Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- অবাক কাণ্ড ৷ আচমকা দপ করে জ্বলে উঠছে আগুন ৷ পুড়ে যাচ্ছে ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে বিছানাও ৷ আতঙ্কে ঘর ছেড়েছে চারটি পরিবার ৷ আতঙ্ক ছড়িয়েছে অন্যান্য গ্রামবাসীদের মধ্যেও ৷ কী কারণে এভাবে আগুন জ্বলে উঠছে বুঝতে পারছেন না কেউই ৷
এই নিয়ে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের দৌলতপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শীতলপুর গ্রামে শুরু হয়েছে ভূতের গুজব ৷ ভয়ে রাত জাগছেন গ্রামবাসীরা ৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেও আগুন লাগার কারণ খুঁজে পায়নি প্রশাসন ৷ যদিও খবর পেয়ে দ্রুত ওই গ্রামে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা শাখার প্রতিনিধিরা ৷
হরিশ্চন্দ্রপুরের গ্রামে জ্বলছে আগুন
গ্রামবাসীদের দাবি, টানা চারদিন ধরে এই ঘটনা ঘটে চলেছে ৷ কখনও কারও বাড়ির চালা, কখনও বা ঘরের ভিতর আচমকা দপ করে আগুন জ্বলে উঠছে ৷ খেয়াল করার আগেই পুড়ে যাচ্ছে ঘরের সামগ্রী ৷ প্রথমে সবাই ভেবেছিলেন, এসব হয়তো দুষ্কৃতীদের কাণ্ড ৷ কিন্তু তেমন কাউকে কেউ খুঁজে পাননি ৷ বরং গ্রামবাসীদের চোখের সামনেই এমন অদ্ভূতুড়ে ঘটনা ঘটতে থাকায় আতঙ্ক সবাইকে গ্রাস করেছে ৷ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জিয়ারুল ইসলাম, সাদিকুল ইসলাম, মহম্মদ নুহু ও সইবুর রহমানের বাড়ি ৷ আতঙ্কে চারটি পরিবারই এখন ঘরছাড়া ৷
সইবুর রহমান বলছেন, “হঠাৎ করেই আগুন লেগে যাচ্ছে ৷ কখনও বিছানায়, কখনও বন্ধ বাক্সের ভিতর, কখনও বা শো-কেসের ভিতর ৷ খড়ের পালাতেও আগুন লেগে যাচ্ছে ৷ তবে জল ঢাললে আগুন নিভেও যাচ্ছে ৷ শনিবার থেকে এই ঘটনা শুরু হয়েছে ৷ প্রথমদিন সাত-আটবার এভাবে আগুন লেগেছে ৷ গতকাল লেগেছে আটবার ৷ আজ এখনও পর্যন্ত দু’বার এমন ঘটনা ঘটেছে ৷ চারটি পরিবারেই এই ঘটনা ঘটছে ৷ খুব ভয়ে আছি ৷ বাড়িঘর ছেড়ে দিয়েছি ৷ ঘরের সবকিছু পুড়ে গিয়েছে ৷ এমনকী টাকা-পয়সাও ৷”
পানফুর খাতুনের বক্তব্য, “শনিবার আমি একজনের বাড়ি গিয়েছিলাম ৷ ফেরার সময় দূর থেকে দেখি, বাড়ির খড়ের পালায় আগুন ৷ আমি চিৎকার শুরু করি ৷ গ্রামবাসীরা এসে আগুন নিভিয়ে দেয় ৷ সবাই এর জন্য আমার ছেলেকে দোষারোপ করতে শুরু করে ৷ আমার ছেলে একটু দুষ্টু ৷ তাই সবাই ওকেই সন্দেহ করেছিল ৷ আমিও ছেলেকে মারধর করেছিলাম ৷ কিন্তু ও বলতে থাকে, ও আগুন লাগায়নি ৷ আমি গোয়ালে বসে কাঁদছিলাম ৷ গরিব মানুষ আমরা ৷ খড় পুড়ে যাওয়ায় গরুগুলোকে কীভাবে খাওয়াব, সেই চিন্তায় ছিলাম ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘খানিক পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে দেখি, অন্য একটি বাড়ির খড়ের পালায় আগুন ৷ লোকজন সেই আগুনও নেভায় ৷ বাড়িতে ফিরেই দেখি, হেঁসেলের পিছনে আগুন ৷ সেই আগুন নিভিয়ে আসতেই আমার চাচাশ্বশুর জিজ্ঞেস করেন, আমি ঘরের ভিতর রান্না করছি কি না ! তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির উপর দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে ৷’ আমার স্বামী দৌড়ে ঘরে গিয়ে দেখে, ঘরের ভিতর দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে ৷’’
পানফুরের আরও বক্তব্য, ‘‘তখন সবাই বুঝতে পারে, আমার ছেলে আগুন লাগায়নি ৷ আমার ননদের বাড়িতেও এভাবে আগুন লাগছে ৷ আমরা ভয়ে ঘর ছেড়ে দিয়েছি ৷ যদি ঘরে থাকার সময় শরীরে আগুন লেগে যায় ? তবে রাতে আগুন লাগে না ৷ সকাল সাতটা থেকে মগরিবের নমাজ পর্যন্ত এই ঘটনা ঘটছে ৷”
আগুনে পুড়ে যাওয়ার চিহ্ন দেখাচ্ছেন গ্রামবাসীরা
ঘটনাটি জানতে পেরে এদিন শীতলপুর গ্রামে যান রাজ্য যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান চৌধুরি ৷ তিনি বলেন, “অলৌকিক ঘটনা ৷ এর সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও মিল নেই ৷ খবর পেয়েই আমি ছুটে এসেছি ৷ ভুক্তভোগী পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলেছি ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘শনিবার থেকে এই ঘটনা শুরু হয়েছে ৷ প্রথমে একটি বাড়ির খড়ের পালায় আগুন লাগে ৷ তা নেভানো হয় ৷ পরবর্তীতে অন্য জায়গায় আগুন ৷ সবচেয়ে বড় বিষয়, বন্ধ বাক্সের ভিতর আগুন লাগছে ৷ বন্ধ শো-কেসের ভিতরেও আগুন লেগে যাচ্ছে ৷ চারটি বাড়িতে এই ঘটনা ঘটছে ৷ এই খবর চাউর হতেই আশেপাশের গ্রামের লোকজন এই ঘটনা দেখতে ছুটে আসছেন ৷’’
জিয়াউর রহমান চৌধুরি আরও বলেন, ‘‘আমি সবকিছু দেখে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা শাখার সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ তাঁরা দ্রুত গ্রাম পরিদর্শনে আসবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন ৷ আমি প্রশাসনিক কর্তাদের কাছেও বিষয়টি খতিয়ে দেখার আবেদন জানাচ্ছি ৷ এই চারটি পরিবারের সবকিছুই পুড়ে গিয়েছে ৷ তারা এখন ঘরছাড়া ৷ অন্যদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন ৷ এই পরিবারগুলিকে যাতে কিছু সহায়তা করা হয় তার জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি ৷”
হরিশ্চন্দ্রপুর 2 নম্বর ব্লকের বিডিও তাপস পাল বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে গতকাল এক আধিকারিককে ওই গ্রামে পাঠিয়েছিলাম ৷ তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমাকে রিপোর্ট দিয়েছেন ৷ সেখানে কোনও গ্যাস কিংবা দাহ্য পদার্থের সন্ধান মেলেনি ৷ কোনও গন্ধও পাওয়া যায়নি ৷ আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি ৷ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হচ্ছে ৷”
এই মুহূর্তে কলকাতায় রয়েছেন এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী তজমুল হোসেন ৷ তিনি বলেন, “আজই এই খবর পেয়েছি ৷ সঙ্গে সঙ্গে আমার প্রতিনিধিকে ওই গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছি ৷ তিনি সরেজমিনে সবকিছু খতিয়ে দেখে আমাকে রিপোর্ট দেবেন ৷ তারপর যা করণীয় করা হবে ৷”
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের মালদা জেলার সম্পাদক সুনীল দাস বলেন, “সাধারণত মিথেন বা লিথিয়াম গ্যাসের উপস্থিতিতে এমন ঘটনা ঘটতে পারে ৷ যেখানে ঘটনাটি ঘটছে, সেখানে এই দুই গ্যাসের কোনও উৎস রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে ৷ আর যদি কোনও উৎস না থাকে, তবে কেউ বা কারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই কাজ করছে ৷ আমরা দ্রুত ওই গ্রামে যাব ৷ তবে যতদূর শুনেছি, যে চারটি বাড়িতে এই ঘটনা ঘটেছে, তারা আত্মীয় ৷ সেক্ষেত্রে এই ঘটনার পিছনে কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই আমাদের অনুমান ৷ যদিও সরেজমিনে সব খতুয়ে না দেখে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না ৷”
আরও পড়ুন:- আপনার শিশুও কি পট্যাটো চিপসের ভক্ত? অবশ্য়ই জেনে রাখুন এই জিনিস
আরও পড়ুন:- হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে পাতে রাখুন এই ফলগুলি