Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানের পড়াশোনা নিয়ে মতানৈক্য ! তার জেরে ভুক্তভোগী সন্তান ৷ এই আবহে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ শনিবার এরকমই একটি মামলায় আদালতের পর্যবেক্ষণ, বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানকে নিয়ে টানাপোড়েন হওয়া স্বাভাবিক ৷ কিন্তু তার জন্য সন্তান যেন তাঁর উপযুক্ত শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত না-হয় ৷ তার লেখাপড়ার বিষয়ে বাবা-মায়ের একমত হওয়া জরুরি ৷ নাহলে শেষ পর্যন্ত সন্তানেরই ভবিষ্যৎ ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৷
এদিন এই মামলায় বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্য বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া দম্পতিকে কড়া সুরে বলেন, “নাবালক পুত্রের শিক্ষা নিয়ে মতবিরোধ করবেন না ৷ আপনাদের স্বামী-স্ত্রীর সমস্যায় নাবালক পুত্র কেন উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে ?” পাশাপাশি বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, নিম্ন আদালতের নজরদারিতে নাবালক পুত্রের স্কুল শিক্ষা চলবে ৷
আরও পড়ুন:- ৩২০০০ শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ । চাকরি ফিরে পাচ্ছেন শিক্ষকরা? জানাল হাইকোর্ট
প্রেক্ষাপট
2013 সালে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জের বাসিন্দা সোমনাথ সরকারের সঙ্গে জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা কুহুমিতা ব্রহ্মের বিয়ে হয় ৷ বিগত কয়েক বছর ধরে সম্পর্কের টানাপোড়েনের পর তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ হয় ৷ কুহুমিতার অভিযোগের ভিত্তিতে নিম্ন আদালতে চলে বধূ নির্যাতন মামলা ৷ বর্তমানে এগারো বছরের নাবালক পুত্রকে নিয়ে জিয়াগঞ্জে থাকেন তিনি ৷ এদিকে মামলা-পাল্টা মামলা চলে নিম্ন আদালতে ৷
আদালতের নির্দেশে মাসে দু’বার ছেলের সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান সোমনাথ সরকার ৷ বিচ্ছেদ হওয়া দম্পতির নাবালক পুত্র জিয়াগঞ্জের একটি বাংলা মাধ্যমে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ৷ সন্তানকে পড়ানোর আর্থিক সামর্থ্য নেই কুহুমিতার । এই পরিস্থিতিতে পুত্রের পড়াশোনার ভালো বন্দোবস্ত করতে চান বাবা সোমনাথ ৷ তিনি ছেলেকে উন্নত মানের ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে পড়াতে চান ৷ আর এই বিষয়েই মতপার্থক্য তৈরি হয় দু’জনের মধ্যে ৷ তখন এই বিষয়টি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সোমনাথ সরকার ৷
আদালতের নির্দেশ
বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর সমস্যার জন্য একজন নাবালক পুত্র উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে না ৷ এক্ষেত্রে আদালত কোনওভাবে ওই নাবালক পুত্রকে তার শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে দেবে না ৷ স্ত্রীর ক্ষমতা নাও থাকতে পারে ৷ এক্ষেত্রে পিতা সমস্ত দায়িত্বভার বহন করবে ৷ যেখানে পিতা চাইছেন পুত্রকে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে, সেখানে কখনওই তা থেকে বঞ্চিত করা যায় না ৷ নাবালক পুত্রের শিক্ষার কথা ভেবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অহংয়ের লড়াই বন্ধ হওয়া প্রয়োজন ৷”
নাবালক পুত্রকে কোনও ভালো সরকারি স্কুলে ভর্তি করানো যায় কি না, সে বিষয়ে জানতে এদিন বিচারপতি রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এক আইনজীবীকে এজলাসে ডেকে পাঠান ৷ সমস্ত খোঁজখবর নেওয়ার পর দু’পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতেই বিচারপতি নির্দেশ দেন, অবিলম্বে ওই নাবালক পুত্রকে বাংলা মাধ্যম থেকে মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হবে ৷ এক্ষেত্রে দু’টি বিদ্যালয়কেই ছাত্রের ভর্তির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করতে হবে ৷
বাবা সোমনাথ সরকার ছেলের স্কুলে ভর্তির সমস্ত আর্থিক দায়ভার বহন করবেন ৷ মা কুহুমিতাকেও সব রকমের সহযোগিতা করতে হবে ৷ নাবালক পুত্রের বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার জন্য সম্পূর্ণ আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করতে হবে ৷ আদালতের এই নির্দেশ সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কি না, তা নজরদারি করবেন বহরমপুর আদালতের অতিরিক্ত বিচারক ৷ আদালতের এই নির্দেশে কোথাও গাফিলতি হলে উভয়পক্ষই নিম্ন আদালতের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবে ৷
আরও পড়ুন:- সুবিচার না পেলে আমি তৃণমূল ছেড়ে দেব, হুঁশিয়ারি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরির