Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ছাব্বিশের বিধানসভা ভোটের আগে সন্দেশখালিতে বড়সড় ভাঙন গেরুয়া শিবিরের। তাও আবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সভার সাত দিনের মাথাতেই। রবিবার রাজ্যের দুই মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ও সুজিত বসুর হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিলেন রেখা পাত্রের ছায়াসঙ্গী-সহ কয়েকশো বিজেপি কর্মী। এর মধ্যে সন্দেশখালি আন্দোলনের মুখ লতিকা মিস্ত্রিও রয়েছেন।
পদ্ম শিবির থেকে এক সঙ্গে এত বিজেপি কর্মী-সমর্থকের যোগদান নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ! বিশেষত, গেরুয়া শিবিরের এই ভাঙনে ভোটের আগে সন্দেশখালিতে শাসক শিবিরকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। যদিও এই দলবদলকে গুরুত্ব দিতে চায়নি বিজেপি নেতৃত্ব। উল্টে,শাসক শিবিরের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ ছুঁড়ে দিয়েছে তাঁরা।
গত 8 জুন সন্দেশখালির কানমারি ভারত সেবা সংঘের মাঠে বিজেপির ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি যাত্রা’য় যোগ দিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছ’বছর আগে তৃণমূলের হামলায় তিন বিজেপি কর্মীর নৃশংস হত্যা-কাণ্ডের সুবিচার চেয়ে সভা সংগঠিত হয় ওই মাঠে। ঘটনার পর দুই বিজেপি কর্মীর দেহ মিললেও আজও দেহ মেলেনি দেবদাস মণ্ডল নামে এক বিজেপি কর্মীর।
এ নিয়ে সভা থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে ছিলেন বিরোধী দলনেতা। শুভেন্দু’র সেই সভারই পাল্টা এদিন সভার ডাক দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। সভা আয়োজিত হয় কানমারির ভারত সেবা সংঘের ওই মাঠেই। তৃণমূলের ডাকে ওই সভায় এদিন হাজির ছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা, সুজিত বসু, সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো, দলের বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বুরহানুল মুকাদ্দিম, জেলা চেয়ারম্যান স্বরোজ বন্দোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন:- টিকিট বুকিং নিয়ে একসঙ্গে ৩ বড় বদল রেলের, না জানলে কিন্তু ভ্রমণ করতে পারবেন না
সভায় শুভেন্দু’কে আক্রমণ করে মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা বলেন, “ও(শুভেন্দু)আবোল-তাবোল বকতে শুরু করেছে। পাগল হয়ে গিয়েছে। সন্দেশখালির মানুষের উচিত ও’কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া, যাতে কোনও উস্কানিমূলক বক্তব্য না দিতে পারে। উনি বলছেন ক্ষমতায় এলে বিজেপি নাকি তিন হাজার টাকা করে লক্ষ্মীর ভান্ডার দেবে। আমি বলছি, আগে বিজেপি শাসিত রাজ্যে এটা চালু করে দেখাক। তারপর, পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে ভাববেন।”
এদিকে, সভা শেষে এদিন মঞ্চ থেকে বিজেপির একের পর এক কর্মী তৃণমূলের পতাকা হাতে তুলে নেন। সবার প্রথমে মঞ্চে উঠে শাসকদলের পতাকা হাতে তুলে নিতে দেখা যায় সন্দেশখালি আন্দোলনের দুই পরিচিত মুখ লতিকা মিস্ত্রি এবং সুদেষ্ণা দাসকে। তাঁদের দু’জনের হাতেই দলীয় পতাকা তুলে দেন মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা ও সুজিত বসু। তৃণমূলের দাবি, “এক সময় বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রের ছায়াসঙ্গী হিসেবে যাঁরা সন্দেশখালিতে লড়াই আন্দোলন করেছিলেন,তাঁদের অনেকেই এদিন যোগ দিয়েছেন শাসকদলে। বিজেপির প্রতি তাঁদের মোহ ভঙ্গ হয়েছে। তাঁরা বুঝতে পেরেছে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁদের ভুল বুঝিয়ে দলে যোগদান করিয়েছিল। সেটা বুঝতে পেরেই তাঁরা আবার ফিরে এসেছেন পুরনো দলে।”
বিজেপির প্রতি তাঁদের যে মোহ ভঙ্গ হয়েছে তা উঠে এসেছে তাঁদের অনেকের কথাতেই। তাঁদেরই একজন লতিকা মিস্ত্রি। যিনি তৃণমূল ছেড়ে এক সময় শাহজাহানের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সন্দেশখালিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি বলেন,”আমরা এক সময় তৃণমূল দলটাই করতাম। কিন্তু,কিছু ব্যাক্তির অন্যায়ের বিরুদ্ধে দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। বিজেপির প্রলোভনে পা দিয়েছিলাম। এখন বুঝতে পেরেছি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব। তিনিই সাধারণ মানুষকে যাবতীয় পরিষেবা দিচ্ছেন। কোনও ভয়ে বিজেপিতে যোগদান করিনি আমরা। আন্দোলন করতেই গেরুয়া শিবিরের পতাকা হাতে নিয়েছিলাম। এখন আবার পুরনো দলে ফিরে এসেছি।”
একই সুর শোনা গিয়েছে সন্দেশখালি আন্দোলনের আরেক মুখ তথা রেখা পাত্রের ছায়াসঙ্গী সুদেষ্ণা দাসের গলাতেও। তাঁর কথায়,”বিজেপি মিথ্যে প্রলোভন ছাড়া আর কিছুই করছে না।রাজ্যের উন্নয়ন একমাত্র ‘দিদি’ই করছেন। সন্দেশখালিতে যাঁদের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ ছিল, তাঁরা সকলেই এখন জেলে। বর্তমানে সন্দেশখালির মানুষ শান্তিতে রয়েছেন। দলের প্রতি কিংবা দিদির প্রতি আমাদের কোনও ক্ষোভ ছিল না। যাবতীয় ক্ষোভ ছিল কিছু মানুষের বিরুদ্ধে। বিজেপির প্রলোভনে পা দিয়েছিলাম। তাঁরা বলেছিল সন্দেশখালিতে তৃণমূলের অত্যাচার আরও বাড়বে। কিন্তু সেটা মিথ্যে ছিল, তা বুঝতে পেরেই আমরা আবার তৃণমূল দলে ফিরে এসেছি।”
বিজেপির ভাঙন নিয়ে মন্ত্রী সুজিত বসু বলেন, “যাঁরা যোগ দিলেন তাঁরা নিশ্চিয় নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। 2026-র বিধানসভা ভোটে তৃণমূল আবারও ক্ষমতায় আসবে এ নিয়ে কারোর মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই। বসিরহাটের সাতটি বিধানসভাতেই তৃণমূল জিতবে। বার্তা যা দেওয়ার তা নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 21 জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই দেবেন।”
অন্যদিকে, দলীয় ভাঙন নিয়ে রেখা পাত্রের কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার যুব মোর্চার সভাপতি পলাশ সরকার। তিনি বলেন,”তৃণমূল যতই লম্ফঝম্ফ করুক লাভ হবে না। আসলে সবটাই তৃণমূলের আইওয়াশ ছাড়া কিছুই নয়। সন্দেশখালি হল বিজেপির শক্ত ঘাঁটি।”