Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- মৌসুনি দ্বীপে স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ তৈরি করতে হবে ৷ গড়তে হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৷ পাশাপাশি এখানে সেতু নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে হবে ৷ এমনটাই গত বুধবার অর্থাৎ 11 জুন রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট ৷ আর উচ্চ আদালতের এই নির্দেশ শোনার পরই খুশির হাওয়া মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে ৷
মূলত দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার প্রত্যন্ত দ্বীপ মৌসুনি । কলকাতার কাছে পিঠে পর্যটকদের ভ্রমণের অন্যতম ডেসটিনেশন এটি । কিন্তু একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াস তছনছ করে দিয়েছে মৌসুনি দ্বীপকে । মাটির নদী বাঁধ ভেঙে গিয়ে প্লাবিত হয়ে গিয়েছে গোটা এলাকা ৷ জলমগ্ন হয়ে পড়েন এলাকাবাসী ।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল কংক্রিটের নদী বাঁধ । এই দাবিতে বারবার আন্দোলনেও সামিল হয়েছেন মৌসুনি দ্বীপের মানুষজনেরা । এরপর মৌসুনি দ্বীপের স্থানীয়দের দাবি নিয়ে আইনজীবী রাজেশ ক্ষেত্রী 2021 সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন । দীর্ঘ চার বছর ধরে ওই মামলা চলে ৷ অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে’র এসলাসে এই মামলার শুনানি হয় ।
তাতে আদালত নির্দেশ দেয়, মৌসুনি দ্বীপের স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে ৷ এছাড়াও এলাকাবাসীদের স্বাস্থ্যর কথা মাথায় রেখে মৌসুনি দ্বীপে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয় ৷ পাশাপাশি পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব না পড়লে একটি সেতু নির্মাণের সম্ভাবনা বিবেচনা এবং দ্বীপটি সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটানোর নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতিরা।
এই বিষয়ে আইনজীবী রাজেশ ক্ষেত্রী বলেন, “2021 সালে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে তছনছ হয়ে গিয়েছে মৌসুনি দ্বীপ ৷ সেই সময় মৌসুনি দ্বীপবাসীকে ত্রাণ দিতে গিয়ে আমরা দেখতে পেয়েছিলাম যে সেখানে নেই কোনও কংক্রিটের বাঁধ । যার কারণে প্রায়ই সময় বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় মাটির নদী বাঁধ ভেঙে গিয়ে এলাকা প্লাবিত হয় ৷ চাষের জমি নষ্ট হয় ৷ পুকুরের মাছ নষ্ট হয় এলাকাবাসীর । এছাড়াও মৌসুনি দ্বীপে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই বললেই চলে ৷ এইসব একাধিক বিষয় নিয়ে 2021 সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করি আমি ৷ টানা চার বছর সেই মামলা চলার পর অবশেষে মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দাদের জন্য রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।”
তিনি আরও বলেন, “কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে উল্লেখ রয়েছে, মৌসুনি দ্বীপের স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণ, এছাড়াও একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন এবং পরিবেশের উপর যদি প্রভাব না পড়ে তাহলে একটি সেতু নির্মাণ ৷ যদি সেখানে একটি সেতু নির্মাণ করা যায় তাহলে যাতায়াতের যেমন সুবিধা হবে, তেমনই পর্যটকদের অন্যতম ভ্রমণের ডেস্টিনেশন হয়ে উঠবে মৌসুনি দ্বীপ । এছাড়াও মৌসুনি দ্বীপের সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আদালতের তরফে । আর এই জয় শুধু আমার একার নয়, এই জয় মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দাদের ।”
কংক্রিটের নদী বাঁধ তৈরির নির্দেশ মৌসুনি দ্বীপে
কলকাতা হাইকোর্টের রায় কার্যকর হলে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় প্রবল জলোচ্ছ্বাস ও নদী ভাঙনের হাত থেকে এলাকাবাসীদের রক্ষা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তাই আদালতের নির্দেশে মুখে হাসি ফুটেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের । এ বিষয়ে মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দা সঞ্জয় পাইক বলেন, “মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আমরা অত্যন্ত খুশি ৷ হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে যদি স্থায়ী কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণ করা যায় তাহলে আর নদী বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হবে না । নদীর নোনা জলে নষ্ট হবে না জমির ফসল ও পুকুরের মাছ । এলাকাবাসীদের উন্নয়ন হবে ।”
তাঁর দাবি, “স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বলতে এলাকায় রয়েছে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৷ সঠিক সময় চিকিৎসকের দেখা মেলে না সেখানে ৷ যদি মহামান্য কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পর এলাকায় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয় তাহলে দ্বীপবাসীরা অনেকটাই উপকৃত হবে । কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে মৌসুনি দ্বীপবাসী হিসাবে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং ধন্যবাদ জানাই মহামান্য বিচারপতিদের ৷”
আরও পড়ুন:- আমরা সবাই জানি ফলের রাজা আম, কিন্তু ফলের রানী ? সেটা আবার কি ? কোথায় পাওয়া যায় ?