পহেলগাঁও নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা অভিষেকের। করলেন 5 চোখা প্রশ্ন

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পহেলগাঁও হামলা নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি হয়ে বিদেশের মাটিতে ভারত সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে এসেছেন ৷ তবে এবার সেই ঘটনা নিয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বেনজির আক্রমণ শানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

নিজের এক্স হ্যান্ডেলে দীর্ঘ পোস্টে নরেন্দ্র মোদি সরকারের দিকে পাঁচটি চোখা চোখা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ৷ সেই প্রশ্নে সীমান্ত নিরাপত্তা ও বিদেশনীতিতে গলদ, গোয়েন্দা ব্যর্থতা এমনকি দেশবাসীর আবেগ নিয়ে খেলা করার অভিযোগ তুলেছেন তিনি ৷ টেনে এনেছেন পেগাসাস প্রসঙ্গ ৷ অভিষেকের প্রশ্ন, বিরোধীদের ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করলেও কেন জঙ্গি নেটওয়ার্কের খবর পেতে এটি ব্যবহার করেনি কেন্দ্র !

এক্স হ্যান্ডেলে সোমবার পহেলগাঁও নিয়ে পোস্টে অভিষেক লিখেছেন, “পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পর 55 দিনেরও বেশি সময় হয়ে গিয়েছে । গণতন্ত্রে এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক যে, মূলধারার মিডিয়া, বিরোধী দলের সদস্যরা বা বিচার বিভাগ কেউই ভারত সরকারের সামনে এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করতে এগিয়ে আসেনি । তবে, জাতির কল্যাণের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন নাগরিক এবং জবাবদিহি করার দায়িত্বে নিযুক্ত জনপ্রতিনিধি হিসেবে, আমি ভারত সরকারের সামনে এই পাঁচটি প্রশ্ন উত্থাপন করছি ।”

তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শুরুতেই প্রশ্ন তুলেছেন যে, “কীভাবে চারজন সশস্ত্র জঙ্গি ভারতীয় সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে এবং এত বড় একটা আক্রমণ চালাতে সক্ষম হল, যার জেরে 26 জন সাধারণ নাগরিক নিহত হলেন !” একে ‘জাতীয় নিরাপত্তায় ব্যাপক আঘাত’ বলে অভিহিত করে, অভিষেকের প্রশ্ন এই ‘ব্যর্থতার’ দায় কে নেবে !

এদিন তিনি গোয়েন্দা বিভাগকে নিশানা করে অভিষেক প্রশ্ন তোলেন যে, কেন হামলার মাত্র এক মাস পরেই তাদের প্রধানকে এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল ? তিনি লিখেছেন, “যদি এটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা হয়, তাহলে কেন গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানকে এক বছরের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হল, তাও আক্রমণের মাত্র এক মাস পরে ? কেন তাঁকে জবাবদিহি করার পরিবর্তে পুরস্কৃত করা হল ? ঠিক কী বাধ্যবাধকতা?”

এরপরেই পেগাসাস প্রসঙ্গ টেনে এনে কেন্দ্রকে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ ৷ তিনি লিখেছেন, “যদি ভারত সরকার বিরোধী নেতাদের (আমার সহ), সাংবাদিক, এমনকি বিচারকদের বিরুদ্ধে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করতে পারে, তাহলে জঙ্গি নেটওয়ার্ক এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে একই সরঞ্জাম ব্যবহার করতে বাধা দেয় কীসে?” উল্লেখ্য, পেগাসাসের মতো গুপ্তচর স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধী নেতা-সহ আরও নানা বিশিষ্ট্য ব্যক্তির ফোনে আড়ি পাতছে বলে অভিযোগ উঠেছিল ৷ এই ইস্যুতে সরগরম হয়েছিল রাজনীতি ৷ পহেলগাঁওয়ে গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ আনতে গিয়ে সেই পেগাসাস প্রসঙ্গই এদিন খুঁচিয়ে দিলেন অভিষেক ৷

পহেলগাঁওয়ে হামলাকারীদের কী পরিণতি হল, তা নিয়েও এদিন সন্দেহ প্রকাশ করে গোটা ঘটনা আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরার দাবি করেছেন তৃণমূল সাংসদ ৷ তিনি লিখেছেন, “এই নৃশংস, ধর্ম-ভিত্তিক গণহত্যার জন্য দায়ী চার জঙ্গি কোথায় ? তারা কি জীবিত না মৃত ? যদি তাদের খতম করে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে সরকার কেন স্পষ্ট বিবৃতি দিতে পারল না ? এবং যদি তাদের খতম করা না-হয়ে থাকে, তাহলেই বা কেন নীরবতা ?”

নিজের পোস্টে এদিন পাকি-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীর প্রসঙ্গও তুলে ধরেন অভিষেক ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছিলেন যে, তিনি বাণিজ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছেন ৷ ট্রাম্পের এমন দাবি নিয়ে কেন্দ্র কেন ‘নীরব’ সেই প্রশ্নও তোলেন অভিষেক ৷ তিনি আরও লিখেছেন, “দেশ যেভাবে তাদের জাতি, ধর্ম এবং রাজনৈতিক সম্প্রীতি নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছে, ন্যায়ের বিজয় উদযাপন করেছে এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বীরত্ব ও ত্যাগকে অভিবাদন জানিয়েছে, সেখানে 140 কোটি ভারতীয়ের আবেগকে কেন উপেক্ষা করা হল ?”

তাঁর পঞ্চম এবং শেষ প্রশ্নে অভিষেক পহেলগাঁও ঘটনার পর সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টারও সমালোচনা করেছেন । তাঁর প্রশ্ন, “গত এক মাসে পহেলগাঁওয়ের পর 33টি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে, কতজন ভারতকে স্পষ্ট সমর্থন জানিয়েছে ?” নিন্দা পাওয়ার পরিবর্তে পাকিস্তান কীভাবে বিশ্বব্যাপী সমর্থন জোগাড় করল সেই প্রশ্নও তোলেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ৷

তিনি লিখেছেন, “যদি আমরা সত্যিই বিশ্বগুরু হই এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হই, তাহলে পহেলগাঁও হামলার পরপরই কেন আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক পাকিস্তানকে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং 40 বিলিয়ন মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ অনুমোদন করল ? সীমান্ত সন্ত্রাসবাদে বারবার জড়িত একটি দেশ কীভাবে বিশ্বব্যাপী তদন্তের মুখে পড়া থেকে গা বাঁচিয়ে নিল এবং শুধু তাই নয়, পুরস্কৃতও হল ? আরও আশ্চর্যজনকভাবে: মাত্র এক মাস পরেই কেন পাকিস্তানকে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সন্ত্রাসবাদ দমন কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হল?”

সবশেষে বিদেশনীতি খাতে ব্যয় নিয়ে খোঁচা দিয়ে পোস্টটি শেষ করেছেন অভিষেক ৷ তিনি লিখেছেন, “গত 10 বছরে বৈদেশিক বিষয়ে 20,000,000,000 (দুই লক্ষ কোটি টাকারও বেশি) ব্যয় করা হয়েছে । ভারতীয় জনগণ স্বচ্ছতা চায়, জবাব চায় এবং ফলাফল পেতে চায় – নীরবতা এবং ঘোরাঘুরি করতে চায় না ! দেশ একটি প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করে আছে ৷” (পিটিআই)

আরও পড়ুন:- ১০ বছর আগের স্মৃতি ফেরাতে এবার বড় চমকের পথে দেশপ্রিয় পার্ক ।

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন