আগামী বুধবার, ৯ই জুলাই ২০২৫, পশ্চিমবঙ্গ এক রাজ্যব্যাপী ধর্মঘটের সাক্ষী হতে চলেছে। রাজ্যের স্থায়ী ও অস্থায়ী সমস্ত সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন দাবিদাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে রাজনীতি নিরপেক্ষ সংগঠন ‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ’। এই ধর্মঘটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মহার্ঘ্য ভাতা (DA), স্বচ্ছ নিয়োগ এবং এসএসসি (SSC) ২০১৬ প্রার্থীদের চাকরি সমস্যার মতো রাজ্যের জ্বলন্ত ইস্যুগুলি। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটি শুধুমাত্র কোনো সর্বভারতীয় শ্রমিক ধর্মঘটের অংশ নয়, বরং সম্পূর্ণরূপে রাজ্যের সরকারি কোষাগার থেকে বেতনভুক্ত কর্মীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন।
আরও পড়ুন : যে কোনও মুহূর্তে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে পারে? কেন এমন আশঙ্কা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর ? জানুন
এই ধর্মঘটকে সফল করতে এবং অংশগ্রহণকারীদের মনোবল জোগাতে মঞ্চের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তথ্য ও আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। আসুন, এই ধর্মঘটের পেছনের কারণ, মূল দাবি এবং আইনি প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
ধর্মঘটের মূল দাবিগুলি কী কী?
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ মূলত ছয়টি প্রধান দাবিকে সামনে রেখে এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। দাবিগুলি রাজ্যের কর্মচারী এবং চাকরিপ্রার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা: মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ২৫ শতাংশ বকেয়া মহার্ঘ্য ভাতা অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে। এর পাশাপাশি বর্তমান রোপা (ROPA) অনুযায়ী সমস্ত বকেয়াও প্রদান করতে হবে।
- SSC-2016 OMR প্রকাশ: ২০১৬ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল পরীক্ষার্থীর OMR শিট প্রকাশ করতে হবে এবং যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একটি নির্ভুল তালিকা জনসমক্ষে আনতে হবে।
- স্বচ্ছ ও স্থায়ী নিয়োগ: সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পড়ে থাকা শূন্য পদগুলিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে অবিলম্বে স্থায়ী কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
- অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ীকরণ: রাজ্যের সমস্ত অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী পদে নিয়োগ করতে হবে এবং ‘সমকাজে সমবেতন’-এর নীতি কার্যকর করতে হবে।
- প্রতিহিংসামূলক বদলি বন্ধ: কর্মচারীদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে যে প্রতিহিংসামূলক বদলি করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে।
- নারী সুরক্ষা: সমস্ত সরকারি দপ্তরে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ধর্মঘটের আইনি দিক ও মঞ্চের আশ্বাস
অতীতে ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করলে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ‘ব্রেক-ইন-সার্ভিস’-এর ভয় দেখানো হতো, যা কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করত। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এই বিষয়টি নিয়ে আইনি লড়াই চালিয়েছে। মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে:
- ‘ব্রেক-ইন-সার্ভিস’-এর ভয় ভিত্তিহীন: ১০ই মার্চ, ২০২৩-এর সফল ধর্মঘটের পর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সরকারের সাথে বৈঠকে ‘Dies-non’ এবং ‘Break-in-service’-এর পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তৎকালীন অর্থসচিব কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
- চলমান মামলা: এই বেআইনি নোটিফিকেশনের বিরুদ্ধে মঞ্চের পক্ষ থেকে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে (SAT) মামলা করা হয়েছে, যা এখনও বিচারাধীন। এরপর থেকে সরকার তার নোটিশে ‘ব্রেক-ইন-সার্ভিস’ শব্দটি ব্যবহার করা বন্ধ করেছে।
- সর্বোচ্চ শাস্তি: বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করলে দপ্তর খুব বেশি হলে একদিনের বেতন কাটতে পারে।
- আইনি সহায়তা: ধর্মঘট করতে গিয়ে কোনো কর্মচারী যদি প্রশাসনিক ব্যবস্থার সম্মুখীন হন, তাহলে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ তার পাশে থাকবে। এই উদ্দেশ্যে একটি বিশেষ হেল্পডেস্কও খোলা হবে এবং তার ফোন নম্বর শীঘ্রই জানিয়ে দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতে, নিজেদের অধিকার বুঝে নিতে এবং দাবি আদায়ের আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে রাজ্যের সমস্ত সরকারি কর্মচারীকে সক্রিয়ভাবে ধর্মঘটে অংশগ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ।