Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- ভারতীয়দের কাছে ‘ডোলো ৬৫০’ যেন এক টফি! আমেরিকান গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট ডাঃ পালানিপ্পান মানিকামের এই টুইটেই যেন উঠে এসেছে আজকের ভয়ঙ্কর বাস্তবতা। জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা হলেই দেশের অসংখ্য মানুষ প্যারাসিটামল মুখে তুলে নিচ্ছেন—প্রায়শই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই। অথচ এই ‘জ্বরের বড়ি’ অতিরিক্ত খাওয়া যে লিভার এবং কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গকে ভয়ানকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, সে বিষয়ে অধিকাংশ মানুষ সম্পূর্ণ অজ্ঞ।
কী এই প্যারাসিটামল?
প্যারাসিটামল, যা আমেরিকায় ‘অ্যাসিটামিনোফেন’ নামে পরিচিত, এক ধরনের ব্যথানাশক ও অ্যান্টিপাইরেটিক ওষুধ। এটি জ্বর ও হালকা থেকে মাঝারি ব্যথা উপশমে কার্যকর। ভারতে এটি ডোলো ৬৫০, প্যানাডল, ক্যালপোল ইত্যাদি নামে বিক্রি হয়। কোভিড-১৯ মহামারির সময় এই ওষুধ হয়ে ওঠে ঘরে ঘরে একটি অপরিহার্য নাম। ২০২০-২২ সালের মধ্যে প্রায় ১৫ কোটির বেশি ডোলো ট্যাবলেট বিক্রি হয়েছে গোটা দেশে।
কিন্তু কেন বিপজ্জনক?
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত মাত্রায় বা নিয়মিতভাবে প্যারাসিটামল সেবন লিভার ও কিডনিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। ভারতীয় লিভার বিশেষজ্ঞ ডাঃ শিবকুমার সারিন বলেন, “বিদেশে লিভার ফেলিওরের অন্যতম প্রধান কারণ এই ওষুধের অপব্যবহার।” লিভারের গ্লুটাথিয়ন নামক একটি উপাদান শরীরকে রক্ষা করে বটে, কিন্তু অতিরিক্ত ওষুধ এবং মদ্যপানের অভ্যাস সেই সুরক্ষা দেয়ালকেও দুর্বল করে দেয়।
কারা এই ওষুধ থেকে সাবধান থাকবেন?
যাঁদের প্যারাসিটামল বা তাতে থাকা উপাদানের প্রতি অ্যালার্জি রয়েছে
১০ বছরের কম বয়সি শিশু (বিশেষ সিরাপ ছাড়া)
যাঁরা নিয়মিত অ্যালকোহল পান করেন বা যাঁদের ওজন অত্যধিক বেশি
কতটা খাওয়া নিরাপদ?
প্রতি ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা অন্তর একটি করে ডোজ নেওয়া যেতে পারে, তবে দিনে ৪টির বেশি ডোজ একেবারেই নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া তিন দিনের বেশি কখনও প্যারাসিটামল খাওয়া উচিত নয়।
অতিরিক্ত মাত্রার লক্ষণ কী?
বমি, বমি বমি ভাব, পেটব্যথা
ক্লান্তি, বিভ্রান্তি, মাথা ঘোরা
ত্বকের র্যাশ, শ্বাসকষ্ট, জন্ডিস
খিদে কমে যাওয়া ও হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া
বিকল্প উপায় কী?
সামান্য জ্বর বা ব্যথা হলে প্রথমে ঘরোয়া যত্ন ও পর্যাপ্ত বিশ্রামের দিকে নজর দেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ গ্রহণ করা একেবারেই ঠিক নয়।
‘জ্বরের বড়ি’ নামেই পরিচিত প্যারাসিটামল অনেকের কাছে নিরাপদ মনে হলেও, এর ভুল বা অতিরিক্ত ব্যবহার শরীরে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ওষুধই তখনই কার্যকর, যখন তা সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক কারণে ব্যবহার করা হয়। তাই গুজবে কান না দিয়ে সচেতন হোন, প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিজের শরীরকে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ রাখুন।
আরও পড়ুন:-প্রতিমাসে পাবেন ৯৩৭৫ টাকা! LIC-এর নতুন স্কিম দিচ্ছে দারুণ সুযোগ । বিস্তারিত জেনে নিন