কলকাতায় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক, জানুন কি নিয়ে চুক্তি হবে

By Bangla News Dunia Desk Bappaditya

Published on:

Bangla News Dunia, বাপ্পাদিত্য:- গঙ্গা-পদ্মা জলবণ্টন নিয়ে ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি পুনর্নবীকরণ ৷ আগামী 6 এবং 7 কলকাতায় অনুষ্ঠিত হতে চলেছে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক। আনুষ্ঠানিকভাবে এই বৈঠকে তিন পক্ষ অর্থাৎ কেন্দ্রীয় সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি থাকার কথা।

সোমবার সকালে বাংলাদেশ থেকে 11 সদস্যের প্রতিনিধি দল কলকাতায় আসে ৷ বিকেলে ট্রেনে করে ফারাক্কায় গিয়ে পৌঁছয় ৷ মঙ্গলবার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ফারাক্কা ব্যারেজ পরিদর্শন করেন ৷ জলবন্টন চুক্তি অনুসারে এই মুহূর্তে সেখানে কতটা জল রয়েছে, চুক্তি মত বাংলাদেশ জল পাচ্ছে কি না, তা পর্যালোচনা করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা ৷ পরিদর্শনে ছিলেন ভারত বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের সদস্য আবুল হাসান এবং ফারাক্কা ব্যারেজ প্রজেক্টের জেনারেল ম্যানেজার আরডি দেশপান্ডে। বুধবার সকাল সাড়ে 9টা নাগাদ বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে ৷

ভারত-বাংলাদেশ জলবন্টন চুক্তি শেষ হচ্ছে আগামী বছরে। ঠিক তার আগেই চুক্তি পুনর্নবীকরণ নিয়ে আলোচনা এবং জলবণ্টন নিয়ে অভাব-অভিযোগ এবং সার্বিক বিষয় নিয়ে বৈঠক করতে ভারতে এসেছে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল। মহম্মদ আবুল হাসান বলেন, “জানুয়ারি মাসে জল নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। দু’দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই চুক্তি পুনর্নবীকরণ হবে বলেই মনে করছি।”

গঙ্গা-পদ্মা জলবন্টন চুক্তি বা ফরাক্কা চুক্তি হয়েছিল প্রয়াত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সময়ে ৷ 1996 সালের 12 ডিসেম্বর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া ও তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে গঙ্গা-পদ্মা জলবন্টন চুক্তি হয়েছিল ৷ 30 বছরের এই চুক্তি 2026 সালের 12 ডিসেম্বর শেষ হচ্ছে ৷ এই চুক্তি পুনর্নবীকরণের জন্য দুই দেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে।

ইতিমধ্যেই এই নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চুক্তির পুনর্নবীকরণ প্রসঙ্গে আগেই আপত্তি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি। ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেছিলেন,রাজ্য সরকারকে এড়িয়েই এই নিয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে ৷ আর সেই জায়গা থেকেই এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে চলেছে। শেষ পর্যন্ত এই বৈঠকে রাজ্যের কোনও প্রতিনিধি যোগ দেন কি না, সেদিকে নজর থাকবে ৷ যোগ দিলেও রাজ্যের তরফ থেকে ফারাক্কা চুক্তির পুনর্নবীকরণ সম্পর্কে কি বলা হয়, তাও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিকমহল।

আরও পড়ুন:- সুখবর ! সরাসরি ইন্টারভিউর মাধ্যমে স্টেট ব্যাংকে প্রচুর কর্মী নিয়োগ চলছে! শীঘ্রই আবেদন করুন

বৃহস্পতি ও শুক্রবার কলকাতায় এক বেসরকারি হোটলে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যোগ দেবে বাংলাদেশের এই প্রতিনিধি দল ৷ রাজ্য সরকারের এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, যৌথ নদী কমিশনের সদস্যরা, যাঁদের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধিরা থাকেন ৷ প্রতিবছর অন্তত একবার বৈঠক করেন, যাতে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির জলবণ্টন সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করা যায়। কিন্তু এবারের বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই বৈঠকের উপর নির্ভর করবে ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তির পুনর্নবীকরণের বিষয়টি।

এই বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ কারণ গঙ্গা-পদ্মার জলবন্টন ছাড়াও এই বৈঠকে তিস্তা-সহ 54টি আন্তঃসীমান্ত নদীর বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা । দীর্ঘদিন ধরে ভারত-বাংলাদেশের তিস্তার জল চুক্তি নিয়ে সওয়াল করছে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গ বারবারই এই চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে ৷ রাজ্যের তরফ থেকে বারংবার বলা হচ্ছে, রাজ্যের স্বার্থ উপেক্ষা করে এ ধরনের চুক্তি মেনে নেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরাসরি তিস্তা জল চুক্তির বিরোধিতা করে একাধিকবার সরব হয়েছেন। সেই জায়গা থেকে এই ত্রি-পাক্ষিক বৈঠকে রাজ্যকে উপেক্ষা করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কি না, সেটাও দেখার।

ইতিমধ্যেই তিস্তা জলবন্টন নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, রাজ্যকে ভাতে মারার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷ এক্ষেত্রে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, বাংলাদেশকে আমার জল দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু, থাকলে তো দেব। আমি বন্ধুত্ব করতে চাই। কিন্তু, বাংলাকে বিক্রি করে দেওয়ার স্বার্থে নয়। আর সেই জায়গা থেকেই আগামী 6 এবং 7 তারিখ ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে ৷

যদিও ভারত বাংলাদেশ গঙ্গা-পদ্মা জলবন্টন চুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে আসা প্রতিনিধি দলের এক সদস্য জানিয়েছেন, যাবতীয় কার্যক্রম জলবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে। চুক্তির মেয়াদ বাড়ার বিষয়টি বিবেচনা করবে বিশেষ কমিটি। যদিও এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার বিষয়ে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কোনও বক্তব্য জানানো হয়নি।

প্রসঙ্গত, 1972 সালে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়েছিল। মূলত দু’দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হওয়া 54টি নদীর বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্যই এই কমিশন গঠন করা হয়।

আরও পড়ুন:- একটাই বাড়িতে বাস করেন গোটা শহরের মানুষ, জানুন কেন এমন সিস্টেম

আরও পড়ুন:- যাদবপুরের পড়ুয়াদের ‘কুকুরের’ সঙ্গে তুলনা কল্যাণের, জানুন বিস্তারিত

Bangla News Dunia Desk Bappaditya

মন্তব্য করুন