Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- পুঁজি বলতে ছিল ভুটান রাজ পরিবারের এক আত্মীয়ের দেওয়া ভেন্টিলেটরের নকশা তৈরির সূত্রে আয় করা দশ হাজার টাকা। আজ সেই ব্যবসা মহীরুহের চেহারা নিয়েছে। বার্ষিক রিটার্ন দেড় কোটি টাকা। ৩৫ জন কর্মী দিনরাত কাজ করেন। একটি কারখানা থেকে বেড়ে দু’টি হয়েছে। তাঁর প্রোডাক্টের চাহিদা বিহার, নেপাল থেকে অসম পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ির শ্যামল সরকার টাইলস–এর ব্যবসায় নেমে উদ্যোগপতিদের কাছে যেন উদাহরণ হয়ে উঠেছেন।
পিতৃহীন ছেলেরা যেমন হয়, শ্যামল সরকারের জীবন তেমনই ছিল। ফুটবল খেলতেন খুব ভালো। খেলার নেশায় এ পাড়া থেকে ওই পাড়ায় ঘুরে বেড়াতেন। বন্ধুরা খবর দিলেই সাইকেলে চেপে সোজা পৌঁছে যেতেন মাঠে। সেই খেলাই চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে বুকের পাঁজরে বেদম চোট পেয়ে। কলকাতায় ছুটতে হয় চিকিৎসার জন্য। চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দেন, আর নয় ফুটবল। তখনই ভুটানের রাজ পরিবারের ওই আত্মীয়ের সঙ্গে পরিচয়। ভুটানে তখন বৌদ্ধ মনাস্ট্রির সংস্কার চলছে। মনাস্ট্রির ভিতরে যাতে সূর্যের আলো পৌঁছতে পারে সে জন্য নকশাদার ভেন্টিলেটর দরকার। শ্যামল কলকাতা থেকে সেই নকশা তৈরি করে আনতেন। ১৯৯১ সালে নিজেই দশ হাজার টাকার পুঁজি নিয়ে ব্যবসায় নামলেন। তার পরে একদিন বুঝতে পারলেন সিমেন্ট দিয়ে তৈরি ভেন্টিলেটরের ব্যবসা বেশিদিন চলবে না।
১৯৯৮ সালে নামলেন রঙিন কাচ, পাথর ও অন্য উপকরণ দিয়ে মোজাইক তৈরির ব্যবসায়। সেটাও ছেড়ে দিয়ে চলে এলেন টাইলস–এর ব্যবসায়। সবচেয়ে বেশি চাহিদা পেভার ব্লকের। পিচের রাস্তার পাশে, ফাঁকা জায়গায় প্যাচ পেচে কাদা জমে যায়। পেভার ব্লকে সেই সমস্যা নেই। তবে তার জন্য চাই রাবার ব্লক ডাইস। একটি ডাইসে সারা দিনে একটিই ব্লক তৈরি হয়। তার পরে কোটিং। কোটিং মানে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যালের প্রলেপ যাতে জলে ভিজে সহজে নষ্ট না-হয়। ধীরে ধীরে সেই ব্যবসা বাড়তে শুরু করল। সম্প্রতি কালিম্পংয়ে রাস্তার পাশে দশ কিলোমিটার দীর্ঘ ফুটপাথ তৈরি হচ্ছে তাঁরই সরবরাহ করা পেভার ব্লক দিয়ে। অসম, নেপালেও টাইলস যাচ্ছে। ভুটান তো আছেই। এক সময়ে বাংলাদেশেও টাইলস সরবরাহ করা হতো শিলিগুড়ি থেকেই।
লকডাউনের সময়ে বন্ধ হয়ে যায়। আর এখন তো পরিস্থিতিই বদলে গিয়েছে। শ্যামল বলেন, ‘ব্যবসা করতে গেলে হাতে অনেক টাকা লাগবে, এটা ঠিক নয়। ইচ্ছেটাই আসল। আর সরকারি সহায়তা দরকার। আমায় যেমন ওয়েস্ট বেঙ্গল ফিনান্স কর্পোরেশন প্রচুর সাহায্য করেছে। এখন চাইলেই ব্যাঙ্ক থেকে লোন পাই। নতুনদের কেবল সাহস করে নামতে হবে। সততার সঙ্গে ব্যবসা করতে হবে। কেউ পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।’ উত্তরবঙ্গের ফেডারেশন অফ চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ় (ফোসিন)–এর সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘শিলিগুড়িতে উদ্যোগীর অভাব নেই। তবে সততা এবং উদ্যমের জন্য শ্যামল সরকার অনেকের কাছে উদাহরণ হতে পারেন।’
আরও পড়ুন:- BHEL সংস্থায় নতুন করে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! আবেদন পদ্ধতি সহ বিস্তারিত দেখেনিন
আরও পড়ুন:- আর ভয় নেই ক্যানসারে ! রইল বিশিষ্ট চিকিৎসকের মতামত