Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিজেপির দলীয় বৈঠক চলাকালীন ধুন্ধুমার কাণ্ড অশোকনগরে । অভিযোগ, বিজেপির জেলা সভাপতির সামনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন দুই গোষ্ঠীর লোকজন । চলল প্রকাশ্যে মারপিটও । ভাঙচুর করা হয়েছে চেয়ার-টেবিলও । ঘটনার জেরে রীতিমতো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরের মানিকতলা এলাকা ।
পরে, পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয় । দু’পক্ষের মারপিটে ছয় থেকে সাতজন কর্মী জখম হয়েছেন বলে খবর বিজেপি সূত্রে । এর মধ্যে এক জনের আঘাত গুরুতর বলে জানা গিয়েছে ।
রবিবার রাতের ঘটনায় দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে । পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমেছে । এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে গেরুয়া শিবিরকে তীব্র কটাক্ষ করেছে শাসক শিবির । যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়ে ঘটনার নেপথ্যে দুষ্কৃতীদের হাত রয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপি নেতৃত্ব ।
রবিবার রাতে অশোকনগরের সমাজমিলন কেন্দ্রে একটি সাংগঠনিক বৈঠক ছিল বিজেপির । সেই বৈঠকে দলের পদাধিকারীদের পাশাপাশি সামিল হয়েছিলেন স্থানীয় কর্মীরাও । হাজির ছিলেন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রাজীব পোদ্দারও ।
অশোকনগরে বিজেপি অফিসে উত্তেজনা
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, মিটিংয়ে প্রথম দিকে সব ঠিকঠাকই চলছিল । কিন্তু, হঠাৎই তাল কাটে মাঝ পথে । বৈঠকে অশোকনগরের যুব মোর্চার ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রদীপ সরকার-সহ কয়েকজন জেলা সভাপতির কাছে কিছু প্রশ্ন করেন । অশোকনগরে যে চারটি মণ্ডল রয়েছে, তার মধ্যে একটিতে সভাপতি মহিলা হওয়ার কথা ছিল । তা কেন হয়নি, জানতে চাওয়া হয় জেলা সভাপতির কাছে । এমনকী, বিজেপির কয়েকজন নেতা-কর্মী তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন বলেও দাবি করেন তাঁরা ।
অভিযোগ, এই নিয়ে প্রশ্ন করার পরেই দলের অপর গোষ্ঠীর লোকজন প্রদীপ সরকার এবং তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজনের উপর চড়াও হয় । পাল্টা, যুব মোর্চার নেতা প্রদীপ সরকারের লোকজনও অপর গোষ্ঠীর লোকেদের মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে । সবটাই ঘটে জেলা সভাপতি রাজীব পোদ্দারের সামনে । দলের দুই গোষ্ঠীর মারপিট ও হাতাহাতিতে জখম হন অন্তত সাতজন বিজেপি কর্মী । তাঁদের মধ্যে একজনের আঘাত গুরুতর বলে দাবি করা হয়েছে গেরুয়া শিবিরের তরফে ।
ভাঙা হয়েছে চেয়ার
এদিকে, বিজেপির দলীয় বৈঠকে ধুন্ধুমার কাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় অশোকনগর থানার পুলিশ । এরপর তাঁদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে । রাতেই দু’পক্ষ পুলিশের দ্বারস্থ হন । অভিযোগও দায়ের হয় থানায় ।
এই নিয়ে আক্রান্ত যুব মোর্চার নেতা প্রদীপ সরকার বলেন, “অশোকনগরের চারটি মণ্ডলের মধ্যে একটি মণ্ডলের সভাপতি মহিলা হওয়ার কথা । পার্টির নির্দেশ মেনে কেন তা হয়নি, এই প্রশ্ন করাটাই ছিল আমার অপরাধ । এর পরেই মণ্ডল সভাপতি বাপি মিস্ত্রির নেতৃত্বে ওর লোকজন আমার জামার কলার ধরে মারধর করতে শুরু করেন । কিল, চড়, ঘুষি কিছুই বাদ যায়নি ।’’
আহত বিজেপি কর্মী
তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে বাঁচাতে এসে আক্রান্ত হয়েছেন আরও কয়েকজন । দিনের পর দিন তৃণমূলের অত্যাচার সহ্য করেও নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা দলটা করছি । অথচ, এই দলেই তৃণমূলের একশ্রেণীর দালাল ভরে গিয়েছে । যাঁরা প্রতিনিয়ত দলের ক্ষতি করার চেষ্টা করছেন । আর জেলা সভাপতি রাজীব পোদ্দার তাঁদের মদত জোগাচ্ছেন । তিনি একজন অযোগ্য জেলা সভাপতি । তাঁর ইন্ধনেই এই ঘটনা ঘটেছে ।”
যদিও জেলা সভাপতি মুখ না খুললেও এই নিয়ে পাল্টা নাম না করে যুব মোর্চার নেতা প্রদীপ সরকারের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলেছেন বিজেপির অশোকনগরের মণ্ডল সভাপতি বাপি মিস্ত্রি । তাঁর কথায়, “পুরসভার 20 নম্বর ওয়ার্ড থেকে দুষ্কৃতীরা এসে এই গন্ডগোল পাকিয়েছে । আমরা তাঁদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছি । কয়েকজনের নাম জানতে পেরেছি । দুষ্কৃতী সবসময় দুষ্কৃতীই হয় । রাজনৈতিক কোনও দলের কর্মী হতে পারে না । আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি । বাকিটা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে ।”
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে গেরুয়া শিবিরকে কটাক্ষ করে স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “বিজেপি একটা বিশৃঙ্খলা, বেপরোয়ার দল । দলীয় বৈঠক মারপিট, কর্মীরা সেখানে প্রহৃত হচ্ছেন ৷ এটা কেবলমাত্র ওঁদের দলের ক্ষেত্রেই মানায় । এঁরা আবার পশ্চিমবঙ্গে শাসন ক্ষমতায় আসার কথা ভাবছে । মানুষ কেন এঁদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে ? রাজ্যের সাধারণ মানুষ জানে, এঁরা ক্ষমতায় এলে বিপদ ! বিজেপি শুধু নিজেদের কথাই ভাবে । মানুষের কথা চিন্তা করে না । পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনছে এটা অশোকনগরের লজ্জা ।”
প্রসঙ্গত, রবিবারই ভারতীয় সেনাদের অভিবাদন জানিয়ে বনগাঁয় মিছিল করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তাঁর কর্মসূচি শেষ না-হতেই অশোকনগরে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনায় অস্বস্তি বাড়িয়েছে পদ্ম শিবিরের ।
আরও পড়ুন:- বিশেষ সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন ধোনি, এর আগে মাত্র ১০ ভারতীয় পেয়েছেন এই সম্মান