা নিজের সামরিক এবং ভূ-রণনীতিক ফায়দার জন্যই এই প্রজেক্ট তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরাও এই রাখিন করিডর নির্মাণ নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছিলেন। তাঁর বলেছিলেন, রাখাইন অঞ্চলে আরাকান সেনার মতো বিদ্রোহীদের গতিবিধি এবং মায়ানমারে তাদের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতকে পারে। উদাহরণ স্বরূপ সম্প্রতি বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে আরাকান সেনার একাধিক ঘাঁটিতে কব্জা করার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সীমান্ত পারে হাতিয়ার পাচার, সন্ত্রাসবাদী গতিবিধি এবং অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। দ্বিতীয় রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা রাখাইন করিডর রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি আরও জটিল করে দিতে পারে। বাংলাদেশে আগে থেকেই ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। করিডর খুলে গেলে মায়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণ শরণার্থী বাংলাদেশে এসে হাজির হবে।
ফলে মুহাম্মদ ইউনূস বিনা ভোটে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার কারণে মার্কিন চাপের কাছে মাথা নত করছেন বলেই মনে করছে আন্তর্জাতিক মহলের একাংশ।
বিরোধিতায় বাংলাদেশ সেনা
এই করিডর নির্মাণকে রেড লাইন ক্রস করার সমান ধরেছে বাংলাদেশ সেনা। প্রকাশ্যে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে তারা। ইউনূসকে হুঁশিয়ারি দিয়ে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘বাংলাদেশের সেনা এমন কোনও গতিবিধিতে অংশ নেবে না যা দেশের জন্য ক্ষতিকারক। কাউতে এমনটা করার অনুমতিও দেওয়া হবে না।’এই করিডর তৈরির মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ ক্রমশই মায়ানমারের গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে, যা হতে দিতে চান না সেনাপ্রধান।
মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে একযোগে কাজ করা সমস্যাজনক হয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার অ্যাডভাইসরি কাউন্সিলের বৈঠকে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
এই করিডরের উদ্দেশ্য কী?
রাখাইন করিডরে গৃহযুদ্ধ এবং ভূমিকম্পের কারণে জর্জরিত লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের সাহায্য পৌঁছে দেওয়াই এই করিডর নির্মাণের উদ্দেশ্য বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। তবে সেনাপ্রধান তা মানতে নারাজ।
এদিকে, গত তিন দিন ধরেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ছিল উত্তাল। সেখানে সশস্ত্র পাহারা জোরদার করা হয়েছে। অপরিচিত পথচারীদের দেহতল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের পরেই যেতে দিচ্ছেন সেনা জওয়ানরা। বাংলাদেশকে করিডর হিসাবে ব্যবহারে সম্মতি দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে এত দিনের জমা বারুদে অগ্নিসংযোগ হল বলেই মনে করা হচ্ছে। ফলে বিস্ফোরণ এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।
আরও পড়ুন:- জি-মেল অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে? কী ভাবে বুঝবেন? জেনে নিন