Bangla News Dunia , দীনেশ :- তিনি কখনও বক্তা। আবার তিনি কখনও গায়িকা। কিন্তু তাঁর নায়িকা হওয়ার স্বপ্নে আপাতত জল ঢেলে দিয়েছে তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস। আরজি করের ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি আগমনী মুক্তি পাওয়ার আগে, তার উপর বিসর্জনের বাদ্যি বাজিয়ে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দল বিরোধী কাজের অভিযোগ তুলে শুক্রবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে রাজন্যা হালদারকে। রাতে এই খবর চাউর হতেই নানা গুঞ্জন এখন রাজ্য রাজনীতিতে। কে এই রাজন্যা হালদার, যাঁকে ঘিরে এই আলোচনা ?
গত বছরের ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ। ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে লোকারণ্য। তৃণমূলের শহীদ মঞ্চে মাইক হাতে পাওয়া গিয়েছিল এক নতুন মুখকে। রাজন্যা হালদার। স্বল্প সময়ের তাঁর বক্তৃতা, মন কেড়েছিল তৃণমূল নেত্রীর। রাজনৈতিক মহল দাবি করে গত বছরের শহীদ মঞ্চে রাজন্যার বক্তৃতা ছিল বাংলায় লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের সবচেয়ে বড় চমক। যদিও এই মঞ্চে উত্থানের অনেক আগে থেকেই তৃণমূলের ছাত্র রাজনীতির অলিন্দে প্রেসিডেন্সির প্রাক্তনীর নাম শোনা যাচ্ছিল। বিশেষ করে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদের সময় প্রথমবার এই যুবনেত্রীকে দেখা গিয়েছিল।
আরো পড়ুন :- ‘গদ্দার হঠাও, ভাঙড় বাঁচাও’, সায়নী ঘোষের নিশানায় বাহুবলী তৃণমুল নেতা !
প্রশ্ন হল, কার হাত ধরে তৃণমূলের ছাত্র রাজনীতিতে উত্থান হল রাজন্যা হালদারের ? রাজনৈতিক মহল দাবি করে, বঙ্গের ছাত্র রাজনীতিতে রাজন্যার রাজনৈতিক গুরুর নাম তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য। যা বরাবর প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছেন বর্তমানে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতিও। ঘনিষ্ঠ মহলে তৃণাঙ্কুর জানিয়েছেন, তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার পর ছাত্র সংগঠনকে মজবুত করতে ভাল ছেলে-মেয়ের সন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। খুঁজে আনতে বলেছিলেন শিক্ষিত, রাজনীতি বোঝেন এবং ভবিষ্যতে যাঁরা দলের কাছে অপরিহার্য হয়ে উঠতে পারেন।
আরো পড়ুন :- এবার পাক ক্রিকেটারদের জন্য ফতোয়া জারি করলো পাক বোর্ড !
সেই সন্ধানের ফসল কী রাজন্যা হালদার ? রাজনৈতিক মহল দাবি করে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে ছাত্র সংগঠনের অন্দরে নিজের জমি শক্ত করেছেন রাজন্যা। গত বছর ২১ জুলাইয়ের মঞ্চের পর তাঁকে দেখা গিয়েছিল এই বছর ১০ মার্চ জনগর্জনের মঞ্চেও। তবে বক্তা হিসাবে নন, গায়িকা হিসাবে। নির্বাচনের মুখ না করা হলেও, প্রচারের মুখ হিসাবে রাজন্যাকে ব্যবহার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
বাংলায় শেষ যে চারটি বিধানসভায় উপনির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে একটি ছিল বাগদা। যে আসন থেকে জিতে বঙ্গ বিধানসভার সর্বকনিষ্ট বিধায়ক হয়েছেন মধুপর্ণা ঠাকুর। সেই মধুপর্ণার হয়ে সারাক্ষণ প্রচারে দেখা গিয়েছে রাজন্যাকে। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে মধুপর্ণার পাশে থেকে বাগদায় তৃণমূলের হয়ে প্রচার করেছেন রাজন্যা।
আরো পড়ুন :- বাংলাদেশকে ঋণ পরিশোধ করতে চাপ দিচ্ছে চিন, বিশবাঁও জলে বাংলাদেশের একাধিক প্রকল্প
এত কিছু পরেও তাল কাটাল কোথায় ? কেন আরজি করের মতো এক সংবেদনশীল ঘটনার উপর এত দ্রুত সিনেমা করার ভাবনা ভেবে ফেললেন রাজন্যা হালদার এবং প্রান্তিক চক্রবর্তী ? কেন তৃণমূলের অনুমোদন ছাড়া, সিনেমার পোস্টার ছাপিয়ে তার মুক্তির দিন ঘোষণা করে দেওয়া হল ? রাজনৈতিক মহলের মতে, এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের অন্দরে। তাহলে কী সভাপতির কাছের হওয়ার জন্য পার্টি লাইনের বাইরে ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছিলেন রাজন্যা হালদার ? নাকি তৃণমূলের পরপর দুটি বড় মঞ্চে জায়গা করে নেওয়ার পর, পার্টি লাইনের বাইরে গিয়ে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন ?
তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং রাজন্যা হালদার দু তরফ থেকেই এই প্রশ্নের উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে রাজনৈতিক মহল। অপেক্ষা করে রয়েছে দেবীপক্ষে আরজি করের প্রেক্ষাপটে তৈরি আগমনীর ভবিষ্যৎ নিয়েও। কারণ, মুক্তির আগে এই ছবির উপর বিষাদের বাজনা বাজিয়ে দিয়েছে স্বয়ং তৃণমূল কংগ্রেস-ই।
#End