বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি নেতাজির ! কি দাবি তুললেন পরিবারের সদস্যরা ? জানুন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- 1945 সালের 18 অগস্ট তাইওয়ানে কোনও বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি ৷ এমনটাই দাবি করলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবারের সদস্যরা ৷ তাঁদের বিশ্বাস বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি ৷ আর সেই কারণেই নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য উন্মোচন-সহ একগুচ্ছ দাবি তুলেছেন তাঁরা ৷ নেতাজির মহানিষ্ক্রমণে অন্যতম প্রধান সহযোদ্ধা, অর্থাৎ তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র অশোকনাথ বসুর সন্তান জয়ন্তী রক্ষিত (বসু), তপতী ঘোষ (বসু), আর্য বসুরা এই দাবি করেছেন ৷

তাঁরা মনে করেন উত্তরপ্রদেশের সন্ন্যাসী ভগবানজি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ৷ এই বিষয়ে নেতাজির নাতি আর্য বসু বলেন, “আমরা কেউই বিশ্বাস করি না বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে ৷ সুভাষচন্দ্র বসুরা সাত ভাই ছিলেন ৷ সেই বড় পরিবারে জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠার সময়ে শুনেছি, জেনেছি বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে বলে কেউ বিশ্বাস করতেন না ৷ বাবা তো করতেনই না ৷ কাকা শিশির বসুও করতেন না ৷”

বিমান দুর্ঘটনা নিয়ে তিনি বলেন, “1945 সালের 18 অগস্ট তাইওয়ানে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি বলেই বলতেন তাঁরা ৷ ঠিক তেমনই, তাঁর মৃত্যুর খবর নিয়ে আমাদের পরিবারের বিশেষ কোনও গবেষণা হয়নি ৷ কাকা শিশির বসু কিছুটা চর্চা করলেও, তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা ছিল ৷ তিনি বিভিন্ন মিউজিয়াম, আর্কাইভ থেকে ছবি, তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন ৷ ব্যক্তি সুভাষের কী হল, সেটা নিয়ে সেই সময়ে পরিবারের কারও কোনও গবেষণা নেই ৷ তবে, পরবর্তীতে ‘মুখার্জী কমিশনে’র বিভিন্ন কাজে পরিবারের সদস্যরা গিয়েছেন ৷ বিমান দুর্ঘটনার সাজানো তথ্য আমরা বিশ্বাস করি না ৷”

বিমান দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে গান্ধিজির মত নিয়ে আর্য বসু বলেন, “গান্ধিজিও বিশ্বাস করতেন না ৷ গান্ধিজি যদি বিমান দুর্ঘটনার তথ্য বিশ্বাস করতেন, তাহলে খবর প্রকাশের পর তিনি আমাদের বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করতে নিষেধ করতেন না ৷ একই ভাবে, ওই একই বছরে 1945 সালের ডিসেম্বরে দমদম জেলে রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে দেখা এসেছিলেন গান্ধিজি ৷ সেই সময়ে নেতাজির মৃত্যু নিয়ে গান্ধিকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘সুভাষচন্দ্রের মৃতদেহের ছবিও যদি কেউ দেখায়, তাহলেও আমি বিশ্বাস করব না নেতাজি মারা গিয়েছেন ৷”

এ প্রসঙ্গে গান্ধিজির সেক্রেটারির তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের স্নেহধন্য লুই ফিসারকে লেখা চিঠির কথা উল্লেখ করেন আর্য ৷ তিনি বলেন, “আমরাও আরও ইঙ্গিত পাই, যখন গান্ধির তৎকালীন সেক্রেটারি 1946 সালের ফেব্রুয়ারির চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘সোভিয়েতের সাহায্য নিয়ে সুভাষ দেশে ফিরলে গান্ধি কিংবা কংগ্রেস পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পারবেন না’ ৷ তাহলে বলুন, নেতাজি যদি বেঁচে না-থাকতেন, তাহলে তাঁর দেশে ফেরার বিষয়ে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্টের স্নেহধন্য লুই ফিসারকে এই চিঠি লিখবেন কেন ? যদিও এই চিঠির বিষয়ে বাবা-কাকারা জানতে পারেননি ৷ লুই ফিসারের এই তথ্য 1990 সালের পরে সামনে এসেছিল ৷ যে কারণে গান্ধিও বিশ্বাস করতেন না নেতাজির বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৷ নিশ্চয় গান্ধিজির কাছে নেতাজির বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল ৷”

এ নিয়ে জয়ন্তী রক্ষিত (বসু), তপতী ঘোষ (বসু), আর্য বসুরা চারদফা দাবি তুলেছেন-

1. জাস্টিস মনোজ মুখার্জির তদন্ত রিপোর্ট পার্লামেন্টে গ্রহণ

2. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর তথাকথিত চিতাভস্ম ভারতে আনার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলকে একজোট হওয়ার আহ্বান

3. মিথ্যে বিমান দুর্ঘটনার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রমাণ তাইওয়ান রিপোর্ট, 1956 প্রকাশ

4. ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সুরক্ষিত নেতাজি সুভাষচন্দ্রের কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত ফাইলপত্র আনতে ভারত সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার দাবি

প্রাক্তন বিচারক তথা লেখক বিপ্লব রায় বলেন, “নেতাজি কোনও নির্দিষ্ট পরিবারের নন ৷ যাঁরা নেতাজিকে ভালোবাসেন, নেতাজি বিষয়ে জানতে আগ্রহী, তাঁরা সকলেই নেতাজির। নেতাজিও তাঁদের ৷ সেই বৃহৎ অংশের মানুষকে কেন ভুল বোঝানোর চেষ্টা চলছে । কেন মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট পার্লামেন্টে প্রকাশ করা হচ্ছে না ৷ আগের দুই কমিশনের রিপোর্টে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি উল্লেখ থাকলেও, সরকার কেন তৃতীয় কমিশন অর্থাৎ, মুখার্জি কমিশন গঠন করে ? তাহলে সরকারও বিশ্বাস করে না বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে ৷ তাহলে, এখন কেন মুখার্জি কমিশনের রিপোর্ট পার্লামেন্টে প্রকাশ করা হবে না ? সেই রিপোর্টে বিমান দুর্ঘটনার বিষয়টি নেই বলে। এইভাবে সুভাষকে ভোলানো যাবে না ৷ শুধুই তাই নয়, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর তথাকথিত চিতাভস্ম ভারতে আনার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সকলকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি ৷”

Netaji Subhas Chandra Bose

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পরিবার ৷

 

গবেষক সৈকত নিয়োগী বলেন, “বিমান দুর্ঘটনার কোন গ্রহণযোগ্য সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই তাইওয়ান রিপোর্টে ৷ যে রিপোর্টটা তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এলেও জনস্বার্থে প্রকাশ করেনি ৷ লন্ডন থেকে উদ্ধার তাইওয়ান রিপোর্টে: 1945 সালের 15 অগস্ট ঘটা তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু প্রসঙ্গে সেই দেশ 1956 সালে তদন্ত করে সেই রিপোর্ট প্রকাশ করে ৷ তাই আমাদের দাবি, নেতাজির মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ করুক ৷”

আর এক গবেষক সৌম্যব্রত দাশগুপ্ত বলেন, “আমাদের প্রস্তাবিত বিষয়ে নিম্নলিখিত প্রমাণ ও প্রামাণ্য নথি আমরা সকলের কাছে তুলে ধরছি ৷ এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নিবেদন জানাই, নেতাজি সুভাষচন্দ্রের অন্তর্ধান বিষয়ে স্পষ্টভাবে আলোকপাত করে ৷”

আরও পড়ুন:- সূর্যের সংসারে আরও এক বামন গ্রহের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা, পৃথিবী থেকে কত দূরে ?

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন